মোঃ আসাদুজ্জামান (বেনাপোল) : বেনাপোল স্থল বন্দরে দিয়ে ভারতে রপ্তানি পণ্য ট্রাক সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে বন্দর এলাকাজুড়ে ভয়াবহ কৃত্রিম যানজট তৈরী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে যশোর আন্তঃজেলা ট্রাক ট্রাক্টর কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠন-২৪০৬ এর নামে। বন্দরের ছোচআঁচড়া মোড় হইতে রপ্তানিগেট পর্যন্ত রাস্তায় তৈরী হয়েছে নাকাল অবস্থা। ফলে ভয়াবহ জনদূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া,বড়আঁচড়া,সাদিপুর ও গাজীপুর গ্রামবাসি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীরা। ছোটআঁচড়া থেকে চেকপোষ্ট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের কারনে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগি গ্রামবাসিদের। পাসপোর্ট যাত্রীদের এসময় রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকারে পড়তে হচ্ছে।
বড়আঁচড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, বেনাপোল বড়আঁচড়া রেললাইনের মোড়ে বটতলায় স্থানীয় একটি ট্রাক সিন্ডিকেটের অফিসের সিরিয়াল সিন্ডিকেটের শিকার আমরা সাধারণ জনগন এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংগঠনের দেওয়া কৃত্রিম যানজট তৈরী করে রপ্তানি ট্রাক দীর্ঘ লাইন হওয়াতে রাস্তায় প্রকট যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনার ট্রাক চালক আমিনুর জানান, ৩দিন ধরে রাস্তায় রপ্তানি পণ্য নিয়ে দাড়িয়ে আছি সামনে যেতে পারিনি। কিন্তু ২০০০ টাকা খরচ করায় ৫০টি গাড়ি পেছনে ফেলে সামনে চলে এসেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক সিন্ডিকেটের সাবেক এক নেতা জানান, বর্তমান ভারতে রপ্তানি পণ্য বোঝায় ট্রাক জিম্মী করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিক নামধারী সংগঠনটি। রপ্তানি ট্রাক গুলোর সিরিয়ালের নামে ইচ্ছাকৃত ভাবে বেনাপোল হাইওয়ে সড়ক ও বাইপাস সড়ক হতে রফতানি গেট পর্যন্ত কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে। ভিআইপি সিরিয়াল নিয়ে ২৪০৬ এর সংগঠনের পরিবহন শ্রমিকদের যোগসাজসে ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকায় এক ধাপে পৌছে যায় রপ্তানি গেটে। টাকা না দিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকলে ৩ থেকে ৫ দিন অতিবাহিত করতে হয় রাস্তার উপর। ফলে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের গাড়ি প্রতি ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় ট্রাক মালিকদের।
সরেজমিনে স্থল বন্দরের রফতানি গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল ছোট আঁচড়া মোড় হইতে রপ্তানি টার্মিনাল গেট পর্যন্ত রাস্তার দুধারে সিরিয়ালে লম্বা লাইনে সারি সারি পন্যবাহী রপ্তানী ট্রাক দাড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সিরিয়াল ভেঙ্গে একের পর এক গাড়ি বেপরোয়া গতিতে রপ্তানি লাইনচ্যুত করে পন্যবাহী ট্রাক সামনে চলে যাচ্ছে। আর এসব ট্রাকের মেইনটেইন করছেন ২৪০৬ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সাংবাদিক পরিচয় গাড়ি আগে নিচ্ছেন কেন জানাতে চাইলে সিন্ডিকেটের লোক দ্রæত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনা-মেট্রো-ট ১১-১২৫৬,ঢাকা মেট্রো-ট ২২-৮২৯৩,ঝিনাইদহ মেট্রো-ট-১১-১৯২৪ চালকদের কাছ থেকে জানা যায়,দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পাটজাত পন্যবাহী ট্রাক বেনাপোল স্থল বন্দরে পৌছালে প্রবেশ থেকে আনলোড পর্যন্ত দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। এর মধ্যে ট্রাক সিরিয়াল সিন্ডিগেট,টার্মিনাল চাঁদা, সংগঠনের নামে চাঁদা, নাইট গার্ড চাঁদা।
বেনাপোল কাস্টমস্ কার্গো শাখা থেকে জানা যায়, ভারতের পেট্টাপোল বন্দরে প্রতিদিন দেশের রপ্তানি পন্য নিয়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ ট্রাক প্রবেশ করে। প্রবেশকৃত ট্রাক ড্রাইভার ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিএন্ডএফ এজেন্টের ও ট্রাক শ্রমিক সংগঠন এর মধ্যস্থতায় ট্রাক প্রতি সর্বনিম্ন ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়ে থাকে শ্রমিক নামধারী চক্রটি। চাঁদা না দিলে দিনের পর দিন সিরিয়ালের জন্য রফতানিকৃত পণ্য নিয়ে রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রপ্তানিকারকরা পণ্যর শিপমেন্ট ডেট ও গাড়ীর দৈনিক ক্ষতিপূরণের হাত থেকে রেহায় পেতে বাধ্য হয়ে সিরিয়াল সিন্ডিগেটের চাঁদা দিয়ে পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে হয়।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। চাঁদাবাজির কারনে রপ্তানিবাহী পণ্যর ট্রাক এই সিরিয়াল ভেঙ্গে বেপরোয়া গতিতে সামনে যাওয়ার কারনে বেনাপোলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ট্রাকের চাপায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সিএন্ডএফ এজেন্টের কর্মচারী আলমগীর হোসেন জানান, বেনাপোল বন্দরের ট্রাক শ্রমিক নামধারী সংগঠনের কাছে রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জিম্মী হয়ে গেছে। ট্রাক প্রতি চাঁদার টাকা না দিলে দিনের দিন ভারতে রপ্তানিকৃৃত পণ্য বোঝায় ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না। সময় মতো রপ্তানি ট্রাক ভারতে প্রবেশ করাতে না পারলে দৈনিক ট্রাক ক্ষতিপূলন,কাস্টমসের শিপমেন্টের ঝামেলা এছাড়াও সঠিক সময়ে ভারতে পণ্য না পৌঁছালে আমদানিকারকরা পণ্য রিসিভ করেনা। বিধায় আনেকটা বাধ্য হয়ে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ট্রাক প্রতি ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
সিরিয়াল সিন্ডিগেটের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে যশোর আন্তঃজেলা ট্রাক ট্রাক্টর কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করে থাকি তার বাইরে কোনো টাকা আদায় করা হয় না। ট্রাক সিরিয়াল ভঙ্গ করে ট্রাক সামনে নিতে ১০০০ থেকে ৩০০০ নেওয়ার কথা বললে তিনি বিষয়টি বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন। তবে স্থানীয় বদলি চালকরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি সুমন ভক্তর 01320143388 মুঠোফোনে কল দিলে কলটি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হইনি।