আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক কুলাউড়া মুক্ত দিবস

Uncategorized জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সারাদেশ সিলেট

বিশেষ প্রতিবেদন  : ১৯৭১ সালের এই দিনেই শত্রুমুক্ত হয় কুলাউড়া উপজেলা। এদিন কুলাউড়া ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। কুলাউড়াতে উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।


বিজ্ঞাপন

কুলাউড়াবাসিকে এই মহান বিজয়ের শুভেচ্ছা ও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমার বাবা কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি আব্দুল লতিফ খানসহ কুলাউড়ার অকুতোভয় বীর ব্যারিষ্টার আব্দুল মোন্তাকিম চৌধুরী, সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল জব্বার, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরী জুবেদ, মুকিম উদ্দিন খাঁন, মিয়া ঠাকুর, নবাব আলী সফদর খাঁন রাজা, নবাব আলী সরওয়ার খান চুন্নু, লুৎফুর রহমান চৌধুরী হেলাল, মমরুজ বখ্শ মটু, আছকির আলী, সৈয়দ জামাল, আব্দুল মনাফ প্রমুখ সংগঠক ও সকল বীর মুক্তি যোদ্ধাদের ।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কুলাউড়ার গাজীপুর মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা মুক্তি বাহিনী । ৩০ নভেম্বর কাকুরা চা বাগানে অবস্থানকারী ৭৫ জন রাজাকার ও ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ধরা পড়ে মুক্তি বাহিনীর জালে। মূলত জুড়ীর ফুলতলা সাগরনাল হয়ে গাজিপুর এবং কুলাউড়া অক্ষে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। অপরদিকে চাতলা বিওপি হয়েও আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। ৪ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর সি আর দত্তের অধীনস্থ কৈলাশহর সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামানের অধীনে নমুজা, হাজিপুর, শমসেরনগর হয়ে অগ্রাভিযান পরিচালনা করা হয়। মুক্তি বাহিনীর তিন দিকের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী।

এ এলাকায় যুদ্ধকালীন সময়ে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় কুলাউড়ার গাজিপুরে। গাজীপুর এসে প্রথমে বড় বাধার সম্মুখীন হয় মুক্তি বাহিনী । ১ ডিসেম্বর কাকুরা চা বাগান থেকে গাজীপুর চা বাগান এলাকার দিকে মুক্তি বাহিনীরা অগ্রসর হলে পাক সেনাদের সাথে পাল্টা গুলি বর্ষণ চলতে থাকে। ২ ডিসেম্বর রাতেও যুদ্ধ হয়।

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মিলে গঠিত হয় মিত্র বাহিনী ফলে যুদ্ধের গতি তীব্রভাবে বেড়ে যায়। গাজীপুর চা বাগানে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আব্দুল ওয়াহিদ মোগল। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য বাগানে অবস্থান করছিল। অপরদিকে গাজীপুরের বিপরীতে চোঙ্গা বাড়িতে ছিল মুক্তি বাহিনী ক্যাম্প ।

৩ ডিসেম্বর রাতে ৬ রাজপুত রেজিমেন্ট আক্রমণ করে তবে পাকিস্তানিদের প্রচন্ড বাধার মুখে পড়ে অবস্থান দখল করতে ব্যর্থ হয়। মিত্র বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সায়াম কেল্কার মৃত্যুবরণ করে এবং বেশ কয়েকজন সৈন্যে নিহত হয়। তারপর ৪ ডিসেম্বর রাতে ৪-৫ গোর্খা রাইফেলস এর লেফট্যানেন্ট কর্ণেল এ বি হারলিকার নেতৃত্বে আক্রমণ করে মিত্র বাহিনী। মুক্তিবাহিনীর এম এ মুমিত আসুক, মোহিত লাল সোম প্রমুখের নেতৃতে মিত্র বাহিনী আক্রমণ সূচনা করে, প্রচন্ড যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা ব্যর্থ হয়ে অবস্থান ত্যাগ করে। তখন জানা যায়, পাকিস্তানিদের ৩০জন সৈন্যে নিহত হয় এবং ৪০জন আহত হয়। ১৫ জন সৈন্যের লাশ তারা গাজিপুরে ফেলে রেখে যায় আর বাকি ১৫ জন সৈন্যের লাশ তাদের সাথে নিয়ে যায়। ঐ দিনই সন্ধ্যার দিকে সম্মিলিত বাহিনী কুলাউড়ায় পৌঁছে এভাবেই কুলাউড়া-ব্রাহ্মণবাজার হয়ে সিলেটের দিকে সড়কপথে পাকিস্তানিরা পলায়ন করে। অবশেষে এভাবেই ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া শত্রুমুক্ত হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে পাড়া,মহ ল্লা, গ্রামে । চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা উপজেলার মানুষ।জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

সংকলন :   স্কোয়াড্রন লীডার (অব) সাদরুল আহমেদ খান , সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস,সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *