চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে ধর্ষক মজনু

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার কুর্মিটোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। ওই ছাত্রীর বাবার করা মামলায় পুলিশের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার মজনু আদালতে হাজির করে ১০ দিনের হেফাজতের আবেদন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী সাত দিনের হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে গ্রেপ্তার মজনু পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। জীবনে অসংখ্য মেয়েকে শয্যাসঙ্গী করার তথ্য, কীভাবে এসব অপরাধ করেও বারবার বেঁচে যায় এবং তার সিরিয়াল ধর্ষক হওয়ার পেছনের গল্প অকপটে বলে যাচ্ছেন মজনু। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে মজনু জানায়, কয়েক বছর ধরেই নানাভাবে পথশিশু, ভবঘুরে নারীদের ফুসলিয়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে আসছিল সে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে এই প্রথম নিপীড়ন করল সে।
মাস দেড়েক আগে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আরেক ভবঘুরে নারী জেসমিনের সঙ্গে দেখা হয় মজনুর। সেও বিভিন্ন রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় তার। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে মজনু। দু’জন মাস খানেকের বেশি রাজধানীর শেওড়া, বনানী ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে কাটিয়ে দেয়। তবে কয়েক দিন আগে জেসমিন এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। সেই শোকে কাতর হয়ে পড়েন মজনু।
র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবির কাছে তুলে দেয়া হয় মজনুকে। এরপর বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে।
মজনু ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়ে ডিবিকে জানায়, রোববার কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে টার্গেট করার সময় তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার। সে মনে করেছিল, বিকৃত স্বভাবে প্রায় নিয়মিত যেভাবে ‘শিকার’ ধরে থাকে রোববারের ঘটনাও তাই ছিল। এমনকি টার্গেট করা ওই তরুণীকে নিয়ে রেললাইনে ‘লালন-পালন’ করে সঙ্গে রাখবে এমন কথাও ভাবতে থাকে সে।
রাত গভীর হলে ওই তরুণীকে রাস্তার ওপারে রেললাইনে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল তার। এজন্য সে দীর্ঘ সময় তার পাশে বসে থাকে। তবে ওই ছাত্রী যখন বারবার বাধা দিচ্ছিল, তখন ঘাবড়ে যায় মজনু। একপর্যায়ে তার ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে সে উপলব্ধি করে, ভুল টার্গেটে হাত দিয়েছে সে। পরিচয় নিশ্চিত হতে বারবার তাই মেয়েটির নাম-পরিচয় ও কোথায় পড়াশোনা করছে তা জানতে চেয়েছিল মজনু। সে ভুল করে ‘বড় কোনো মানুষ’কে টার্গেট করেছে, এটা বুঝতে পারে অবশেষে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা বাস স্টপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা ঘটনার দিন রাতেই ক্যান্টনম্যান্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যাচাই-বাছাই শেষে পরদিন অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়। মামলাটি প্রথমে ক্যান্টনম্যান্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তের দায়িত্ব পান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ক্যান্টনম্যান্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *