নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের করফারেন্স লাউঞ্জ (জহুরুল হোসেন চৌধুরী হল)-এ ঢাকায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য ডা. এস এ মালেকের সভাপতিত্বে ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান লাল্টুর সঞ্চালনায় “বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত মজবুত করে” Ñ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মাহাবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জে এম সফিউল আলম ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহম্মেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোস্তফা সরোয়ার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. লিয়াকত হোসেন মোড়ল প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী মহান নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম কিনা সন্দেহ ছিল। তাঁর নেতৃত্ব, যোগ্যতা, দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা এবং মেধা তাঁকে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সার্থক ভাবে রূপদান করেছে। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সংগ্রামের ফসল আজকের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি আজকের এই দিনে সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরে না আসলে আমাদের স্বাধীনতা কোনোদিনই পূর্ণতা পেত না। যেমনটি হয়েছিল রুশ বিপ্লবের নেতা জার্মানি থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে যদি না ফিরতেন। জাতির পিতার অবর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি দুর্বলই থেকে যেত। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্র কাঠামো হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক। এইজন্যই তিনি আমাদের সংবিধানে এই মূলনীতিগুলো সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির পচাত্তরের ১৫ই আগস্টের কালো রাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে জাতির আশা আকাক্সক্ষা জলাঞ্জলি দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা ভুলুণ্ঠিত হয়। জাতির জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। পথহারা বাংলাদেশ সঠিক পথ খুঁজে পায়। শেখ হাসিনার টানা তৃতীয়বারের মতো আবার সরকার পরিচালনায় দেশের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা ভেবে দেখা দরকার। আজও স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। এজন্য কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি রাষ্ট্রকে ধর্মসাপেক্ষ না করার পরামর্শ দেন।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিম-লে তিনি নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের জাতিসঙ্ঘে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক, গ্রহণযোগ্য ও দিকনির্দেশনামূলক। আজও বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। তিনি ঐ ভাষণে যেমন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের কথা বলেছিলেন, তেমনি যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অশান্তিতে লিপ্ত পৃথিবীর চির শান্তি ও চির কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে যে বক্তব্য সেদিন বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করেছিলেন সেই জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু হিসেবে ভূষিত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও মতবাদ বাস্তবায়িত হলে তাঁর এই মতবাদই হতো পৃথিবীর সেরা মতবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে অবশ্যই তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হত।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, একাত্তরে বীর বাঙালি দেশের মুক্তির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্যও লড়াই করেছে। নেতার মুক্তির জন্য এমন লড়াই বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। শত্রু দেশের কারাগারে প্রিয় নেতা বন্দী, তিনি বেঁচে আছেন কি নেই, সেটা নিয়ে প্রতিটিক্ষণ প্রতিটি বাঙালি উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিল। একাত্তরের ২৫শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া উৎকণ্ঠার অবসান ঘটেছিল আজকের দিনে। ১০ই জানুয়ারি দুপুরে স্বাধীন দেশে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। বাংলা বঙ্গবন্ধু সেদিন, সেদিনের আগে, সেদিনের পরেও বাঙালির কাছে একটি অর্থ বহন করছে।
অধ্যাপক ড. এ জে এম সফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, জনসমুদ্রে ১০ই মার্চ ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যে মাটিকে আমি ভালবাসি, যে মাটির জনগণকে আমি ভালবাসি, আমি জানতাম না যে সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি, বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।
অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক সফলতা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অতি দ্রুত অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি প্রদান করে। এটা বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারোর পক্ষেই সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত সরকার অতি দ্রুত সময়ে সৈন্য প্রত্যারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমাদের স্বাধীনতা সুসংহত ও সার্বভৌম হয়েছিল।
সভাপতির বক্তব্যে ডাক্তার এস এ মালেক বলেন, আজকের এই শুভদিনে আমাদের সকলের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- দেশের মহাসর্বনাশ ডেকে এনেছে। প্রতিবিপ্লবের ধারা থেকে দেশকে রক্ষা করা সহজ কাজ ছিল না। সে কাজটি অত্যন্ত সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাদৃশ্য রয়েছে। পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে জাতির স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা লাভ পেয়েছিল আর কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাঙালির ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, দেশ দ্রুত উন্নত দেশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট দিদার আলী, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মো. আলাউদ্দিন, সামছুদ্দিন খাজা, নুরুদ্দিন চৌধুরী, কৃষিবিদ আমীরুল ইসলাম প্রমুখ।