কুমিল্লায় শারীরিক প্রতিবন্ধীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে রং মিস্ত্রিকে মৃত্যুদণ্ড

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, (কুমিল্লা) :  কুমিল্লার চান্দিনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী গুলশান আরার সহিত অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক জনিত কারণে গুলশানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে মোঃ মুকবুল হোসেন নামের এক রং মিস্ত্রিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আফরোজা শিউলী এ রায় দেন। মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার রানীচড়া (নয়াকান্দি) গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে।


বিজ্ঞাপন

মামলার বিবরণে জানাযায়- ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় চা আনার জন্য দোকানে গিয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসায় তাঁর স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজির একপর্যায়ে পাশের বাড়ীর আফসানা (৮) ধৈনছা ক্ষেতে গুলশানের মরদেহ দেখতে পেয়ে শোর চিৎকার দিয়ে গুলশানের স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত দেহ পড়িয়া থাকতে দেখে চান্দিনা থানাপুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।

সূত্রে আরও জানা যায়- শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিকটিম গুলশান আরা (২৫) এর সহিত আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন (৩৫) এর অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক জনিত কারণে গর্ভবতী হওয়ায় তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন তা প্রত্যাখান করে এবং ঘটনারদিন ভিকটিম গুলশান আরাকে বাড়ী হতে ডেকে গুলশানের বাড়ীর পূর্ব পাশে তাজু মিয়ার ধৈনছা ক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের বাবা কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার রানীচড়া (নয়াকান্দি) গ্রামের মৃত আঃ রব এর ছেলে মোঃ শরীফ (৬২) বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট দণ্ডবিধির ৩০৪/৩৪ ধারার বিধানমতে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার দাস মামলার ভিকটিম নিহত গুলশান আরা (২৫) এর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ঘটনার ১৮দিন পর একই গ্রামের মনুমিয়ার ছেলে আসামি মোঃ মুকবুল (৩৫) কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করিলে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ ঘটনার তদন্তপূর্বক আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বিধানমতে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি  আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন (যাহার নং-১৭)। তৎপর মামলাটি বিচারে আসিলে ২০১৬ সালের ২রা অক্টোবর সংশ্লিষ্ট ধারায় চার্জ গঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে ১৪জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। সেই সাথে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। রায়ে আসামির মৃত্যু দণ্ডাদেশ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়ায় পর্যন্ত ফাঁসি রুজ্জুতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশ থাকে যে, আসামি মোঃ মুকবুল হোসেন ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট হতে অধ্যাবদি জেল হাজতে আটক রয়েছে। আরও জানা যায়- ভিকটিম গুলশান আরা তার চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে গুলশান আরা (২৫), শারমিন (২০) ও আবু সাঈদ (৩০) জন্মলগ্ন থেকে প্রতিবন্ধী।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্র পক্ষে বিজ্ঞ কৌশলী অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোঃ নেয়ামত উল্যাহ চৌধুরী (জামান) বলেন- আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *