যথাযোগ্য মর্যাদায় অত্যন্ত জাঁকজমক ও উৎসবমুখর পরিবেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৩ এর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

Uncategorized জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  যথাযোগ্য মর্যাদায় অত্যন্ত জাঁকজমক ও উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৩’ এর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  আজ সোমবার  ৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৯ টায় রাজধানী ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবসের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ শুরু হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন, অভিবাদন গ্রহণ এবং বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি সদস্যদের পদক প্রদান করেন।


বিজ্ঞাপন

আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক মূল্যবান ভাষণ প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবিকে একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১,০৩৬ কি.মি.সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৭ কি.মি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সাল হতে এ পর্যন্ত ২৪টি ব্যাচে সৈনিক পদে ৩৫ ,৫১৭ জন এবং অসামরিক পদে ৩,৬৮৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সাল হতে এখন পর্যন্ত বিজিবিতে ৯৯৬ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমান সরকার বিজিবি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা প্রদান, জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবীর সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীতকরণ, অগ্রিম বেতনসহ বাৎসরিক ২ মাসের ছুটি প্রদান, পারিবারিক রেশন ও ৩ বছরের নীচে সন্তানদের পূর্ণস্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদমূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। দূর্গম প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ৫০টি বিওপিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তি স্থাপন করে আইপি টেলিফোনের মাধ্যমে বিওপি হতে বিজিবি সদর দপ্তর ও অন্যান্য স্থানে যোগাযোগসহ বিজিবি সদস্যরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। তিনি শৃঙ্খলার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চেইন অব কমান্ড মেনে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআর এর ৩য় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পিলখানায় এসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালবাসো।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যকে বঙ্গবন্ধুর এই চিরন্তন দিকনির্দেশনা মেনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানামরের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সংঘাতের ফলে বিজিবি’র সদস্যগণও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবুও বিজিবি সদস্যগণ একটি বুলেটও ফায়ার না করে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সহনশীলতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করায় তিনি বিজিবিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধসহ বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বিজিবির দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রসংশা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা, দেশগঠন ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবি’র পেশাদারিত্ব সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ  বিজিবি’র মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ বিশেষ করে নারী সৈনিকদের ড্রিল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বিজিবিতে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।ভাষণ প্রদান শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘প্রেরণা’ এর শুভ উদ্বোধন করেন।

এরপর ডগ মার্চ, ট্রিক ড্রিল, বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা এবং বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্মিলিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *