দক্ষিণখানে বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ী হাসুর খুঁটির জোর কোথায় ?

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এমনকি ভ্রাম্যমান আদালতের চক্ষু ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর দক্ষিনখানে অবাধে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হাসেম হাসু নামক এক মাদক ব্যবসায়ী। দক্ষিণখানের দক্ষিণ মোল্লারটেকের বায়তুল মামুর জামে মসজিদ এলাকায় মাদক ব্যবসায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই হাসু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক মার্কার পক্ষে কাজ করেছে মাদক ব্যবসায়ী হাসেম হাসু ওরফে কন্টাকটার হাসু। এস. এম. তোফাজ্জল হোসেনের সমর্থনে কাজ শুরু করার পর থেকে হাসু হয়ে উঠে আগের চেয়ে বেপরোয়া। নির্বাচনের ফলাফলের আগেই নিজেকে এমপির লোক দাবি করা শুরু করে। যদিও নির্বাচনে ট্রাক মার্কা পরাজিত হয়েছে। বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে মো. খসরু চৌধুরীর কেটলি মার্কা। জানা যায়, নির্বাচনের সময় দক্ষিণ মোল্লারটেকের অসংখ্য তরুণ যুবককে গাঁজা, ইয়াবার মতো মরন নাশক মাদকের বিনিময়ে ট্রাক মার্কার নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে যেত হাসু। কিছু কিছু জায়গায় ট্রাক মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বিদের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও প্রচারণায় অংশ নেওয়া কর্মীদের উপর হামলাও করেছে হাসু। নির্বাচনের দিন উদয়ন স্কুল কেন্দ্র এলাকায় কেটলির কর্মীদের উপর হামলা করে ট্রাকের কর্মীরা। এই হামলার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় হাসু। স্থানীয় সাংবাদিক সোহরাব হোসেন এর সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এখন অনেকে বলাবলি করছে, এধরনের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা তোফাজ্জল হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কারনেই সুশীল সমাজ ট্রাক মার্কায় ভোট দেয়নি।
যদিও এস. এম. তোফাজ্জল হোসেন এর ঘনিষ্ঠ জনেরা নিশ্চিত করেছেন হাসু নামের কাউকে তারা চিনেন-ও না। কেউ তার লোক পরিচয়ে মাদক ব্যবসা করলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজমিস্ত্রীর পেশার আড়ালে ভ্রাম্যমানভাবে গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবসা করে হাসু। স্থানীয় কয়েকজন নেতাদের ম্যানেজ করে চলে তার ব্যবসা। বিমানবন্দর রেল স্টেশন, হাজীক্যাম্প, ইর্শাল কলোনি, উদয়ন স্কুল রোডে ভ্রাম্মমানভাবে মাদক ব্যবসা করলেও প্রায় সময়েই দক্ষিণ মোল্লারটেকের বাদলের চা দোকানে বসেও মাদক আদান-প্রদান করতে দেখা যায় হাসুকে।
এক সময় নুন আনতে যার পান্তা ফুরোতে সে হাসু এখন মাদক ব্যবসার টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ! ঝুপড়ি ঘর ছেড়ে থাকেন ফ্লাট বাসায়। পুলিশের জ্যাকেট, জুতো গায়ে জড়িয়ে ঘুরে বেড়ান। জানা গেছে, দক্ষিণখানে বেশ কয়েকটি পুলিশের সামগ্রী বিক্রির দোকান রয়েছে, সেখান থেকে পুলিশ না হলেও তাদের সামগ্রী কিনে ব্যবহার করেন হাসু।
দক্ষিণখানের বটতলা এলাকার কয়েকজন রাজমিস্ত্রী অভিযোগ করেন, হাসু মাদক ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটে রাজমিস্ত্রী সাপ্লাই দেয়। তার সাইটে যারা কাজ করতে যায় তাদের ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেয় না। ন্যায্য পারিশ্রমিক চাইলে মারধর করে। এনিয়ে তার সাথে রাজমিস্ত্রীদের প্রতিদিন ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। যারা হাসুর সাইটে একবার কাজে যায় তারা আর ২য় বার যেতে চায় না। এছাড়া তার সাইটে যারা কাজ করে তাদের মাদক সেবনে উদ্বুদ্ধ করে হাসু। এমন গুরুত্বর অভিযোগকারী ভুক্তভোগীদের বক্তব্যের রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
একটি সূত্রে জানা যায়, উত্তরা পূর্ব থানা ও টঙ্গী তুরাগ থানায় হাসুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এলাকার উঠতি বয়সের তরুনদের হাতে মাদক তুলে দিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে হাসু। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই বর্বর নির্যাতনের শিকার হতে হয়। হাসু শুধু মাদক ব্যবসাই করেন না, নানা রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথেও জড়িত সে। এছাড়া হাসুর পরিকল্পনায় দক্ষিনখানের বিভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। চোরদের শেল্টার দেয় হাসু। এবং চুরির মালামাল কেনাবেচা করেন।
দক্ষিণ মোল্লারটেক এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে হাসুর ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান, ‘হাসুর কোনো মানসম্মান নেই। নির্লজ্জ একটা লোক। তাকে বাধা দিলেও কথা শোনে না। এলাকার কিছু মাদকসেবী খারাপ ছেলেপেলে তার সাথে আছে। তাই আমরা কিছু করতে পারি না। উল্টো মাদকাসক্তরা আমাদের সম্মানহানি করে।’
বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ী হাসুকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। মাদক ব্যবসায়ী হাসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করলে প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না। আমার পেছনে অনেক বড় বড় নেতার হাত আছে।’
এবিষয়ে কথা বলতে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সিদ্দিকুর রহমান এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি নির্বাচনকালীন ডিউটিতে ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *