প্রস্তাবিত বাজেট জনবান্ধব নয় বরং দুর্নীতি বান্ধব—-২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা বৈঠকে খেলাফত মজলিস

Uncategorized জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব বলার সুযোগ নেই বরং দুর্নীতি বান্ধব বলা যায়। প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেশে ঘুষ-দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের মাথার উপর ঋণ ও করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। এখন বাজেট মানেই জনগণের উপর নতুন নতুন কর আর রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি। প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। দেশের বাজেট ও অর্থনীতিকে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের খবরদারী ও ওলিগার্কদের প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে। ঋণ খেলাপী, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধ করতে হবে। খেলাফত মজলিস আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন

আজ বিকাল ৪টায় পল্টনস্থ মজলিস মিলনায়তনে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মোঃ আবদুল জলিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন সাবেক যুগ্ম সচিব জনাব নূরুল আলম, বিশিষ্ট ব্যাংকার আলহাজ্ব আবু সালেহীন, মো: জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হক, এডভোকেট মুহাম্মদ শায়খুল ইসলাম, মো: গিয়াস উদ্দিন, এডভোকেট সৈয়দ মুহাম্মদ সানা উল্লাহ, ড. আনিসুর রহমান শিপলু, সেলিম হোসাইন, রাশেদুল ইসলাম, এইচ এম এরশাদ, জামিরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।


বিজ্ঞাপন

আলোচকবৃন্দ বলেন, ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষকরে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিবে। এতে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাঁধাগ্রস্থ হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা বাজেট ব্যয়ের ২২%। বাজেট ব্যয়ের বৃহত্তম খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ। পরিচালন ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মত অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। আর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তব সম্মত নয়। এ কথায় প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বাজেট।

আলোচকগণ বলেন, মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। প্রস্তাবিত এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোন ভূমিকা রাখবে না, বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে। বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ৫% বাড়িয়ে ২০% করা হয়েছে। একজন ভোক্তা ১০০ টাকা রিচার্জ করলে মাত্র ৬৮ টাকার কথা বলতে পারবে। এতে করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের পকেট কাটার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরো বলেন, ঋণ নির্ভর বাজেটের কারণে জনগণের উপর জাতীয় ঋণের বোঝা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ সংকটের নিপতিত হতে বাধ্য। দেশের বৈদেশীক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ তলানীতে গিয়ে ঠেকার উপক্রম হয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সামনে দেশকে বড় ধরনের ঘাটতি মোকাবেলা করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক সংকট কীভাবে সামলানো হবে, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই। এতে জনগণকে মূল্যস্ফীতির আরো বড় ধরণের চাপে পড়তে হতে পারে। ধারাবাহিক মূদ্রাস্ফিতির সত্ত্বেও করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। গরীবের পকেট কেটে কর বের করার বাজেট কখনো জনবান্ধব হতে পারে না।

বৈঠকে দেশের বাজেট ও অর্থনীতিকে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের খবরদারী ও ওলিগার্কদের প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে। ঋণ খেলাপী, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধ করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা, মূল্যস্ফীতি রোধ ও প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত মোবাইলে কথা বলার উপরসহ সব ধরণের বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবী জানান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *