নিজস্ব প্রতিবেদক : মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ও সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক কনসোটিয়ামের আবেদনের পেক্ষিতে আজ বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র জানায়, গত সোমবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানির (সিপিজিসিবিএল) সচিবকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্যানেলের প্রধান ফারুক হোসেন চিঠি পাঠান। চিঠিতে কয়লা ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র, ক্রয় পরিকল্পনা, বিজ্ঞাপন, দরপত্র, পুন:মূল্যায়ণ প্রতিবেদন এবং অভিযোগের লিখিত প্রতিউত্তর নিয়ে শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়।
শুনানির প্যানেলে ছিলেন , মূল্যায়ন প্যানেল-২ এর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কবির, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন, এফবিসিসিআই পরিচালক আবুল কাশেম খান, অবরপ্রাপ্ত সচিব ফারুক হোসেন, অবরপ্রাপ্ত জেলাজজ নুরুজ্জামান এবং এফবিসিসিআই পরিচালক নাদিয়া বিনতে আমীন।
এর আগে গত ১৩ জুন সিপিজিসিবিএল’কেশুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমবার চিঠি দেয় আইএমইডি। ওই চিঠিতে বলা হয়, একটি আন্তর্জাতিক কনসোটিয়ামের পক্ষে জনৈক জালাল উদ্দিন মাতারবাড়ি প্রকল্পে কয়লা সরবরাহে দরপত্র প্রক্রিয়ায় নীতিমালা ভেঙ্গে ‘বিশেষ সুবিধা’ পেতে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মূল্যায়ন বিভাগে আবেদনের পেক্ষিতে আগামী ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকল পক্ষের অংশগ্রহণে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে আরেকটি চিঠিতে শুনানির দিন একদিন এগিয়ে আনা হয়।
এদিকে গত ১১ জুন এক চিঠির মাধ্যমে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ও সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার চুক্তি সম্পাদন না করতে নির্দেশনা দিয়েছিল আইএমইডি। চিঠিতে বলা হয়েছিল, পাবলিক প্রকিউরম্যান বিধি মালা-২০০৮ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক গঠিত রিভিউ প্যানেল হতে একটি আপিল চলমান থাকায় বিধিমালা অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের নোটিশ জারি করা হতে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো। সম্প্রতি দরপত্র প্রক্রিয়ার সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক কনসোটিয়াম। একই কনসোটিয়াম সম্প্রতি আইএমইডিতেও সংশ্লিষ্ট দরপত্র পূন:মূল্যায়ণের জন্য আবেদন করেন।
দরপত্র অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশী-বিদেশী চার প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তাবনা দাখিল করলেও ‘আর্থিক সক্ষমতা নেই’ অযুহাতে প্রথমেই তিন প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৭ মে কারিগরি কমটির সভায় চারটি কনসোটিয়ামের সবগুলোর আর্থিক প্রস্তাবনা বাতিল হয়। সর্বশেষ ৩১ মে সিপিজিসিবিএল’র বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যামান পরিস্থিতিতে জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বাতিলকৃত ইউনিক সিমেন্ট কনসোটিয়ামকে নিয়ে সমঝোতা করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
যদিও প্রকল্প কর্মকর্তাদের সেচ্ছাচারিতায় বাতিল হওয়া তিন কনসোটিয়ামের একটি গত ২৯ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে দরপত্র পূণর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার উত্তর পায়নি।
দরপত্রের প্রাথমিক শর্তনুযায়ী, কমপক্ষে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল, যা কয়লা আমাদানি সংশ্লিষ্ট দরপত্রের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক শর্ত। কিন্তু একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে উক্ত শর্তটি শিথিল করে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট অথবা খাদ্য শস্য আমদানীর অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা একটি অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, কয়লা আমদানি দরপত্রের অনিয়মের পাশাপাশি নানা অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সম্প্রতি মাতারবাড়ি বিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য সাধারণ কিছু ‘হ্যান্ড টুলস’ আমদানিতে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। এতে ছোট ছোট পাইপ কাটার, হাতুড়ি, মেটালসহ মোট ১৯টি সাধারণ যন্ত্রপাতি কিনতে হাজার গুণ পর্যন্ত বেশি মূল্য ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, একটি পাইপ কাটারের দাম ধরা হয়েছে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যেটার সাধারণ বাজারমূল্য সর্বসাকুল্যে সাত হাজার টাকা। একটি হাতুড়ির দাম ধরা হয়েছে ৯১ হাজার টাকা। যেটার বাজার মূল্য ৮৩৪ টাকা। গত ৯ই জানুয়ারি সিপিজিসিবিএলের অনূকূলে জার্মানি থেকে ৩৪৪.৫ কিলোগ্রাম ওজনের একটি চালান আসে। এই চালানের আমদানিমূল্য মোট ২.৭৫ কোটি টাকা। যেখানে দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
Post Views: 135