নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে মানবিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনেও সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন সে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি যে রকম বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এরকম একই ভাবে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে বাঙালি জয় লাভ করবে।
আজ শনিবার ১৬ ডিসেম্বর, দুপুরে নগর ভবনের সম্মুখ প্লাজায় মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত ‘আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, “আজকের এই দিনটি অর্জিত হয়েছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নকে থমকে দেওয়ার জন্য জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যা করে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে।”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যখন দরিদ্র বাংলাদেশ ছিল তখন কেউ আমাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার শেখাতে আসেনি কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে তখন আমাদেরকে নানা রকমের নীতিকথা শুনতে হচ্ছে। প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখনই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”
অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশের ওপর নয়, জনগণের আস্থা-সমর্থন থাকলে জনরায়ের মাধ্যমে চরম প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব—–ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস
অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশের ওপর নয়, জনগণের আস্থা-সমর্থন থাকলে জনরায়ের মাধ্যমে চরম প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আজকে যারা বিভিন্ন অযুহাতে নির্বাচন বানচাল করতে চায় তাদেরকে একটু স্মরণ করিয়ে দেই। তারা বলেন, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই সেজন্য আমরা নির্বাচনে আসব না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৯৫৪ সালে প্রথম যে নির্বাচন, আওয়ামী লীগ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে। সে সময় মুসলিম লীগ ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন। প্রতিকূল পরিবেশে সেদিন নৌকা প্রতীক নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য সকল রাজনৈতিক সংগঠন বলেছিল — নির্বাচনে যাওয়া মানে আত্মহত্যার শামিল। এমনও স্লোগান উঠেছিল, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। সে বারও নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। সবকিছুই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধীনস্ত। প্রশাসন ছিলো পাকিস্তানের। সবকিছুই যখন পাকিস্তানি প্রশাসনের অধীন তখনও বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে যাবো। সেই প্রতিকূল পরিবেশেও আওয়মী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। বঙ্গবন্ধু জনগণের সেই রায় নিয়ে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে গেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনও আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল না। রাষ্ট্রপতি ছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন আহমেদ আর সেনাপ্রধান ছিলেন মঈন ইউ আহমেদ। তারা সবাই বিএনপি কর্তৃক নিযুক্ত। পুরো প্রশাসন ছিল বিএনপি-জামাতের পক্ষে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেন এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই সত্তরের মতোই আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৩ টি আসন নিয়ে এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সুতরাং নির্বাচন কোনো অনুকূল পরিবেশ, প্রতিকূল পরিবেশের ওপর নির্ভর করে না। যদি জনগণের ওপর আস্থা থাকে, জনগণের সমর্থন থাকে তাহলে চরম প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব।”
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংগত করতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আসল কথা হলো, বিএনপি-জামাতের জনগণের ওপর আস্থা নাই এবং এটা প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কোনো জনসমর্থন নাই। তারা যদি মনে করতো যে, জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করার কিছুটা হলেও সুযোগ আছে তাহলে তারা নির্বাচনে আসতো। কিন্তু তারা জানে, জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেটা প্রমাণিত হয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে। সুতরাং তারা জানে যে, নির্বাচনে আসলে তাদেরকে সর্বোচ্চ ২৯/৩০টি আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তাদের সরকার গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্যই ছলে-বলে-কৌশলে তারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। কিন্তু বাংলার জনগণ তো থেমে থাকবে না। একটি রাষ্ট্র তো থেমে থাকতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সংবিধানের অধীনে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এর ব্যত্যয় করার কোনো সুযোগ নাই। তাই এই বিজয়কে ধরে রাখার জন্য, এই বিজয়কে নতুন প্রজন্মের বিজয় হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যত্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচনে ব্যত্যয় মানেই হলো গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ভুলুঠিত করা এবং সেই অসাংবিধানিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাই আগামী নির্বাচনে আমাদেরকে অংশগ্রহণ করতে হবে। কোন রাজনৈতিক সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেজন্য নির্বাচন থেমে থাকতে পারে না।”
এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন,
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় এবং সেজন্য ৪ নভেম্বর দিনটি নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। এর কোন ব্যত্যয় কোনভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভব না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করুক বা না করুক, কোনো প্রার্থী নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ নভেম্বর নির্বাচন হবে। তেমনি সকল দেশের যে সংবিধান আছে সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যই নির্বাচন করাটা অত্যাবশকীয়। তাই ২০২৪ সালে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭ জানুয়ারি যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে সে দিনেই আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।আলোচনা সভায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরগণসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷ আলোচনা সভা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।