নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের দুর্নীতি’র খবর প্রকাশ করায়,সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা

Uncategorized অন্যান্য অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা জাতীয় সারাদেশ

মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে খবর প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিক এস কে সুজয়ের নামে ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সদর আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলার ঘটনায় নড়াইলে কর্মরত সাংবাদিক’রা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এস কে সুজয় যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিনের কথা ও ঢাকার দৈনিক জনবাণী পত্রিকার নড়াইল জেলা প্রতিনিধি। মামলাটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক হেলাল উদ্দিন নড়াইল সদর থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এদিকে,মামলার এজাহারেও নানান অসঙ্গতি রয়েছে,বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে,যা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করলে অসঙ্গতির বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মামলার বাদী জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান এজাহারে উল্লেখ করেছেন,আসামি এস কে সুজয় (২৬) ‘প্রতিদিনের কথা’ পত্রিকার প্রতিনিধি। গত ১৪ ডিসেম্বর সুজয়সহ অজ্ঞাতনামা কিছু লোক বাদী হামিদুর রহমানকে আসামির (সুজয়) ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ০১৩০৩-০৫৮৭৫৭ নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বাদীর কাছে বিভিন্ন প্রকার অন্যায় দাবি করেন। এ দাবি পুরণ না করলে বাদীর নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচারসহ মানসম্মান ক্ষুন্ন করার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে সাংবাদিক এস কে সুজয় বলেন,মামলার এজাহারে আমার ব্যবহৃত যে মোবাইল ফোন নাম্বারের (০১৩০৩-০৫৮৭৫৭) কথা উল্লেখ করা হয়েছে; সেই নাম্বার দিয়ে কালচারাল অফিসারকে ফোন করা হয়নি। আলাপ অ্যাপসের মাধ্যমে তার সাথে কথা হয়।
এছাড়া এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে,আমিসহ (সুজয়) অজ্ঞাতনামা কিছু লোক বাদী হামিদুর রহমানের কাছে আমার ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার অন্যায় দাবি করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন গত ১৪ ডিসেম্বর আমার মোবাইল ফোন থেকে তার সঙ্গে আমিই কথা বলেছিলাম। আর কেউ কথা বলেননি। তাহলে ‘অজ্ঞাতনামা কিছু লোক’পেলেন কোথায় ? আর জেলা কালচারাল অফিসারের কাছে শুধু তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। কোনো প্রকার অন্যায় অনৈতিক দাবি করা হয়নি। তার সঙ্গে যেসব কথা হয়েছিল,সেগুলো ফোনে রেকর্ড করা আছে। অথচ এজাহারে জেলা কালচারাল অফিসার ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আর স্বাক্ষীরা এসব ডাহা মিথ্যা কথা কীভাবে শুনতে পেলেন,তা বোধগম্য নয়। এজাহারে বাদী আরো উল্লেখ করেছেন,আসামি এস কে সুজয়ের কাছে তার অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো প্রকার ডকুমেন্ট না থাকা সত্ত্বেও বাদীর নামে দৈনিক প্রতিদিনের কথা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘নড়াইল কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির যত অভিযোগ’ শিরোনামে সচিত্রসহ খবর প্রকাশ করেছে। এতে বাদী ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি স্বাক্ষী’রা অবগত আছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিক এস কে সুজয় বলেন,জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত ১৩ ডিসেম্বর জেলা প্রাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা’রা। এ সময় হামিদুর রহমানের অপসারণ দাবি করেন,তারা। জেলা প্রশাসক তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পীসহ অভিভাবক’রা জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ খবর শুধু আমার পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়নি। দেশের সব ধরণের পত্রিকা,অনলাইনসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে,নড়াইলে অনুষ্ঠিত গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গত ৩ ডিসেম্বর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এ অনুষ্ঠানে একটিমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দুই হাজার টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগেও অন্য অনুষ্ঠানগুলোর টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করেন। এদিকে,গত ১৪ ডিসেম্বরসহ পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতি অভিযোগে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়। এরপর নিজের সাফাই গেয়ে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে দাবি করেন, শতভাগ সততা ও বিধি মোতাবেক কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রীমহল অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করেছে।
তবে,দেড় বছর আগে ময়মনসিংহ জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির কারণে হামিদুর রহমানকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত জানুয়ারিতে নড়াইলে যোগদানের পর আবার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নড়াইল থেকেও তাকে প্রত্যাহার দাবি করেন,সাংস্কৃতিক কর্মী’রা। এমনকি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের সাউন্ড,ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারের কথা বলে সাউন্ড এবং ইলেকট্রিকের কাজ খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত হামিদুর রহমান নিজেই সেই কাজ করেছেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউন্ড এবং ইলেকট্রনিক্স ও ডেকোরেশন ব্যবসায়ী’রা জানান,তারা অডিটোরিয়ামের কাজ না করলেও তাদের কাছ থেকে জেলা কালচারাল অফিসার ফাঁকা ভাউচার নিয়ে গেছেন। শিল্পকলা একাডেমির সাবেক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল শেখ বলেন,গত জুলাই মাসে নড়াইলে চাকরিকালীন সময়ে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার কাছ থেকে ছয়টি কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে রাখেন। এরপর আগস্ট মাসে আমাকে পথের কাঁটা ভেবে মেহেরপুরে বদলি করেন। এসব অভিযোগে ভিত্তিতে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামি ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম এম আরাফাত হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন,রোববার শুনানী অনুষ্ঠিত হবে,পরবর্তীতে প্রতিবেদন দেয়া হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *