নিজস্ব প্রতিবেদক : জুয়ার বোর্ড ও মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় সাভারের ভাকুর্তায় এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে ব্যাবসায়ীর বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাটসহ পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গত ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী বাহেরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে প্রধান আসামি করে ৯ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭-৮ জনের নামে সাভার মডেল থানায় মামলা (নং – ১২/৯২৬) দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম সাগর।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
মামলার আসামিরা হলেন- ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও শ্যামলাসী বাহেরচর গ্রামের কছিম উদ্দিনের ছেলে ইয়াসিন (৫৫), তার সহযোগী মামুন(২৪), মো: জনি মিয়া(২২), ইউসুফ আলী(৫০), মো: রনি(২১), মো: সুমন(২৬), মো: আলামিন(২৫), সোবাহান মিয়া(২৩),শরীফ (২৫) সহ অজ্ঞাত ৭-৮ জন।
পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর পূর্বে পাঁচ শতাংশ জমি কিনে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী বাহেরচর গ্রামে একতলা বিল্ডিং নির্মাণ করে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম সাগর।
গত দুই বছর যাবত দিনের বেলায় সেই বাড়ির সামনের একটি বাগানে এবং রাতে বিল্ডিং এর ছাদে মাদক সেবন ও জুয়ার বোর্ড বসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াসিন ও তার বাহিনীর লোকজন। জুয়া খেলতে আসা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে ওই বাড়ির নারীদের ইভটিজিং করে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্যের সাথে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম সাগরের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
গত ২৯ নভেম্বর দুপুর ১২ টায় আমিনুল ইসলাম সাগরের মাদ্রাসা পড়ুয়া আট বছর বয়সী শিশু জুনায়েদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে ওই ইউপি সদস্যের নিকট আত্মীয় ইউসুফ আলীর ৮ বছর বয়সী শিশু ইব্রাহিমের ঝগড়া হয়। দুই শিশুর ঝগড়ায় সাগরের ছেলে জুনায়েদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিশুর বাবা ইউসুফ আলীর কাছে ওই ব্যবসায়ীর পাঁচ মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী খাদিজা আক্তার বিচার দাবি করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে চর-থাপ্পড় সহ ধাক্কা মেরে তাকে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ওই গর্ভবতী নারীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ঘটনার বিষয়ে সেদিন সন্ধ্যায় মীমাংসা করার প্রস্তাব করেন।
এতে ভুক্তভোগী পরিবারটি রাজি হয়। তবে রাত ৮ টার দিকে ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর তলপেট ব্যথাসহ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে তাকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চাইলে ইউপি সদস্য ইয়াসিনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা চাপাতি, হাতুড়ি, হকিস্টিক, লোহার রড, লাঠি সোটাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে তাদের ভাড়াকৃত সিএনজি আটকে রেখে রোগীকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়।
এর প্রতিবাদ করলে ইউপি সদস্য ইয়াসিনের নির্দেশে প্রথমে আমিনুল ইসলাম সাগরের ওপর হামলা করা হয়। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে সাগরের নানি হাসিনা বেগম, তার দোকানের কর্মচারী সজীব ও আলাউদ্দিন সহ প্রতিবেশী লুৎফর রহমানকেও মারধর করা হয়।এ সময় হাসিনা বেগমের কোলে থাকা চার বছরের প্রতিবন্ধী শিশু আমেনাকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।একপর্যায়ে তাদের জিম্মি করে ওই বাড়িতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
হামলাকারীরা ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম সাগরের বাড়িতে প্রবেশ করে টিভি, ফ্রিজ, শোকেস, দরজা,জানালা, বাথরুম সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণালংকার, দুইটি মোবাইল ফোন, চারটি সিলিং ফ্যান, একটি ফ্রিজ, তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি বৈদ্যুতিক মটর, ১ টি বৈদ্যুতিক চুলা সহ প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
প্রধান আসামী ইয়াসিন সহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে এলাকাবাসী জানায়, গত ২৯ নভেম্বর ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াসিন ও তার বাহিনীর সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভুক্তভোগীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা দিয়ে আমিনুল ইসলাম সাগরের আত্মীয়-স্বজনদের আটকে রেখে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর আগেও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কথা বলে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেকে। ইয়াসিন বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকে পুরো এলাকা।
এদিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে ৫ ডিসেম্বর মামলা দায়েরের পরও সন্ত্রাসীদের ভয়ে লুট হওয়া বাড়িতে যেতে পারছেন না ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও তার পরিবার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আসওয়াদুর রহমান বলেন, হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ইউপি সদস্য সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। পলাতক থাকায় এখনো কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।