এবার কানাডায় খোঁজ মিলল রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের কন্যা ইপসিতার আলিশান বাড়ির

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি বিশেষ প্রতিবেদন

কানাডায়  রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের কন্যা ইপসিতার আলিশান বাড়ি এবং ইনসেটে ইপসিয়া গাড়ি থেকে নামার ছবি।


বিজ্ঞাপন

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :  ১৫ লাখ টাকার ছাগল’কাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে।অনুসন্ধানে এই রাজস্ব কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের নানা তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, রিসোর্ট, পার্ক, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, কানাডায় আলিশান বাড়ি-গাড়ি কী নেই তার? এবার কানাডার গুরুত্বপূর্ণ প্রভিন্স অন্টারিও থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে ব্যারি সিটিতে খোঁজ মিলেছে মতিউরের কন্যা ফারজানা রহমান ইপসিতার আলিশান বাড়ির। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তিনি বাড়িটি কেনেন। এতে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কানাডিয়ান ডলার। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন এবং জমি ট্রান্সফার ফি বাবদ আরও গুনতে হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার। সব মিলিয়ে বাড়িটির মালিক হতে বাংলাদেশি টাকায় ৯ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

কানাডার জমি রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অন্টারিওর ব্যারি শহরে এই বাড়িটি কেনেন ফারজানা রহমান ইপসিতা। শহরের মোনার্কি স্ট্রিটের ১১৭ নম্বর বাড়িটি তার।

কানাডায় জমি বেচাকেনা নিয়ে কাজ করেন এমন দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কানাডায় বাড়ির এখন উচ্চমূল্য। এ ছাড়া জীবনযাত্রায় বেড়েছে খরচ। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে কানাডায় কাজ করে সেই আয়ে বাড়ি করা সম্ভব নয়। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তারা বলছেন, কানাডায় সাধারণত ব্রোকাররা বাড়ি খুঁজে দেন। সেক্ষেত্রে ব্রোকারদের আলাদা চার্জও দিতে হয়।

তথ্য বলছে, ব্যারি শহরে ফারজানা রহমান ইপসিতা যে বাড়িটি কিনেছেন তিনি সেখানে থাকেন না। তারা মূলত অন্টারিও শহরে থাকেন। ওই বাড়িটি ভাড়া দেওয়া। তবে সূত্র বলছে কানাডায় ইপসিতা যে বাড়িটিতে বর্তমানে থাকেন, সেটিও তার নিজের কেনা। যদিও বিষয়টি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কানাডার সরকারি নথি অনুসারে ব্যারি শহরের ৩৯, স্প্রাই লেনের ফেং জুয়ান হোয়াং নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই বাড়িটি কেনেন ইপসিতা এবং তার স্বামী মোহাম্মদ নাসরাত ফয়সাল। বাড়িটি যৌথ মালিকানায় রয়েছে। বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, ইপসিতার জন্মতারিখ ১৯৯২ সালের ৩১ জুলাই। জানা যায়, ২০১৮ সালের দিকে কানাডায় পাড়ি জমান ইপসিতা। সেখানে বর্তমানে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন।

তথ্য বলছে ট্রিপ্লেক্স এ বাড়িটির অত্যাধুনিক সব আসবাবপত্র দিয়ে সজ্জিত। বাড়ির সামনে দীর্ঘ লন। এ ছাড়া একটি সুইমিংপুলও রয়েছে। রয়েছে আলাদা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। প্রধান সড়ক ঘেঁষে গড়ে তোলা ফুল ফার্নিশড এ বাড়িটি যেন রাজপ্রাসাদ।

জানা গেছে,  ইপসিতা কানাডায় থাকলেও বাংলাদেশে তার নামে রয়েছে অন্তত এক ডজন কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন মতিউর রহমানের দুই সন্তান তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা। এ ছাড়া গাজীপুরের গ্লোবাল সু ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং কোম্পানিতেও মালিকানা রয়েছে ইপসিতার।

এসব বিষয়ে জানতে নানাভাবে ফারজানা রহমান ইপসিতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ড. মতিউর রহমানকেও। পরবর্তী সময়ে মতিউর রহমানের অফিস এবং বাসার ঠিকানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। দিনভর চেষ্টা করা হয় মোবাইল নম্বরেও। তিনি কল রিসিভ করেননি। এর আগে গত বুধবার তিনি দাবি করেছিলেন, মুসফিকুর রহমান ইফাত তার ছেলে নয়। তার এক ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ইপসিতা। এর বাইরে তার কোনো সন্তান নেই।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টরন্টোতে অর্থ অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ায় যায়নি। অর্থ পাচার হয়েছে বা মানি লন্ডারিং যা-ই বলুন না কেন, এই অর্থ অবৈধভাবে গেছে। আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে উভয় দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে এই অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আইন অনুযায়ী যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটা তো বাজেয়াপ্ত হবেই, তার সঙ্গে পাচারকারীর তিনগুণ জরিমানা এবং ১৪ বছর জেল হওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *