রাজধানীর কদমতলীতে দফায় দফায় হামলা সংঘর্ষ

Uncategorized অপরাধ ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

খোরশেদ আলম সীমান্ত :  রাজধানীর কদমতলী থানার শ্যামপুর এলাকায় মদ্যপ সেলিম-পারুল-মনছুর-জনি সিন্ডিকেটের হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া সাখাওয়াতের জন্য বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদ মিছিলে পুন: হামলার ঘটনায় আহত সেলিমের মৃত্যু নিয়ে পাল্টা মামলা এবং এলাকায় মাদক বিক্রয় ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বজায় রাখার নতুন নীল নঁকশার গুরুতরো খবর পাওয়া গেছে। যেকোন সময় আরেটি অনভিপ্রেত ঘটনার আশংকায় ভুগছে শ্যামপুর এলাকাবাসী।


বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কদমতলী থানায় ভূক্তভোগী গোলজার হোসেনের দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ০৩ এপ্রিল ২০২৪ইং রাত ৯টার দিকে তার কনিষ্ঠভ্রাতা সাখাওয়াত হোসেন(৫০) ব্যবসায়িক টাকা লেনদেন ও ঔষদ কেনার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী কাজী ফয়সাল মাসুমসহ শ্যামপুর হাইস্কুল সংলগ্ন রিফাত ফার্মেসীতে যান। এ সময় পূর্ব থেকে অনুসরণ করতে থাকা নতুন শ্যামপুরস্থ ১০০ নং বাসার সেলিমের স্ত্রী ও পুত্র যথাক্রমে পারুল বেগম(৫২) ও ফয়জুল হোসেন জনি, মুসা (২২), মৃত হোসেন আলীর পুত্র মনছুর আহমেদ(৫০)সহ আরো কয়েকজন ফার্মেসীর কাছে তাদের গতিরোধ করে। উস্কানী মূলক গালিগালাজের সাথে সাথে তাদের উপর হামলে পড়ে। সাখাওয়াত হোসেন তাদের কিলঘুষিতে রাস্তায় পড়ে যান। ফয়জুলের চাপাতির আঘাতে মাথায় মারাত্মক জখম হন। সাখাওয়াত হোসেন প্রাণে বাঁচতে তার আঘাত প্রতিরোধের সময় তার বাম হাতের ৪টি আঙ্গুলও জখম হয়। সন্ত্রাসীরা এ সময় লাখ টাকামূল্যের স্বর্নের চেইন ও ব্যবসার ২ লাখ টাকা ছিনতাই করে। সাথে থাকা প্রতিবেশীকেও টেনে হিঁচড়ে শার্ট ছিঁড়ে মারধর করে। শরীরের নানান স্থানে রক্তাক্ত জখম হওয়া সাখাওয়াতের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে বেগতিক দেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে গুলজার হোসেন দ্রুত সাখাওয়াতকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।


বিজ্ঞাপন

এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কুখ্যাত মদ্যপ এবং নানান অপরাধের হোতা হিসেবে পরিচিত মদুট্টি সেলিম ওরফে জুয়ারু সেলিম ওরফে সেলিমের স্ত্রী পারুল, শ্যালক মনছুর, পুত্র ফয়জুল হোসেন জনির নেতৃত্বে সাখাওয়াতের উপর হামলার খবরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন যাবত সেলিম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই এ খবরে ফুঁসে উঠেন। ফলে এলাকাবাসী, গোলজারের আত্মীয়-স্বজন ও ক্ষতিগ্রস্থরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে থাকে। এ সময় সেলিম তার স্ত্রী, পুত্র ফয়জুল শ্যালক মনছুরসহ তার সিন্ডিকেটের লোকজন নিয়ে বিনা উস্কানিতে প্রতিবাদ কারীদের উপর আক্রমন শুরু করে। প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজেও সেলিম কর্তৃক সবার আগে আঘাত করার ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তীব্র বচসা আর হাতহাতির মাঝে নিজের লোকজনের আঘাতেই মদ্যপ অবস্থায় থাকা টালমাটাল সেলিম আহত হয়। পুরো ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আহত সেলিমকে হাসপাতালে পাঠিয়ে তদীয় স্ত্রী পারুল বেগমকে বাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির সেলিম ও পারুল মনছুর তাদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে শাখাওয়াত হোসেনের গুরুতরো জখম হওয়ার ঘটনার মামলার আগেভাগে তাদের অভিযোগটি দায়ের করে। অন্যদিকে নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঘটনার ৩দিন পর অর্থাৎ গোলজার হোসেন বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়েরে সক্ষম হন।

ভূক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হলেও কোন অজ্ঞাত কারণে ০৯-০৪-২০২৪ইং সেলিম হাসপাতাল থেকে পলাতক হয়ে যায়। এরপর অসুস্থতা বেড়ে গেলে সেলিমকে গোপনে স্থানীয় পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সে মৃত্যুবরণ করে। পোস্টমর্টেমসহ আনুসঙ্গিক রিপোর্ট আসার আগেই গোটা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সেলিমের শ্যালক, পুত্র ও স্ত্রী ভয়ংকর এক খেলায় মেতে উঠেছে। জামিনে থাকা স্বত্বেও এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কুখ্যাত জনি, মনছুর-ফয়জুল-পারুল গং কর্তৃক কলাপসিবল গেট এবং কয়েক দফায় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়েছে। নানানভাবে প্রতিপক্ষকে হুমকী ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এদিকে গত ২১-০৪-২০২৪ইং সাখাওয়াত পরিবারের সদস্য মাসুমের স্ত্রী ও শ্বশুড়িদের ১নং জনি (৪০) পিতা: সেলিম মিয়া,২নং মুসা (২২) পিতা অজ্ঞাত, ৩নং মনছুর (৫০) অজ্ঞাত তারা সংঘটিত হয়ে হাইস্কুল রোড দ্বয় বাসায় এসে মারধর করে এবং ভয়ভীতি হুমকি অনরবত দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যপারে তাদের বিরুদ্ধে ২২-০৪-২০২৪ইং তারিখে কদমতলি থানায় একটি জিডি করে খাদিজা, যাহার নং -১২৬৬
এদিকে সেলিম সম্পর্কে জানতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে- জীবনের প্রথম দিকে ডাকাতির সাথে জড়িত সেলিম পোস্তাগোলাস্থ রাজাবাড়ি এলাকায় থাকাকালীন চুরির দায়ে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়।

তার শ্যালক মনছুর ও আরেক খালাত শ্যালকের সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের তান্ডবে এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্থ থাকতো।১৯৯৬ সালে অপারেশন ক্লিহার্টের হাতে এরেষ্ট হয় সেলিম। এ মর্মে শ্যামপুর থানায় মামলা হয়। অন্যদিক জনৈক ফুলতারা বিবি মদ্যপ সেলিমের জীবন নাশের হুমকীতে শ্যামপুর থানায় ৮৪, ১৫/৩/২০০৩ জিডি করেন। ফুলতারা বিবির পুত্রকে মারধরের মামলা নং ২২, তারিখ১৬/৩/২০০৩ রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে তৎকালীন পঞ্চায়েত কমিটির কাছে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকার করা সেলিমের শ্যালক মনসুরের বিরুদ্ধে শামপুর থানায় ৩১(২২-৪-২০০৪) এবং ০২(০২-০৫-২০০৪) মর্মে ২ টি হত্যা মামলা রয়েছে। চাঁদাবাজি ও বাসায় অনুপ্রবেশ করে গুরুতরো জখমের দায়ে জনৈক আবুল কাশেম সেলিমের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় মামলা দায়ের করেন যার নাম্বার-২৪, তারিখ- ১৭-০৫-২০০৪, সেলিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে থাকা মনছুর এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। জনৈক নুরজাহানের জিডি নং- ৭৯৯, তাং-১৭-২-২০০৪, দুলাল কর্তৃক জিডি নং- ১৫১৯,তাং- ২৯-০১-২০০৪, মো: হাসান আলী কর্তৃক জিডি নং- ৮৪১, তাং- ১৭-৩-২০০৪।

সুত্রটি আরো জানায়, গত ৭-১০-২০২৩ইং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারসহ কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সমন্বয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাং এর পৃষ্টপোষকতাকারী মো: সেলিম, তার শ্যালক মনছুর, সেলিমের পুত্র জনি, মুছাসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করায় আহত সাখাওয়াত হোসেনকে মেরে ফেলার হুমকী প্রদানকারী অডিও রেকর্ডও রয়েছে। এ মর্মে জিডি নং- ৫০২, তাং- ৮-১০-২০২৩ইং, সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করায় এলোপাথারি মারধরের ঘটনায় মামলা নং- ২০, তাং- ১০-৩-২০২৪ইং। অত্র মামলার স্বাক্ষীকে মসজিদে হুমকী ও আহত করার ঘটনায় জিডি নং- ১৮১৬, তাং- ২৭-৩-২০২৪ইং।

উপরন্তু এলাকায় শান্তি শৃংখ্যলা বজায় রাখতে এলাকাবাসী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর একটি পত্রের মাধ্যমে আলোচ্য সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা মাদকসেবী সেলিম-মনছুর গংদের বিরুদ্ধে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেছেন।
এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীরা জানান, মদ্যপ সেলিমের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী পারুল, পুত্র জনি এবং শ্যালক মনছুর গোটা মাদক ব্যবসার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। সেলিমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।

প্রশ্ন উঠেছে বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজীসহ নানান সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত রাখা সেলিম-পারুল-মনছুর-জনি গংদের শক্তির উৎস কোথায়? কে তাদের মদদ দিচ্ছে? মামলায় নিজেকে আহত দেখানো সেলিম ঢাকা মেডিকেল থেকে পলায়ন করল কেন? মদ্যপ সেলিম স্থানীয় পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হলো কেন? সেলিমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পারুল-মনছুর-জনি গং তার দায় প্রতিপক্ষের উপর চাপিয়ে এলাকার আধিপত্য বজার রাখার অপকৌশল কি আইনের আওতার বাইরেই থেকে যাবে না এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানান সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত থাকবে? ভিডিও চিত্রে সেলিম এবং তার লোকজন আগে আক্রমন করলেও কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সবার আগে মামলা দায়ের করলো? সাখাওয়াতের ঘটনা আগে ঘটেছে অথচ তার মামলা পরে নেয়া হলো কেন? শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী-মাদক বিক্রেতার হাত থেকে কবে রেহাই পাবে?

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও ওয়াকিবহাল মহলের মতে পরবর্তী যে কোন অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে সাখাওয়াত হামলা পরবর্তী সেলিমের উস্কানিমূলক হামলা এবং আত্মঘাতীভাবে সেলিমের আহত হয়ে মৃত্যুর সামগ্রিক ঘটনা পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত করে পারুল-মনছুর-জনি গং এর মাদক বিক্রয় এবং সকল সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ নির্মূল করে অবিলম্বে অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি সময়ের দাবী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *