নিজস্ব প্রতিবেদক : র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাব শুরু থেকে যে কোন ধরনের অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ দাবি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপহরণচক্রকে সনাক্ত, অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতারে সার্বক্ষণিকভাবে নিরলস ও নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
গত ইংরেজী ১৪/০১/২০২০ তারিখে বিদেশ হতে আমদানিকৃত ঔষধের কাঁচামাল শাহ্জালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর হতে নিজস্ব কাভার্ড ভ্যানযোগে ঢাকা ইউনিট স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিঃ, কালিয়াকৈর, গাজীপুর যাওয়ার পথে রাত অনুমান ২১.১৫ ঘটিকার সময় কালিয়াকৈর থানাধীন খাড়াজোড়া সাকিনে মাইক্রোযোগে ঢাকা-টাংঙ্গাইল মহাসড়কের উপর অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিঃ এর ঔষধ তৈরির ২৬৯ ড্রাম কাঁচামাল (গবঃভড়ৎসরহ এবং ঈবভরীরসব ঞৎরযুফৎধঃব) বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যান রাস্তা বেরিক্যাড দিয়ে অস্ত্রের মুখে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে কাভার্ড ভ্যানটি ডাকাতি করে নিয়ে যায়। কাভার্ড ভ্যানসহ ঔষধ উৎপাদনকারী কাঁচামালের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২,৭৪,২৩,৮৪০/- টাকা। এ সংক্রান্তে কালিয়াকৈর থানার মামলা নং-২১ তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ধারা-১৭০/৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কালিয়াকৈর থানা তদন্তভার গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্তে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিঃ এর পক্ষে থেকে ব্যবস্থাপক হেড অফ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট র্যাব সদর দপ্তর বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। র্যাব-৪ এর একটি চৌকষ গোয়েন্দা দল থানার পাশাপাশি মামলাটির ছায়াতদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ^স্থ সোর্স নিয়োগ করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাত দলের সদস্যরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনী যেমন পুলিশ, ডিবি, সিআইডির পরিচয় প্রদান করে ডাকাতি করে আসছে। তারা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মত হ্যান্ডকাপ, রশি, ওয়াকিটকি সেট ও রিফ্লেকটিং জ্যাকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে দূর্ধর্ষ ডাকাতি করে আসছে। উক্ত ডাকাত চক্রের প্রধান পরিকল্পনাকারী অপু রোজারিও। সে ছাড়াও তার দলে আরো ১০/১২ জন সদস্য আছে। সে তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ব্যতিত অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলে না। ডাকাতি কার্যক্রমের সমস্ত পরিকল্পনা সম্পন্ন করে তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের মাধ্যমে আন্যান্য সদস্যদের জানায় এবং তার নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে ডাকাতি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ইং-২৮/০১/২০২০ তারিখ সন্ধ্যা ০৬.০০ ঘটিকার সময় র্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল ডিএমপির কলাবাগান থানাস্থ পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী উক্ত অপু রোজারিও (৬০),জেলা- পাবনাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এর ঔষধ উৎপাদনী কাঁচামাল ডাকাতি করে বলে স্বীকার করে। এছাড়াও তারা গত ০৯/০৮/২০১৮ তারিখে (জয়দেবপুর থানা মামলা নং-৬২/১২৯৬) জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষধ তৈরীর কাঁচামাল একই পন্থায় দীর্ঘদিন যাবৎ ডাকাতি করে আসছে বলে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে আরো জানায় যে, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এর কাঁচামাল ও তার সহযোগী কতিপয় আসামী বর্তমানে রাজশাহী অবস্থান করছে। আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক অদ্য ইং-২৯/০১/২০২০ তারিখ ভোর রাত ০৪.০০ ঘটিকার সময় র্যাব-৪ এর অন্য একটি চৌকষ আভিযানিক দল তাৎক্ষনিক ভাবে রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তার সহযোগী আসামী মোঃ রুহুল আমিন (৩৫), জেলা রাজশাহী ও জামাল হোসেন (৩২), জেলা পাবনাদ্বয়কে গ্রেফতার করেন এবং ধৃত আসামী মোঃ জামাল এর আত্মীয় জনৈক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানাস্থ বাড়ী হতে ডাকাতি হওয়া ৪৯ ড্রাম ঈবভরীরসব ঞৎরযুফৎধঃব ও ১১ ড্রাম গবঃভড়ৎসরহ নামক ঔষধ উৎপাদনের কাঁচামাল উদ্ধার করা হয় যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য গত ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ কালিয়াকৈর থানা পুলিশ এই ডাকাত দলের আরো ০৬ সদস্য গ্রেফতার ও ডাকাতিকৃত মালামালের মধ্যে ১৯৩ ড্রাম গবঃভড়ৎসরহ ও ১৬ ড্রাম ঈবভরীরসব ঞৎরযুফৎধঃব নামক ঔষধ উৎপাদনের কাঁচামাল উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে তারা দীর্ঘদিন যাবত এই ভাবে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় প্রদান করে ডাকাতি পরিচালনা করে আসছিলো এবং তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।