চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার অপরাধের আখড়া

Uncategorized অপরাধ চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি  :  খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড এলাকা এখন চিহ্নিত অপরাধ আখড়ায় পরিনত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সেখানে খুন, ধর্ষণ, মাদক, ক্যাসিনো জুয়া, জাল ডলার ও তক্ষক বাণিজ্যের নিরাপদ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আছে পদে পদে প্রতারণা আর কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া তাণ্ডব। এসব ক্ষেত্রে বরাবরই পুলিশের ঢিলেঢালা অবস্থান থাকার কারণে চিহ্নিত অপরাধীরা দিন দিনই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


বিজ্ঞাপন

পুলিশ বলছে, সেখানে অপরাধ অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গেলেই ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা বাধা হয়ে দাড়ায়। কিন্তু এ ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, তক্ষক ও জাল ডলার প্রতারণা চক্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাওয়ার কারণে পুলিশ ৯ নং ওয়ার্ড এলাকাকে অপরাধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সেখানে টহল পুলিশ পর্যন্ত ঢুকে না। কোনো অপরাধ সংঘটনের খবর দেয়া হলেও পুলিশ রসুলপুর এলাকায় ঢুকতে গড়িমসি করে থাকে। যে কারণে সাধারণ মারামারির ঘটনাতেও ভুক্তভোগিরা ট্রিপল নাইনে ফোন করে তবেই পুলিশের নাগাল পান বলে জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অতিসম্প্রতি রসুলপুর এলাকায় সৈনিক লীগের সভাপতিকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক করা হয়। কিন্তু দুর্বল পুলিশ প্রতিবেদনের সুযোগে ওই নেতা কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে এসেই ইয়াবার বড় চালানদার হয়ে উঠেছেন। তার সঙ্গে পুলিশের এখন গলায় গলায় পীড়িত। ওই নেতাই এখন রসুলপুরের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছেন।

রসুলপুর, মুসলিম পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় দুই ডজনেরও বেশি তক্ষক প্রতারকের সরব অবস্থান রয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত তক্ষক ক্রেতাদের আনাগোণা দেখতে পাওয়া যায়। সংঘবদ্ধ তক্ষক চক্র প্রায়ই ক্রেতাদের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে তাদের মারধোর করে বিভিন্ন বাড়িঘরে আটক করে রাখে। পরে তাদের স্বজনদের থেকে বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তবেই ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগিরা নতুন করে ঝক্কি ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে যায় না বলে জানা গেছে। ইদানিং তক্ষক প্রতারকদের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে রসুলপুরের জাল ডলার চক্র। উভয়চক্রের মূল হোতারা থানার তালিকাভুক্ত অপরাধী হওয়া সত্তেও অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে বুক ফুলিয়ে বিচরণ করে থাকে।

সব মিলিয়ে মাত্র ৩০/৩৫ জন চিহ্নিত অপরাধীর কাছে গোটা ৯ নং ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বাসিন্দা জিম্মী হয়ে আছে। এ অপরাধীরাই এলাকার বিচার আচার থেকে শুরু করে সমাজ কমিটি পর্যন্ত পরিচালনা করে থাকে। তারা অস্ত্রশস্ত্রে বলিয়ান ও সংঘবদ্ধ থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করতেও সাহস পায় না।

রসুলপুরের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং ও ক্যাসিনো জুয়ারও ব্যাপক দৌরাত্ম্য রয়েছে। রিকসা-ভ্যান চালক, খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝেও ক্যাসিনো খেলার ধুম লক্ষ্য করা যায়। পাড়ার মোড়ে মোড়ে, দোকানপাটের সামনে ক্যাসিনো জুয়াড়িদের ভিড় লেগেই থাকে। এসব ব্যাপারে পুলিশের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর ক্ষুদে জুয়াড়িদের অহরহ চুরি চামারির ধকল পোহান বাসিন্দারা।

অপরাধ আখড়া ৯ নং ওয়ার্ড এলাকায় মাত্র দুই বছরে অন্তত চারটি নৃশংস হত্যাকান্ড, তিনটি ধর্ষণ, প্রায় বিশটি জবর দখল, ছয়টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ঘটনা পুলিশি মধ্যস্থতায় মিটমিমাংসা করারও অভিযোগ রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *