আজ ইইউ ছাড়ছে যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক

ডেস্ক রিপোর্ট : অবশেষে এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আজ ৩১শে জানুয়ারি, শুক্রবার রাত এগারটায় এ বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা। এর ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘নতুন যুগের’ঘোষণা করবেন।


বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সময় রাত ১০টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলবেন, ‘ব্রেক্সিট শেষ নয়, বরং নতুন কিছুর শুরু’।

জোটের বাকি ২৭ দেশের সঙ্গে যৌথ সম্পর্কচ্ছেদকে ‘সত্যিকারের জাতীয় পুনর্জাগরণ ও পরিবর্তনের মুহুর্ত’হিসেবেও তিনি অভিহিত করবেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

বিবিসি বলছে, শুক্রবার ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গেলেও দুই পক্ষের মধ্যকার এতদিনের বেশিরভাগ চুক্তিই আরও বেশ কিছুদিন বহাল থাকবে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি ‘রূপান্তর কাল’চলবে, এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ইইউ তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা ঠিক করে নেবে; সুযোগ থাকবে আগের সকল চুক্তি পর্যালোচনা ও পরিবর্তনের। এ সময়ের মধ্যেই ইইউ ’র সঙ্গে একটি স্থায়ী অবাধ বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাবে যুক্তরাজ্য।

নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ইইউর আগের আইনগুলোই বহাল থাকবে। এসব আইনের মধ্যে জোটের ভেতরকার সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের অবাধ চলাচলের বিষয়টিও রয়েছে।

লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ব্রেক্সিটের আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউরোপের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্য যেন ‘অন্তর্মুখী’ না হয়ে ‘সত্যিকারের আন্তর্জাতিকতাবাদী, বৈচিত্র্যময় এবং বহির্মুখী’দেশে পরিণত হয় তা নিশ্চিত করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৬ সালের গণভোটে ৫২ শতাংশ জনগণ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেয়ার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বিচ্ছেদ সম্পন্নের তারিখ ঠিক করেছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তেরিজা মে’র সঙ্গে ইইউর চুক্তি পার্লামেন্টে কয়েক দফা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ব্রেক্সিট কার্যকরের এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।

মে পরে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি হিসেবে পরিচিত এ টোরি নেতা কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন ডাকেন। ডিসেম্বরের ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভের পর তার সঙ্গে ইইউর চুক্তিটিও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয়।

ব্রেক্সিটকে স্মরণীয় করে রাখতে শুক্রবার সকালে বরিস জনসন সান্ডারল্যান্ডে একটি মন্ত্রিসভার বৈঠক করবেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। ২০১৬ সালের গণভোটের ফল গণনার সময় সান্ডারল্যান্ডই প্রথম ব্রেক্সিটের পক্ষে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছিল।

এদিকে ইইউ জোটকে ‘আবেগঘন বিদায়’জানাতে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় হোয়াইটহলের সামনে ব্রেক্সিটবিরোধীরা কর্মসূচি পালন করবেন। পরে ব্রেক্সিটপন্থিরা পার্লামেন্ট চত্বরে একত্রিত হয়ে ‘বন্ধনমুক্তি’উদ্‌যাপন করবেন; ডাউনিং স্ট্রিটে একটি ঘড়িতে চলবে বিচ্ছেদের ক্ষণগণনা।

হোয়াইটহলের আশপাশের ভবনগুলোতে থাকবে আলোকসজ্জা। আর পার্লামেন্ট চত্বরের প্রতিটি খাম্বায় উড়বে ইউনিয়ন জ্যাক।

যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রকাশ করা হবে ৫০ পয়সার বিশেষ কয়েন।

ব্রেক্সিটের নির্ধারিত সময়ের পরপরই ব্রাসেলসের ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যুক্তরাজ্যের পতাকা নামিয়ে ফেলা হবে। তবে ইইউ’র জাদুঘরে একটি ইউনিয়ন জ্যাকের স্থান হতে পারে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ ব্রাসেলসের গ্রান্ডে প্লেস আলোকিত হবে লাল, সাদা ও নীল রঙে।

২০১৬ সালের গণভোটে ইইউ’র সঙ্গে থাকার পক্ষে রায় দেওয়া স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে বলে জানা গেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *