মামুন মোল্লা (খুলনা) : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র আয়োজনে “মহান বিজয় দিবস-২০২৩” উপলক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সদস্যগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ১৯ ডিসেম্বর, সকাল ১১ টা ১০ মিনিটের সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র বয়রাস্থ পুলিশ লাইন্স ডাইনিং লাউঞ্জ-২ তে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা, এর সভাপতিত্বে মহান স্বাধীনতার বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সদস্যগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার সভাপতির বক্তব্য প্রদান কালে তিনি বলেন-“জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জীবন্ত কিংবদন্তী আপনাদের শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবুও আামার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আপনারা জানেন হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙ্গালীদের এই ভূখন্ডে আর্য, পাঠান, মোঘল, পর্তুগিজ, ইংরেজরা শাসন করেছে আমরা শোষিত হয়েছি। এই ভূখণ্ডের কুলো বধূ ও গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষের প্রার্থনা ছিল এই ভূখণ্ডে এমন একজন মানুষ দাও যিনি এই ভূখণ্ডের মানুষকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিতে পারে। সেই কুলো বধুদের স্বপ্ন সফল হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ।
গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়ার নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতিকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন এবং সার্বভৌম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ১৯৪৭, ১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ সালের আন্দোলন সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের ০৭ ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রু সৈন্যদের মোকাবেলা করার জন্য তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করার জন্য নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করেছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ভাষণ। কিন্তু তার পরিবার-পরিজন নৃশংসভাবে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যসহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”
তিনি এসময় আরো বলেন,“বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অগ্রাধীকার ভিত্তিতে বীর নিবাস ও গার্ড অব ওনার প্রদান সহ সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় সম্মান প্রদান করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে সড়ক, রেলওয়ে ও নৌ পথে টিকিট এবং হাসপাতাল ও ব্যাংকে অগ্রাধীকারের সাথে সেবা দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই অবিস্মরণীয় সম্মানের আসনে অলঙ্কিত করেছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এটি আপনাদেরই নেতৃত্বে ও বীরত্বে স্বাধীন হয়েছে। যার স্বাধীনতার সুফল আমরা ভোগ করছি।
আজ অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি এমন কোন সেক্টর নাই; যে সেক্টরে এদেশে উন্নয়ন হয়নি। আপনারা যুদ্ধ করেছেন বলেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড, একটি মানচিত্র এবং লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। আপনাদের দেওয়া লাল সবুজের পতাকার ভার যেন আমরা বহন করতে পারি, সেই দোয়া করবেন। আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি। তাই সমগ্র জাতির হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে আপনাদেরকে সেলুট ও শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আর কিছু দেওয়ার নাই।
আজকের উপস্থিত সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধারাবৃন্দ জীবন সায়াহ্নে এসে অবিলাষ করেছেন তা পূর্ণ হবে। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বিভাগে আপনাদের অবদান ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাচে তুরে ধরা হবে। পুলিশ লাইন্স স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে সরাসরি যুদ্ধগাঁথা শোনার জন্য উদ্ভুদ্ধ করবো। আপনাদের বিজয়গাঁথার মর্যাদা শতাব্দী পর শতাব্দী অক্ষুন্ন থাকবে ও উদ্ভাসিত হবে।
আপনারা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন, যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি এবং কোন অপশক্তি যেন দেশটিকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। এই দেশটিকে সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিণত করতে চাই- এটি হোক আজকের এই বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের স্প্রিট। আমি আপনাদের পরিবারের সুস্থ্যতা কামনা করছি এবং আইন-শৃঙ্খলা জনিত যে কোন প্রয়োজনে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভুমিকার জন্য সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যবৃন্দ তাদের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।
এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৪৬ জন অবসরপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সদস্যগণের মধ্যে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ সময়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত রাশিদা বেগম, পিপিএম-সেবা, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, পিপিএম, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিবি) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত বি.এম নুরুজ্জামান, বিপিএম, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত এম এম শাকিলুজ্জামান, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এফএন্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠুু, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ইএন্ডডি) মোঃ কামরুল ইসলাম, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (আরসিডি) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী, খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির, খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম মুজিবুর রহমান (অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী ধ্যান শংকর চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র এএসপি)-সহ অবসরপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সদস্যগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।