যশোর প্রতিনিধি : মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি… মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে অস্ত্র ধরি… গোবিন্দ হালদারের কথা ও আপেল মাহমুদের কন্ঠ ও সুরে এই গানটিকে স্লোগান হিসেবে ধরে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত ফুলের রাজধানী খ্যাত অথবা ফুলের রাজ্য বলে সারা দেশে সুপরিচিত। এজন্য জেলা প্রশাসক’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও উপজেলা প্রশাসন’র আয়োজনে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ৪ দিনব্যাপী ফুল উৎসব শুরু হয় ৩১ জানুয়ারী আর শেষ হয়েছে ০৩ ফেব্রুয়ারী।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর ফুল উৎসবের শুভ উদ্বোধন করার কথা থাকলেও হঠাৎ করে একই দিনে তার দপ্তরিক দুইটা মিটিং হওয়ার তিনি উপস্থিত হতে না পারার কারণে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল।
ফুল উৎসবের আয়োজনের ৩য় দিনে কৃষক সমাবেশ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ৮৬, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মোঃ তৌহিদুজ্জামান তুহিন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রশিদুল আলম, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদ হোসেন পলাশ, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম রেজা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষীসহ আরো অনেকে।
ফুল উৎসবের পরিসমাপ্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রশিদুল আলম, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদ হোসেন পলাশ, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মেজবাহ উদ্দীন, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মোঃ আরব আলী, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার অনিতা মল্লিক, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ঝিকরগাছা জোনাল অফিসের ডিজিএম টিএম মেসবাহ উদ্দিন, ঝিকরগাছা সরকারি এমএল মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আজাদ, ঝিকরগাছা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন চাঁদ, যুগ্ম সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মোড়ল, প্রচার সম্পাদক সুজন মাহমুদ, সহ প্রচার সম্পাদক মিঠুন সরকার, সহ দপ্তর সম্পাদক সুমন হোসেন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক যুগে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বর্তমান প্রজন্মকে চার দেয়ালে আবদ্ধ না রেখে বাড়িতে থাকা দ্বি-চক্রযান নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি ভ্রমণে তারুণ্য, যুব সমাজ ও ভ্রমণ পিয়াসুদের ভ্রমণে উৎসাহ দিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মেলায় ভ্রমণ পিপাসুদের সাড়া মিলছে বেশ। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন ভ্রমণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে চলাচলের জন্য গদখালী থেকে হাড়িয়া ফুল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ফুলের রাজধানী বা ফুলের রাজ্যতে নিত্যদিনই সারাদিন ব্যাপী হাজার হাজর ভ্রমণ পিপাসু জনতার ভিড় বেড়েছিলো। এই ভ্রমণ পিপাসু জনতার জন্য জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এমন ফুলের মেলা দেশের আর কোথাও নেই। এই মেলাকে কেন্দ্র করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আপনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমন কোন কাজ করা যাবে না। বাহির থেকে যে অতিথি বা পর্যটকবৃন্দ আসবে তাদের সাথে সদয় ভালো ব্যবহার করে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে এই এলাকায় আবারও আসার জন্য। সব সময় মনে রাখতে হবে কোন ভালো জিনিস তৈরী করতে অনেক সময় লাগে কিন্তু সেটা নষ্ট করতে বেশি সময় লাগে না।
বৈচিত্রময় এ ফুলের রাজ্যের ফুল উৎসবের সভাপতিত্বে করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের যশোর জেলার ট্যাগে রয়েছে নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা। এটাতে প্রথমেই রয়েছে আমাদের এই ঝিকরগাছার অঞ্চলকে ঘিরে কথাটা এসেছে। আর এই কথাকে ধরেই আমাদের আজকের মেলা। এখানে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হচ্ছে কিন্তু ফুলের বিপন হয়ে আসছে কিন্তু এখানে একটা সমন্বয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন।
আমাদের পাশ্ববর্তী রয়েছে বেনাপোল স্থল বন্দর ও রেল লাইন রয়েছে। আমরা এটা উদ্যোগ নিতে পারি যে ট্রেনে একটা বগি ফুলের জন্য বরাদ্দের। যেটার মাধ্যমে এই অঞ্চলের ফুলে কম সময়ের মধ্যে ঢাকাতে পৌছাতে পারে এবং সেখান থেকে দেশের বাহিরে রপ্তানী করা সহজ হয়ে যাবে। ফুল উৎসবেরর জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট স্পেশাল ভাবে বরাদ্দের আবেদন জানান তিনি।
৪ দিনব্যাপী ফুল উৎসবের প্রথমদিনে কুষ্টিয়ার লালন একাডেমী ও পরবর্তী দিনগুলো উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ কামরুজ্জামান, সরকারি শহীদ মশিয়ুর রহমান ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ফারহানা হক ও উপজেলা পরিষদের সিএ ইমদাদুল হক ইমদাদ।