নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ শুক্রবার ১৫ মার্চ “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি”প্রতিপাদ্যে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০২৪’, এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার)(অতিঃ দাঃ) আতিয়া সুলতানা। উক্ত অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, এমপি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন, এমপি ও সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব আমিন হেলালী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রধানগণ, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যগণ, অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সকল উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, অংশীজনসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশ স্কাউটস-গার্লস-গাইডের সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজার কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, ঢাকায় সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটের সময় কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করা হয়। পরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভাটি অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জনাব আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, সভাপতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিসহ উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল, CCMS (Consumer Complaint Management System) শীর্ষক সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি, SCMS (Supply Chain Monitoring System) শীর্ষক সফটওয়্যারের মাধ্যমে পণ্যের অবৈধ মজুদ পরিস্থিতি তদারকি বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। তিনি ব্যবসায়ীদের আইন মেনে যৌক্তিক মূল্যে ব্যবসা পরিচালনা করার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ ভোক্তাবান্ধবের পাশাপাশি ব্যবসায়ীবান্ধবও বটে। পরিশেষে তিনি সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।এরপর অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনায় ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষের জীবন মানের উপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে। পাশাপাশি সরকার টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের ১ কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে সরবরাহ করছে। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সচেতন হওয়ার কথা বলেন। তিনি ভোক্তা স্বার্থে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।
এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ১৫ বছর পূর্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়ে শুরু করে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি খাত, ভোক্তা, গণমাধ্যমসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি স্কুল পর্যায় থেকেই ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার কথা বলেন। পণ্যের অযাচিত মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
আলোচনায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সকল সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চলমান বাজার তদারকির পাশাপাশি ব্যবায়ীদের সচেতন করার লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম এর কথা বলেন৷ এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সুপারশপ কর্তৃক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীগণ ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা করলে সরকার ব্যবসায়ী স্বার্থ বিবেচনায় কাজ করবে। তিনি জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে আমদানি করা ৫০০০০ টন পিঁয়াজ আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসবে এবং তখন সাধারণ ভোক্তা এর সুফল পাবে। এছাড়াও সরকার টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা,চিনি ও খেজুর সরবরাহ করছে এবং তা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা কমানোর মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, যার শতভাগ সফলতা এখন দৃশ্যমান; আমরা এগিয়ে চলছি স্মার্ট বাংলাদেশের পথে। পরিশেষে তিনি সকলের সমন্বিত সহযোগিতায় স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে মিলবে ভোক্তার স্বস্তি এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সকলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এরপর পণ্যের অবৈধ মজুদ পরিস্থিতি তদারকি বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত SCMS (Supply Chain Monitoring System) শীর্ষক সফটওয়্যারের পাইলটিং পর্যায়ে উদ্বোধন করা হয়। ‘ভোক্তা বাতায়ন-২০২৪’ শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণমাধ্যমসহ ৪ টি পর্যায়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ব্যবসায় উত্তম চর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ৪ জন ব্যবসায়ীকে বেস্ট প্র্যাকটিস সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সমাপনী বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বাজারের অসম প্রতিযোগিতা ঠেকাতে অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন, আমদানিকারী, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের, বাজার সমিতিসহ সকলের ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করে বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখবেন-এ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।