সুমন হোসেন, (বিশেষ প্রতিনিধি) যশোর : খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছে। (১৩ নভেম্বর) সোমবার বিকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।জনসভায় দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা জেলায় ২৪ টি বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ও ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার পিতাসহ পরিবারের সকল সদস্যদের কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সাথে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নারীর সম্ভাম হানী করা হয়েছে। তাদের কে গভীরভাবে শ্রদ্ধভরে স্মরণ করছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরোও বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রথমে খুলনার মোংলা বন্দর বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই এলাকার ৩ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে পুনরায় সেই মোংলা বন্দর চালু করে। সাধারন মানুষের মুখে খাবার ওঠে। পেট্রোল বোমা দিয়ে ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিলো, তারই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরের ২৮ তারিখে পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এবং যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে দেশের সম্পদ নষ্ট করার খেলায় মেতে উঠেছে। তারা (বিএনপি) মানুষের শরীরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারে, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গৃহ হীন মানুষদের কে খুজে তাদেরকে নতুন ঘর উপহার দেয়।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সকল কল-কারখানা বন্ধ করে দেয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিলো শতকরা ৪১ ভাগ। বর্তমানে আমরা সেই দারিদ্রতা দূর করে মাথাপিছু আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৯৬ সালে খাদ্য ঘাটতি ছিলো, বর্তমানে আমাদের ৪ কোটি ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩ কোটি ৯২ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের কে বিভিন্ন বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়।
বছরের প্রথম দিনে প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দেশের সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন বই তুলে দেয়। যা ইতিপূর্বে কোনো সরকার এ ধরনের উদ্যেগ নেয় নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে দেশের ও দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হয়। এ কারনে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে আপনাদেরকে নৌকায় ভোট দিতে হবে। খুলনাবাসীর পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় যেতে এখন সময় লাগে ২ ঘন্টা। সেটি বাসে অথবা ট্রেনে যাওয়া যেতে পারে। এখন একজন মানুষ খুলনা থেকে সকালে ঢাকায় যেয়ে বিকালে পুনরায় খুলনায় ফিরে আসতে পারে। এই উন্নয়নটি আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একজন কৃষক সার চাওয়ার অপরাধে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর আমরা বিনামূল্যে ২ কোটি ৬২ লাখ কৃষককে ভর্তুকির আওতায় এনে বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়ে খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে উৎপাদন বাড়াচ্ছি। দেশের ১০ কোটি ৬১ লাখ মানুষকে বিভিন্ন ভাতার মাধ্যমে সামাজিক ও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন শতকরা ৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের শতকরা ৫৬ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের ৬ লাখ ৮০ হাজার ফ্রিল্যান্সার কে আইসিটি প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। তারা বাইরের দেশের মার্কেটে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে। সকলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ৪টি ধাপে সার্বজনীন পেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা জনসভায় সকলের উদ্দেশ্য বলেন, বর্তমানের সুষম উন্নয়ন অব্যহত রাখতে পূর্বের ন্যয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করতে সকলকে হাত উচু করে শপথ করান। এরপর তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য হাত উচু অভিভাদন জানিয়ে বিদায় নেন।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বাবুল রানা, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারন সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, বাগেরহাট-১ আসনের এম পি শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল, শেখ জুয়েল, শেখ ফারহান নাসের তন্ময়, আব্দুস সালাম মূর্শেদী এম পি সহ প্রমুখ।
জনসভায় খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীরা নৌকা মার্কা সম্বলিত গেঞ্জি পরিহিত, হাতে প্লাকার্ড ও সহ সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মানুষের ভিড়ে সার্কিট হাউজ মাঠ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তারপরও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে একবার দেখার জন্য মানুষ খুলনা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান করেন।