বিশেষ প্রতিনিধি (বাগেরহাট) : মোঃ আলম হাওলাদার ইজি বাইক চালক ও মালিক প্রতিদিনের মতো গত ৭ ডিসেম্বর, তার ইজিবাইক নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর বাস স্ট্যন্ডে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা অবস্থায় একজন (মোঃ বসির উদ্দিন ওরফে সাগর) নিজেকে র্যাব অফিসার পরিচয় দিয়ে তার গাড়ীতে যাত্রীবেশে উঠে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানা এলাকায় বাধাল বাজারের নিকটবর্তী নির্জন শাখা রোডে আসে।
সেখানে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগীর বাচ্চু এসে জানায় তার গাড়ী পুলিশ আটক করছে। তখন র্যাবের অফিসার পরিচয়দানকারী ব্যক্তি বলে ”তুই আমার কথা বলস নাই আমি র্যাবের অফিসার আমার লোকের গাড়ী কিভাবে আটকায়। যা কাগজপত্র নিয়া আয়”। কিছুক্ষন পরে র্যাবের অফিসার পরিচয়দানকারী ব্যক্তি মোঃ বসির উদ্দিন ওরফে সাগর ইজিবাইক চালককে বলে ”তুমি একটু ওর বাসায় গিয়ে বলো ও যেন আসার সময় ব্লু-বুক নিয়ে আসে”।
বাদী সরল বিশ্বাসে তার ইজিবাইক তালা বন্ধ করে রেখে বাচ্চুর কাছে গেলে চোর চক্রের আরেক সদস্য মহিউদ্দিন মোটর সাইকেল নিয়ে ইজিবাইক চালকের সামনে এসে থামিয়ে স্টার্ট বন্ধের অভিনয় করে বলে ”ভাই একটু ঠেলে স্টার্ট করে দেন।” এভাবে তাকে ব্যস্ত রাখে । অপরদিকে চোর চক্রের আরেক সদস্য মো: সাইফুল ইসলাম@চান মিয়া সিকদার ইজিবাইকটির তার কেটে ডাইরেক্ট লাইন করে দিয়ে ইজিবাইক সচল করে দিলে মোঃ ইমরান মোল্যা@ ইমন ইজিবাইকটি চালিয়ে নিয়ে পালিয়ে গোপালগঞ্জ চলে যায়।
পরে মো: সাইফুল ইসলাম@চান মিয়া সিকদার উক্ত ইজিবাইকটি গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ লাইন মোড় এলাকায় ৬০০০০ টাকা দিয়ে কিনে নেয় এবং ঐদিনই চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের আরেক চোরচক্রের সদস্য মোঃ আমির ফকির এর নিকট ৮০০০০ টাকায় বিক্রয় করে দেয়। আমির ফকির উক্ত ইজিবাইকটি ক্রয় করে কিছু মেরামত ও রং পরিবর্তনের জন্য জনৈক গ্যারেজ মিস্ত্রী নূর ইসলাম এর কাছে দেয়।
ইজিবাইক চালক ও মালিক বাদী আলম হাওলাদার তার ইজিবাইক চুরির বিষয়ে কচুয়া থানায় গেলে কচুয়া থানার ডিউটি অফিসার ঘটনাস্থলের বর্ণনা শুনে বলে ”উক্ত এলাকা মোড়েলগঞ্জ থানাধীন। আপনি সেখানে যান। সেই সাথে পিবিআই বাগেরহাট সম্প্রতি একটি মামলা উদঘাটন করেছে, আপনি সেখানে গেলে আরো ভাল সেবা পাবেন।”
ইজিবাইক চালক ও মালিক বাদী আলম হাওলাদার মোড়েলগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দিয়ে আসেন এবং একই অভিযোগ নিয়ে পিবিআই বাগেরহাট অফিসে এলে পুলিশ সুপার পিবিআই বাগেরহাট মোঃ আবদুর রহমান বিষয়টি সাধারন ডাইরী ভুক্ত করে ছায়া তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন এবং উক্ত বিষয়ে এসআই গুরুদাস মন্ডলকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে দেন।
উক্ত টিম ঘটনাটির শ্যাডো ইনভেস্টিগেশন করে পুরো চোরচক্রকে সনাক্ত করলে ইজিবাইক চালক ও মালিক মোঃ আলম হাওলাদারকে মোড়েলগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি নিয়মিত মামলা করতে বলে। তিনি মামলা রুজু করার পর (মামলা নং- তারিখ ১৮/১/২৩) মামলাটি পিবিআই বাগেরহাট তদন্ত করার জন্য পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স এর অনুমতি চেয়ে পত্র প্রেরণ করলে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স অনুমতি প্রদান করে।
পরে উক্ত টিম পটুয়াখালীর দশমিনা হতে চোরচক্রের সদস্য মোঃ আঃ কাদের(৪৫) কে গ্রেফতার করে ও তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঢাকার গাজিপুর, নারায়নগঞ্জ এর রূপগঞ্জ এলাকা ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানা এলাকা ও কোটালীপাড়া থানা এলাকা থেকে একে একে ৯ জন সদস্য গ্রেফতার করে।
তাদের কাছ থেকে ২ টি ইজিবাইক, চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ও ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। এছাড়াও চোরাই ইজিবাইক ক্রয় করার উদ্দেশ্যে রাখা ৫০০০০ হাজার টাকাসহ মোঃ আমির ফকিরকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য যে এই আমির ফকির এর হেফাজত থেকেই সংশ্লিষ্ট মামলার ইজিবাইকটিও উদ্ধার করা হয়।
এই মামলার অন্যতম আসামী সাইফুল ইসলাম@চান মিয়া সিকদারকে গ্রেফতার করার সময় তার অপর দুইজন সহযোগী সাইফুল ইসলাম ও রসুল আমিন হাওলাদার সাগরদের নিকট থেকে একটি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় নড়াইল এর লোহাগাড়া এলাকা থেকে তারা এটি চুরি করে এনেছে।
চালককে জুসের সাথে নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে তা পান করিয়ে অজ্ঞান করে তারা এটি চুরি করে এনেছে। এ চক্রের অন্যতম সদস্য সাইফুল ইসলাম@চান মিয়া সিকদার এর হেফাজত থেকে চেতনানাষক ট্যাবলেট (লোরাজিপাম-২এমজি) এর একটি পরিপূর্ণ পাতা যাতে মোট ৩০ টি ট্যাবলেট আছে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হবে। তদন্ত অব্যহত আছে এবং তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রদান করা হবে।