নতুন মন্ত্রীসভার সম্ভাব্য তালিকায় যারা থাকতে পারেন 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ এই জয়ের ফলে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আজ বুধবার ১০ জানুয়ারি, সকাল ১০ টায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা (এমপি) শপথ নেন এবং আগামীকাল  বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারী  সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। গতকাল মঙ্গলবার ৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ।


বিজ্ঞাপন

আগের চার বারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাই দায়িত্ব নেবেন বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে মন্ত্রিসভায় কারা-কারা স্থান পাচ্ছেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা আছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। আর নতুন করে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৭ জন প্রথমবারের মতো ঠাঁই পেয়েছিলেন এবং ২০ জন ছিলেন পুরাতন মন্ত্রিসভার। এবার মন্ত্রিসভায় পূর্বের ১৪ থেকে ১৫ জন এবং নতুন ২৬ থেকে ২৮ জন স্থান পেতে পারেন। কিছু মন্ত্রণালয় প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।

ক্লিন ইমেজ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও বয়সের ভিত্তিতে নতুন মন্ত্রিসভায় আলোচনায় আছেন ৭৭ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩ টি সংসদীয় আসনের ৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ৩৯ টি সংসদীয় আসনের ৭ জন, খুলনা বিভাগের ৩৬ টি সংসদীয় আসনের ৮ জন, বরিশাল বিভাগের ২১ টি সংসদীয় আসনের ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪ টি সংসদীয় আসনের ৪ জন, ঢাকা বিভাগের ৭০ টি সংসদীয় আসনের ২১ জন, সিলেট বিভাগের ১৯ টি সংসদীয় আসনের ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮ টি সংসদীয় আসনের ১৯ জন।

পুরনোদের মধ্যে আলোচনায় ১৯ জন:

পুরনোদের মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন। ফলে তাদের দপ্তরে দেখা যাবে নতুন মুখ। এই ছয়জন ছাড়াও আরও ২২ থেকে ২৪ জন বাদ পড়তে পারেন।

পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় আলোচনায়:

পঞ্চগড়-২ মো. নুরুল ইসলাম সুজন, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী-৬ মো. শাহরিয়ার আলম, বরিশাল-৫ জাহিদ ফারুক, পিরোজপুর-১ শ ম রেজাউল করিম, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক , ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ বিপু, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, সুনামগঞ্জ-৩ এম এ মান্নান, শরীয়তপুর-২ এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, কুমিল্লা-৯ তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মুস্তফা কামাল, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম-৭ ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি।

নতুনদের মধ্যে আলোচনায় ৫৮ জন:

দিনাজপুর-৩ ইকবালুর রহিম, লালমনিরহাট-৩ অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-৩ সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে, গাইবান্ধা-৩ উম্মে কুলসুম স্মৃতি, গাইবান্ধা-৫ মাহমুদ হাসান রিপন, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়া-৫ মজিবুর রহমান মজনু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, নওগাঁ-৩ সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সিরাজগঞ্জ-১ তানভীর শাকিল জয়, পাবনা-৫ গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুবউল আলম হানিফ, ঝিনাইদহ-৩ মো. সালাহ উদ্দিন মিয়াজী, যশোর-২ ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, নড়াইল-১ বিএম কবিরুল হক, বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার, খুলনা-১ ননী গোপাল মণ্ডল, খুলনা-৩ এসএম কামাল হোসেন, বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালী-৩ এস এম শাহজাদা, টাঙ্গাইল-৬ আহসানুল ইসলাম টিটু, টাঙ্গাইল-৮ অনুপম শাহজাহান, জামালপুর-৫ আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ-৪ মো. মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-১০ ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, নেত্রকোণা-৪ সাজ্জাদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ জাকিয়া নূর, কিশোরগঞ্জ-৪ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মুন্সীগঞ্জ-২ সাগুফতা ইয়াসমিন, ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৭ মোহাম্মদ এ আরাফাত, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, শরীয়তপুর-১ মো. ইকবাল হোসেন, সুনামগঞ্জ-১ রনজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ সাদিক, সিলেট-৩ হাবিবুর রহমান হাবিব, মৌলভীবাজার-২ শফিউল আলম চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৩ আবু জাহির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ফয়জুর রহমান, কুমিল্লা-১ ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, কুমিল্লা-৭ ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, কুমিল্লা-৮ আবু জাফর মোহাম্মদ শামীম, চাঁদপুর-১ ড. সেলিম মাহমুদ, ফেনী-১ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নোয়াখালী-৪ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ সাইমুম সরওয়ার কমল, পার্বত্য খাগড়াছড়ি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

নারী সংসদ সদস্যের মাধ্যে ২ জন, সনাতন ধর্মালম্বী থেকে ২ জন এবং সদ্য সাবেক আমলা থেকে নির্বাচিত ৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২ জন মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন।

বিরোধী দল কে, জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র?

মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, যিনি সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মন্ত্রিসভা গঠনের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। সংসদ সদস্যদের শপথ হওয়ার পর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করতে হবে।

সেটি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হবেন। তিনি নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে জানাতে হয় সরকার গঠনের জন্য। এরপর তিনি যখন অনুমোদন দেন, তখন সরকার গঠন করা হয়।

কেমন ছিল আগের টানা ৩ মেয়াদের মন্ত্রিসভা?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেই নির্বাচনে ২৬৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা, গঠন করেন ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এর ১৮ দিন পর মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন আরও ছয়জন। এরও দুই বছর ১০ মাস পর আরও দুই জনকে মন্ত্রী করা হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সেবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো।

ওই বছরের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তখন অধিকাংশ পুরোনো মন্ত্রী বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়।

সেই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিসভার আকার আরও বাড়ানো হয়।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে, এ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। এছাড়া, তিনটি আসন পায় অন্যরা।

২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার আকার হয় ৪৭ জনের। এর মধ্যে নতুন মুখ ছিলেন ৩১ জন। পাশাপাশি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ছিলেন এমন অনেকেও এই মন্ত্রিসভায় স্থান পান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *