রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এসকে এন্ড ট্রায়াঙ্গল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌরিদ আল মাসুদ রনি এবং তার সহযোগি মাহাতাব উদ্দিন চন্দনের সহযোগিতায় আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে জমি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে মো. আবু হানিফ ও রাজশাহী জেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে দায়িত্বপালনকারীদের বিরুদ্ধে।
এনিয়ে আজ সোমবার ১১ মার্চ, দুপুরে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী গ্রীন প্লাজা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, মহানগরীর দড়িখরবোনা এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফের বোয়ালিয়া মৌজার অন্তর্গত ০.০৪৪২ শতাংশ জমি নগর যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনি ও তার সহযোগিদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করেছেন। যার প্রস্তাবিত খতিয়ান নম্বর ৯৭২০, হোল্ডিং নম্বর ৯৮১৪ ও হালদাগ নম্বর যথাক্রমে ৩২৪৫,৩২৪৬ এবং ৩২৪৭। এই কাজে জেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ের কিছু দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তারাও জড়িত।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আমার সাথে আবু হানিফ ২৮/১১/২০২২ এবং ০৫/০১/২০২৩ ইং তারিখে একটি চুক্তিপত্র ও একটি আমমোক্তার নামা নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে সম্পাদন করেন এবং আমার নিকট হইতে মোট দুই কোটি ৩২ লক্ষ টাকা স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে গ্রহণ করেছেন এবং উক্ত তফশীল বর্ণিত সম্পত্তি আমাকে দখলসহ জমির সকল দলিল, বায়া দলিল,খাজনা রশীদ, ডিসিআর রশীদ, প্রস্তাবিত খতিয়ান সহ সকলপ্রকার মূল কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে এসকে এন্ড ট্রায়াঙ্গল রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌরিদ আল মাসুদ রনি নিযুক্তীয় মাহাতাব উদ্দিন চন্দন উক্ত জায়গা পাওয়ার লোভে পেশীশক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে গ্রীন প্লাজা রিয়েল এস্টেট এর সাইন বোর্ড ভাংচুর করে উচ্ছে¡দ করার কুপরিকল্পনা করে এবং পাওনাকৃত দুই কোটি ৩২ লক্ষ টাকা দিতে হবেনা, মামলা-মোকদ্দমা হলে আমরা সব দেখব বলিয়া ভূমি মালিক আবু হানিফ কে প্রলোভিত করিলে আবু হানিফ প্রলোভিত হইয়া যোগসাজশে তাদের কুপরিকল্পনায় লিপ্ত হয়ে আমাকে ‘জায়গা ও টাকা দিবে না, দলিল কিভাবে উঠাতে হয় সে ব্যবস্থা করব’ বলে সাফ জানিয়ে দেয়। সেই সময় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা নং- পি-১২৬৬/২০২৩ দায়ের করিলে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত তফশীল বর্ণিত সম্পত্তির ওপর ১৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি হয় যা অদ্যবধি চলমান রহিয়াছে। পরবর্তীতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা নং- ২১৮/২০২৩ দায়ের করিলে ধার্য্য তারিখ আগামী ২১/০৫/২০২৪ ইং যাহা অদ্যবধি চলমান। উক্ত মোকদ্দমায় তফশীল বর্ণিত সম্পত্তির সকল দলিল, বায়া দলিল, খাজনা রশীদ, ডিসিআর রশীদ, প্রস্তাবিত খতিয়ান সহ সকলপ্রকার মূল কাগজপত্র দলিলাদি ফিরিস্তিযোগে বিজ্ঞ আদালতে জমা রহিয়াছে। আমার প্রদানকৃত অর্থ ফেরৎ দিতে অস্বীকার করিলে বিজ্ঞ আমলী আদালত বোয়ালিয়া সি আর নং ১৩৫৫/২০২৩ মামলা দায়ের করি। এবং পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে বিজ্ঞ আদালত তাকে গত ২৮/১২/২০২৩ ইং তারিখে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করলে ০৭/০৩/২০২৪ ইং তারিখে রোজ বৃহস্পতিবার আসামী আবু হানিফ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন ধার্য্য তারিখ ১৩/০৩/২০২৪ ইং পর্যন্ত জামিন প্রাপ্ত হন।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায়, অসদুপায়ী গ্রহীতা এসকে এন্ড ট্রায়াঙ্গল রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌরিদ আল মাসুদ রনি এবং অসদুপায়ী দাতা ভূমিমালিক আবু হানিফ কর্তৃক বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করিয়া যোগসাজশে গত বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ সন্ধ্যা আনুমানিক ৮ টার সময় জেলখানা থেকে জামিনে বের হয়ে গত শনিবার ৯ মার্চ ডিসিআর সহ সমস্ত প্রকার মূল দলিলপত্র বিজ্ঞ আদালতে সংরক্ষিত থাকাবস্থায় কমিশনে রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করিয়া বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার করেন। বিধায় প্রার্থণা এই যে, ‘বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ ভঙ্গ করে গত শনিবার ৯ মার্চ সম্পাদিত চুক্তিপত্র ও আমমোক্তার নামা দলিলের সকল প্রকার কার্যক্রম’ বন্ধ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করিতে আপনার সদয় মর্জি হয়।
জানতে চাইলে অভিযোগকারী মোস্তাফিজ বলেন, ‘আবু হানিফ আমার সঙ্গে চুক্তি করে টাকা নিয়ে সে যুবলীগ নেতার সঙ্গে আতাত করে এবং সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করেন। আমার দলবল নেই। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এতে প্রতারক আবু হানিফ কারাভোগ করে। কয়েকদিন আগে সে জামিনে বের হয়ে যুবলীগ নেতা রনি ও তার দলবল নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যা হুমকিসহ রাজশাহী থেকে বের করে দেবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও হানিফ ও তার ছেলে আমার প্রজেক্টে এসে যুবলীগের দলবল নিয়ে ভাংচুর করেছে। আমার লোকজনকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আমার গাড়ীর পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন দড়িখড়বোনা মোড়ে। এ কারণে আমি র্যাব, পুলিশ, আদালতে তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা জনিত বিষয়ে অভিযোগ করেছি। আদালতের আইন অমান্য করে তারা জালিয়াতি করায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানান জন্য আবু হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একই অভিযোগে অভিযুক্ত নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘তার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে আমার মতো কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ী কখনও ওই জায়গায় ইনভেস্ট করে! তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞাই নাই। এসব তার (অভিযোগকারী মোস্তাফিজের) মনগড়া কথা।’
জেলা সাব-রেজিস্টার শফিকুর রহমান বলেন, ‘আদালতের আদেশ অমান্য করে এমন কাজ করলে তা ন্যায়সঙ্গত হবে না। আর এমন ঘটনা আমার জানা নেই। আমি বাইরে আছি। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছে থেকে জানতে পারলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমার দপ্তরে দু’জন সাব-রেজিস্টার আছেন- মোস্তাফিজুর রহমান ও নকিবুল ইসলাম। এদের কেউ এ কাজ টা করতে পারেন। তাদের জিজ্ঞেস করুন। তারা ভালো বলতে পারবেন।’