বাজিতে মারবেল খেলাকে কেন্দ্র করে খুন : পিবিআই গাজিপুর কর্তৃক রহস্য উদঘাটন সহ খুনি গ্রেফতার   

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

 

নিজস্ব প্রতিনিধি  : বাজিতে মারবেল খেলাকে কেন্দ্র করে খুন এবং খুনের রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ১) রাসেল আহম্মদ সোয়াদ (২১) কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা। ঘটনার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ১। রাসেল আহম্মেদ সোয়াদ(২১) গাজীপুর জেলার বাসন থানার টেকনগপাড়ার মোঃ সেলিম মিয়ার ছেলে।


বিজ্ঞাপন

মামলার বাদী রিক্সা চালক সাজ্জাদ মিয়া বাসন থানাধীন ভোগড়া মধ্যপাড়া আবুল কালামের বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করতেন।বাদীর স্ত্রী ভোগড়া ভ্যালমন্ড ফ্যাশনে সুইং অপারেটর হিসাবে চাকরি করেন। বাদী ও বাদীর স্ত্রী প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৪/০৭/২০২৩ তারিখ  সকালে কাজে বের হয়ে যায়। কাজ শেষে বিকেল অনুমান ৫ টায় বাসায় এসে তাদের ছোট ছেলে বাদল (৭) কে বাসায় দেখতে পান । বড় ছেলে বকুল (১৪) কে বাসায় দেখতে না পেয়ে ছোট ছেলে বাদলকে জিজ্ঞাসা করলে বাদল জানায় যে, সকাল অনুমান ১০ টায় খেলার কথা বলে বকুল বাসা হতে বের হয়ে যায়। রাত গভীর হওয়ার পরও বাদীর বড় ছেলে বকুল বাসায় ফিরে না আসায় আশপাশের বাসাসহ বাদীর নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খোঁজাখুজি করেন।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ২৫/০৭/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ৯ টায় প্রতিবেশী জনৈকা মোসাঃ ফরিদা বেগম বাদীকে সংবাদ দেয় যে, বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারা বাগান সাকিনস্থ বালুর মাঠ সংলগ্ন জনৈক মোঃ সিদ্দিক এর পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরের ভেতরে ১৪/১৫ বছরের একটি ছেলের মরদেহ দেখা যাচ্ছে। বাদী তাৎক্ষনিক তাঁর স্ত্রীসহ অন্যান্য স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহটি দেখে তাঁর ছেলে বকুল (১৪) এর মৃতদেহ বলে সনাক্ত করেন। থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বকুলের মৃতদেহটি উদ্ধার করে। ভিকটিম এর মৃতদেহের ডান চোঁখের উপরে কালো ও ছোলা জখমের চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়। গত ২৪/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১০ টার পর হতে ২৫/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ৯ টার  মধ্যে যে কোনো সময় অজ্ঞাতনামা খুনি/খুনিরা অজ্ঞাত কারণে বাদীর ছেলেকে হত্যা করে মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিম বকুলের মৃতদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় বাদীর দায়েরকৃত এরূপ এজাহারের ভিত্তিতে বাসন থানার মামলা নং-২৫, তারিখ- ২৫/০৭/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা রুজু হয়। বাসন থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তাধীন অবস্থায় মামলা তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় মামলাটি পুলিশ হেডকোয়াটার্র্স ঢাকা পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। পিবিআই গাজীপুর ২৮/১২/২০২৩খ্রিঃ মামলার তদন্ত শুরু করে।

অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই  বনজ কুমার মজুমদার,বিপিএম (বার), পিপিএম এর  সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার,  মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম এঁর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ)  জামাল উদ্দিন খান, বিপি-৮৩১১১৪২৯৩৯ তদন্ত করেন।

গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাকালে জানা যায় যে, অভিযুক্ত রাসেল আহম্মেদ সোয়াদ (২১) ভোগড়া বাইপাস
কাচাঁমালের আড়তে শফিক এর দোকানে লেবার হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৪/০৭/২৩ খ্রিঃ আড়তে কাজ শেষে বাসায় ফেরেন। দুপুর ১ টার সময়  দুপুরের খাবার খেয়ে তাঁর বন্ধু অটো চালক নাজমুলের সাথে দেখা করে আড্ডা দেয়ার জন্য পেয়ারা বাগান বালু মাঠে যান। অভিযুক্ত দুপুর অনুমান ১ টা ৩০ মিনিটের সময়  বালুর মাঠের কোনায় চা-স্টলে চা খাওয়ার সময় তাঁর পরিচিত একই এলাকার ছোট ভাই বকুল ও নাঈম নামীয় দু’জন বালুর মাঠে বাজিতে মার্বেল খেলছিলো। খেলা নিয়ে নাঈম আর বকুল ঝগড়া ও মারামারি করে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বকুল নাঈমকে চড় থাপ্পর ও জোরে ধাক্কা মারে। এতে নাঈম মাটিতে পড়ে যায়। ঝগড়া দেখে এলাকার এক বড় ভাই উভয়কে ফিরিয়ে দেয়। নাঈম রাগ করে সেখান থেকে চলে যায়।

চলে যাওয়ার পরে অনুমান বিকেল সাড়ে ৩ টার সময়  নাঈম তাঁর এক বন্ধুসহ বকুলকে খুঁজতে বকুলের দাদীর বাসায় যায়। বকুলকে না পেয়ে তারা চলে আসে। অভিযুক্ত সোয়াদ চা দোকানে বসে এসব দেখতে থাকে। পরে তিনি বালুর মাঠে রনি ও তার অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে ক্রিকেট খেলেন। খেলা চলাকালে বিকেল অনুমান ৫ টার সময় তাঁর বন্ধু নাজমুল অটো নিয়ে বালুর মাঠের সামনে আসে। নাঈম,নাজমুল ও তার এক বন্ধু কথা বলার জন্য একত্র হয়। তারা আড্ডা দেয় এবং বালুর মাঠে দক্ষিণের কোনায় বসে গাঁজা সেবন করে। তখন বকুল এর বিরূদ্ধে নাঈম নাজমুলের কাছে নালিশ দেয়। নাঈম বলে যে, বকুলকে খুঁজে পাচ্ছি না। পরে নাঈম তাঁর এক বন্ধুসহ নাজমুলের অটোতে ওঠে এবং নাজমুল সোয়াদকে মাঠেই থাকতে বলে। সোয়াদ চা ষ্টলেই বসে থাকে। সন্ধ্যা অনুমান ০৫:৪৫ ঘটিকায় নাজমুল ও নাঈম বকুলকে খোঁজার জন্য বকুলের বাবার বাসার দিকে যায়। এক দেড় ঘন্টা পর বকুলকে নাজমুলের অটোতে করে নিয়ে আসে এবং বালুর মাঠে অটো না থামিয়ে নাওজোর মোড়ের দিকে চলে যায়।
অনুমান রাত সাড়ে ৮ টার সময় সোয়াদ নাজমুলকে জিজ্ঞেস করে বকুল কোথায় ? নাজমুল বলে যে বকুল আছে। কাজ আছে বলে নাজমুল সোয়াদকে থাকতে বলে। কি কাজ জানতে চাইলে বলে থাকলেই দেখবি।

রাত অনুমান ৯ টার পর নাঈম অপর একজনসহ সোয়াদের কাছে আসে এবং নাজমূলকে ডাক দেয়। সকলে মিলে বালুর মাঠের দক্ষিণে একদম শেষ কর্ণারের টিনের ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। ওখানে গিয়ে দেখেন বকুলের হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। নাঈম বকুলকে লাথি ঘুষি মারে। নাজমুলও কয়েকটি লাথি ঘুষি মারে। সোয়াদ নিজেও হুজুগে কয়েকটা লাথি,ঘুষি মারে। সোয়াদ বকুলের পা চেপে ধরে। নাজমুলের একটি ঘুষি বকুলের ডান চোখের উপরে লাগলে চোখ ফুলে যায়। নাজমুল ও নাঈমদের ঘুষিতে বকুলের নাক ফেটে রক্ত বের হয়। নাঈম বকুলের গলা মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে ৪/৫ মিনিট পরে বকুল নিস্তেজ হয়ে যায়। বকুল মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে সোয়াদ বকুলের ডান পায়ে, নাঈম বাম পায়ে, নাজমুল বকুলের মাথার নীচে এক হাতে, আরেক হাতে বাম হাত এবং অপর একজন বকুলের ডান হাতে ধরে মরদেহ পাশের ফ্যাক্টরীর জমানো পানিতে ফেলে দেয়। পরে সকলেই যার যার বাসায় চলে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার  মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন, ঘটনায় জড়িত সকল অভিযুক্ত এবং ডিসিষ্টএকই এলাকার বাসিন্দা। তারা অধিকাংশই কিশোর। বাজিতে মারবেল খেলায় হার জিত নিয়ে ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে পরবর্তী কিশোরগণ অভিযুক্তসহ সোয়াদসহ অন্যান্যদের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে ডিসিষ্ট বকুলকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে।

পুলিশ রিমান্ডে থাকা অভিযুক্ত রাসেল আহম্মেদ সোয়াদ(২১) নিজেকে এবং ঘটনায় জড়িত অপরাপর অভিযুক্তদের বিষয়ে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করলে গত বৃহস্পতিবার  ১১ জানুয়ারী  আদালতে সোপর্দ
করা হলে স্বেচ্ছায় জবানবিন্দ প্রদান করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *