দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে  ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময়

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  আসন্ন  পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  আজ বুধবার  ২৪ জানুয়ারি  সকাল ১১ টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ  অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নতুন সভাকক্ষে  আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, এনএসআই এর প্রতিনিধি, ডিজিএফআই এর প্রতিনিধি, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি  হেলাল উদ্দিন, কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক  মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

সভার শুরুতেই অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বর্ণিত সচেতনতামূলক সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার তদারকি/অভিযান করা হয়ে থাকে।

এ সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পের্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ভোক্তাবৃন্দের সাথে প্রতিনিয়ত সভা সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে আজকের এই মতবিনিময় সভা। তিনি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে এই সভা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

এরপর  অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম ভিত্তিক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব জান্নাতুল ফেরদাউস।

সভার সভাপতি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি সভায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই মতবিনিময় সভা ।

তিনি বলেন, রমজান মাসে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ কতিপয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সে প্রেক্ষিতে এসকল পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জের বিষয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ১১ টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সভায় অবহিত করেন।

তিনি ক্ষেত্র বিশেষে সময়ে সময়ে দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানসহ পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থার কারণে একই পণ্য বিভিন্ন হাতবদলের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। তিনি ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্যতামূলক পাকা রশিদ সংরক্ষণ করা এবং ন্যায্য মূল্যে সঠিকভাবে সঠিক পণ্য বিক্রয় করার কথা বলেন।

তিনি জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে SCMS (Supply Chain Monitoring System) শীর্ষক একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।

আলোচনায় মহাপরিচালক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হিসেবে আর্ন্তজাতিক বাজারের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সমস্যা, লোহিত সাগর দিয়ে পরিবহন সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বলেন। তবে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে দায়বদ্ধতার মধ্যে এনে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে জানান। এছাড়াও তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

আলোচনায় এফবিসিসিআই এর পরিচালক মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা সভায় তুলে ধরেন এবং এ সকল সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও তিনি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন অধিদপ্তরের সার্বিক কাজের প্রশংসা করে বলেন, অধিদপ্তর পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে অধিক গতিশীল ও ভাল কাজ করছে। তিনি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা মন্থর করার জন্য দায়ী অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। এক্ষেত্রে তিনি বলেন অপরাধীর পরিচয় অপরাধী; ব্যবসায়ী নয়। তিনি ব্যবসায়ীদের রমজান মাসে যে কোন ভোগ্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হলে দ্রুত অধিদপ্তরে অবহিত করার অনুরোধ জানান। ভোক্তা স্বার্থে তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আলোচনায় কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার অধিদপ্তরকে সময়োপযোগী এ মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়েও বর্তমানে বেশি দৃশ্যমান। তিনি ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুরোধ জানান। তিনি সকলের সম্মিলিত কার্যক্রমের মাধ্যমে আসন্ন রমজান ভোক্তার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক অংশ গ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা-অধিকার আইন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। মহাপরিচালক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে বাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাঁদের নিউজের জন্য বাজার যেন অস্থিতিশীল না হয় সে বিষয়ে সচেতন হওয়ারও আহবান জানান।

আলোচনা শেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তা সাধারণকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করে বাজারে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান। তিনি সকলের সম্মলিত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ রাখাসহ এ সেক্টরে শৃঙ্খলা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *