ডলারের মুল্য বৃদ্ধি ও ঔষধের কাঁচামালের মুল্য বৃদ্ধি সহ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে ধাপে ধাপে  বাড়ছে ঔষধের দাম : ঔষধ শিল্প মালিকের স্বার্থে কাজ করছে খোদ ঔষধ প্রশাসন 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন। অপরদিকে ডলার ও ঔষধের কাঁচামালের মুল্য বৃদ্ধিসহ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের  অজুহাতে কয়েক দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সব কোম্পানির প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম। নতুন করে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আবারও প্রায় সব ধরনের ঔষধের দাম বাড়ানোর জন্য নতুন প্রস্তাবনা জমা পড়ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে। এমনিতেই ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাভিশ্বাস। রোগীর চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়ছে। এরমধ্যেই ঔষধ কোম্পানির মালিক পক্ষ ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানোর পায়তারা করা সহ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধের মুল্য নির্ধারণ কমিটির কতিপয় কর্মকর্তার কাছে দেনদরবার সহ বিভিন্ন প্রকার প্রলোভনে প্রলুব্ধ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এমনিতেই অদৃশ্য কারনে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ওষুধের দাম। গত সাত দিনে অ্যান্টিবায়োটিক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ভিটামিন, ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন এবং ইনজেকশনসহ অন্তত ১৬টি ওষুধের দাম বেড়েছে। এই সময়ে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত আড়াই মাসের ব্যবধানে অন্তত ১২০ ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। এর ফলে তাতক্ষনিক ভাবে লাভবান হয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একটি সিন্ডিকেট।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের স্টক হোল্ডারের একটি সুত্রের দাবি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট  ঔষধের মুল্য নির্ধারণ,ঔষধের রিসাইপি অনুমোদন, ঔষধের ব্লক লিস্টের অনুমোদন, ঔষধের কাঁচামাল আমদানির অনাপত্তিপত্র, ঔষধের উৎপাদন লাইসেন্স নবায়ন, ঔষধ কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন, পরিদর্শন টিম গঠন, পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল, নতুন ঔষধ কোম্পানির প্রকল্পের পূর্ব অনুমোদন এবং প্রকল্পের অনুমোদন,( এলোপ্যাথিক,আয়ুর্বেদিক,ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল ঔষধ কোম্পানি),হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানির অনুকূলে ইথাইল এলকোহল আমদানির অনাপত্তিপত্র, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আমদানির অনাপত্তিপত্র, এলোপ্যাথিক ঔষধ আমদানির অনাপত্তিপত্র প্রদান সহ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল নিয়োগ ও বদলিতে চিহ্নিত চট্টগ্রাম ভিত্তিক  ওই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অনেকেই আজ দিশেহারা, চিহ্নিত চট্টগ্রাম ভিত্তিক  ওই সিন্ডিকেট এর রোষানলে পড়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনেকেই আজ কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মতো দেশের ওষুধের বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। কোম্পানিগুলো যখন-তখন ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সিন্ডিকেটের কারণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এদিকে ওষুধের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের অভিযোগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। তার মধ্যে ওষুধের দামেও ঊর্ধ্বগতি। ফলে আয়ের বড় অংশই ওষুধ কেনায় ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।

তারা বলছেন, সাধারণত ক্রেতাদের প্যাকেটভর্তি ওষুধের প্রয়োজন না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা প্যাকেটের গায়ের দাম দেখার সুযোগ পান না। এ ছাড়া অন্য পণ্যের মতো ওষুধের দাম সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় দামাদামির ঘটনাও নেই। দোকানি যে দাম চাইছে সে দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন,একদিকে ঔষধের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অপরদিকে ডলারের মুল্য বৃদ্ধি সহ রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাতে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যা খুবই অনৈতিক। এ বিষয়ে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াসহ মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি এসেনশিয়াল ড্রাগের (জীবনরক্ষাকারী ওষুধ) ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে ২১৯টি। তার মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

সরেজমিন বিভিন্ন ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রস্রাবজনিত সমস্যায় ব্যবহৃত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ইউকল ২ এমজি ট্যাবলেট ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে এক বক্স ৬০টির দাম ১৮০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং টনসিলাইটিসের জন্য ব্যবহৃত একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ৫০০ এমজির অ্যাজিন ক্যাপসুল প্রতি পিস ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। এক পাতার ৬টির দাম ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ২২ শতাংশ। হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের রোজিথ প্রতি পিস ক্যাপসুল ৩০টাকা থেকে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। এক পাতা ৬টির দাম ১৮০ থেকে বেড়ে ২১০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
দেশ ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০০ এমজির অ্যাজিলেট প্রতি পিস ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। ৬টির এক পাতা ১৮০ থেকে বেড়ে ২১০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এসি আই লিমিটেড কোম্পানির সেফিম-৩ ডিএস সাসপেনশন ৫০ এমএল বোতল ২৮১ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা করা হয়েছে। বেড়েছে একই কোম্পানির গ্যাবারোল ৭৫ মিলি গ্রামের এক প্যাকেটের ৩০টি ক্যাপসুল ৫২৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বেক্সিমকোর টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধ ট্রানেটা ২.৫/১০০০ প্রতি পিস ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। একবক্স (২০ টি) ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ১৫ শতাংশ। একই কোম্পানির হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত রসুটিন ২০ মিলি গ্রামের প্রতি পিস বেড়েছে ২ টাকা করে। একবক্স ৩০টির দাম আগে ছিল ৯০০ টাকা। তা এখন বেড়ে ৯৬০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। অ্যাজমার সমস্যায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মনোকাস্ট ১০ এমজি প্রতি ক্যাপসুল বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা করে। যা আগে ছিল ১৫ টাকা। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ম্যাক্সরিন ০.৪ মি.গ্রা. ক্যাপসুল প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এক পাতা ১০টির দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। বেড়েছে ২০ শতাংশ। ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের ইউরোম্যাক্স ০.৪ মি.গ্রা. ক্যাপসুলের দাম প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বক্স ৩০টির দাম ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা করা হয়েছে। বেড়েছে ২০ শতাংশ। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যথানাশক এরিয়ান অয়েনমেন্ট ১৫ গ্রাম টিউবের মূল্য ৭০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা করা হয়েছে। একই কোম্পানির ফাইলোপেন ডি এস ক্যাপসুল প্রতি পিস ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা করা হয়েছে। স্কয়ারের এরোমাইসিন পেডিয়েট্রিক ৬০ এমএলের ড্রপ ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা হয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের অ্যান্টাসিড প্লাস ২০০ মিলিগ্রামের সাসপেনশন সিরাপের দাম ৭৫টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে। এরিস্ট্রো ফার্মা লিমিটেডের অ্যাভোল্যাক ওরাল সল্যুসন ১০০ এমএল ১৭৬ টাকা থেকে ২০০ টাকা হয়েছে। যা রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।

দোকানিরা বলছেন, এই ওষুধ গত এক বছরের মধ্যে চার দফায় দাম বেড়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম কয়েক মাস ১২০ টাকা ছিল। পরে ১৫০ টাকা করা হয়। এক সপ্তাহ আগে ১৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে তা এখন ২০০ টাকা করা হয়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতাল মোড়ের এক ফার্মেসি মালিক বলেন, ‘নতুন বছরে অনেক ওষুধেরই দাম বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ওষুধের দাম বাড়ছে। আমরা আগে যে মূল্যে ওষুধগুলো কোম্পানি থেকে কিনতাম, তা এখন বেড়েছে দ্বিগুণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ গুণ দামও হয়ে গেছে। ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীরা যেমন কষ্টের মধ্যে আছেন তেমনি আমরাও সমস্যায় আছি।

ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মুক্তাদির গণমাধ্যম কে জানান, ‘ওষুধের সব কাঁচামাল বিদেশে থেকে আমদানি করতে হয়। এর খরচ ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে। এক সময় ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। তা এখন বেড়ে অফিসিয়ালি ১১০ থেকে ১১১ টাকা হয়েছে। আমরা ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে ১১৯ থেকে ১২০ টাকায় ডলার কিনছি। স্বাভাবিকভাবেই ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহনসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পর্যায়ক্রমে ওষুধের দাম বিন্যস্ত করা হচ্ছে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যম কে জানান , ‘আমাদের দেশে এমনিতেই ওষুধের দাম অনেক বেশি। কোনো কারণ ছাড়াই ওষুধের দাম বাড়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ গণমাধ্যম কে জানান,‘অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের দাম এক পয়সাও বাড়েনি। তবে যেসব পণ্য আমরা বিদেশ থেকে আনি, সেগুলোর দাম বেড়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছু সমন্বয় করা হয়েছে। তবে বেশি বাড়তে দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি গণমাধ্যম কে জানান , ‘ওষুধ কিনতে এসে ক্রেতারা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন দাম কেন বেশি? কিন্তু দাম তো ফার্মেসি মালিকরা বাড়ায়নি, বাড়িয়েছে কোম্পানি। এমআরপি রেট বাড়ালে আমাদের করার কিছুই থাকে না। ঔষধ প্রশাসনের উচিত ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্য সবকিছুর সঙ্গে বাজার ও ভোক্তার কথা মাথায় রাখা।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হু হু করে বাড়ছে জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। এই দৌড়ে পেরে উঠছে না মানুষ। দেশের শীর্ষ ছয় প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারে অনেক ওষুধ বেশি দামেও কেনাবেচা চলছে। এক্ষেত্রেও দাম বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে কোম্পানিগুলো বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ সরবরাহ সমস্যা, মোড়ক, পরিবহন, বিপণন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আকস্মিক দাম বাড়ালে অনেক রোগী ওষুধ কিনতে পারবে না। আর ডোজ সম্পূর্ণ না করলে শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দাম নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকা ধরে দেশে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বড় করা উচিত। যেটির মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে। বাকিগুলো বিক্রিতে নীতিমালা অনুসরণে বাধ্য করতে হবে। সব ওষুধের দর সরকার নির্ধারিত ফর্মুলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’

ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, আগে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে ডলারের দাম পড়ত ৮০ টাকা। এখন ডলারের দাম পৌঁছেছে ১২০ টাকায়। প্রাইস পলিসি মোতাবেক প্রত্যেক বছরের বাজারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে এমআরপি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু ২০ বছরেও তা করা হয়নি। এতদিন আর্থিক ক্ষতি হলেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আপত্তি করেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও চড়া। এখন কিছু ওষুধের দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমআরপি প্রোডাক্টের কিছু দাম বেড়েছে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল স্টক হোল্ডার ও সচেতন মহলের দাবি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (ঔষধ প্রশাসন শাখা) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা গোপনে ছদ্মবেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধের মুল্য নির্ধারণ,ঔষধের রিসাইপি অনুমোদন, ঔষধের ব্লক লিস্টের অনুমোদন, ঔষধের কাঁচামাল আমদানির অনাপত্তিপত্র, ঔষধের উৎপাদন লাইসেন্স নবায়ন, ঔষধ কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন, পরিদর্শন টিম গঠন, পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল, নতুন ঔষধ কোম্পানির প্রকল্পের পূর্ব অনুমোদন এবং প্রকল্পের অনুমোদন,( এলোপ্যাথিক,আয়ুর্বেদিক,ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল ঔষধ কোম্পানি),হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানির অনুকূলে ইথাইল এলকোহল আমদানির অনাপত্তিপত্র, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আমদানির অনাপত্তিপত্র, এলোপ্যাথিক ঔষধ আমদানির অনাপত্তিপত্র প্রদান সহ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল নিয়োগ ও বদলির নথিপত্র যথাযথ ভাবে যাচাই করলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চিহ্নিত চট্টগ্রাম ভিত্তিক  ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সকল অপকর্মের রহস্য উম্মেচিত হবে বলে ধারণা পোষণ করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *