চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১০ লিটার মদসহ ৩ জন আটক : রহস্যজনক কারণে  ৫০ লিটারে চালান হয় ২ জন

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :  চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের এক মাদক উদ্ধার অভিযানে আটক ৩ জনের মধ্যে ১জনকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মৌলভী ঘোনা এলাকার সাগরের ছেলে বেলাল ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মোকামি পাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে অটোরিকশা চালক মো: সাহেদ। এরমধ্যে মনোয়ারা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ২জনকে ৫০ লিটার মদের মামলায় আদালতে চালান করা হয়। গত ২৪ জুন সন্ধ্যার পরপর উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের সাহেবের হাটের উত্তরে চারা বটতলের দক্ষিণ পার্শ্বে প্রধান সড়কে রামদাস মুন্সির হাট তদন্ত কেন্দ্র কথিত রামদাস ফাঁড়ির এসআই নুরুল হক এই অভিযান পরিচালনা করে ৮/১০ লিটার দেশীয় তৈরী চুলাই মদ উদ্ধার এবং অটোরিকশা সহ ৩ জনকে আটক করেন।


বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেলাল তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে সাথে নিয়ে ৮/১০ লিটার দেশীয় তৈরী চুলাই মদ নিয়ে মৌলভী ঘোনা প্রবেশ মুখে বাঁশখালীর প্রধান সড়কে অর্থাৎ উপজেলার একই ইউনিয়নের সাহাবের হাটের উত্তর পার্শ্বে গাড়ীর জন্য অবস্থান করে। এসময় দক্ষিণ দিক থেকে আসা সাহেদের অটো রিকশায় ঐ দম্পত্তি ভাড়ায় উঠে উত্তর দিকে ৩শ ফুট মত যাওয়ার পরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছলে এসআই নুরুল হক অভিযান চালিয়ে অটোরিকশা থেকে মদ উদ্ধার করে। এসময় যাত্রী বেলাল ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং অটো রিকশা চালক সাহেদকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। ঐদিন রাতেই অর্থের বিনিময়ে বেলালের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে ফাঁড়ি থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন ২৫ জুন যাত্রী বেলাল ও চালক সাহেদকে মাদক মামলায় কোর্টে চালান করা হয়।


বিজ্ঞাপন

অর্থের বিনিময়ে ফাঁড়ি থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলালের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ২৪ তারিখ সন্ধ্যার দিকে আমি আমার স্বামী বেলালের সাথে আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হই। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অটোরিকশা সহ আমি ও আমার স্বামী বেলাল এবং অটোরিকশা চালক সাহেদকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এসময় অটোরিকশায় পাওয়া সবার সামনে বস্তার ভেতর থেকে বের করে ৮/১০ লিটার মদ দেখায় পুলিশ। পরে ফাঁড়িতে আমার বাবা গিয়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। বেলালদের জন্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিবে বললেও ছাড়ে নাই। পরে এদেরকে ১০০ লিটার মদের মামলা দিবে বললে, বেলাল পুলিশকে বলে এত লিটর মদতো আপনারা পান নাই। এই বলার পর পুলিশ ৫০ লিটার মদের মামলা দিয়ে চালান করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান মনোয়ারা বেগম।

এদিকে অটোরিকশা চালক সাহেদের মা আছমা বেগম মুঠোফোনে ও সাক্ষাতে বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে তার ২ ছোট বাচ্চা ও বউ নিয়ে আমাকে দেখাশোনা করে। সন্ধ্যায় ভাড়া মারার সময় তার গাড়ীতে যাত্রী উঠলে তাদের থেকে বস্তার ভিতর মদ পায় পুলিশ। খবর পেয়ে আমি ফাঁড়িতে গিয়ে পুলিশকে আমার ছেলে এসব কিছু জানে বললেও ছাড়ে নাই, রাতে বেলালের স্ত্রীকে তার বাবা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও অটোরিকশা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবী করেন বলে জানান আছমা বেগম।

এঘটনায় বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনাকারী রামদাস ফাঁড়ির এসআই নুরুল হককে ফোন করা হলে তিনি ফাঁড়িতে যেতে বলেন। পরে ফাঁড়িতে গিয়ে তাকে উপস্থিত না পেয়ে পুনরায় ফোন করা হলে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, “আপনাকে ফাঁড়িতে আসতে বলছে কে? আপনি আমার সম্পর্কে জানেন? আমি কি বক্তব্য দিতে বাধ্য? আমার যত খারাপ আছে সব নিউজ করেন!” বলে উত্তেজিত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে রামদাস ফাঁড়ির ইনচার্জ তপন বাকসি’কে উপস্থিত না পেয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে, ঘটনার বিস্তারিত ও এসআই নুরুল হকের এমন আচরণের কথা উল্লেখ করে, “কোন লোকাল গাড়ীতে কোন যাত্রী অবৈধ জিনিস নিয়ে উঠলে তার দায় কি চালক নিবে কিনা কিংবা অন্যান্য যাত্রীরা নিবে কিনা? আর একই বিষয়ে একই সাথে ৩জনকে আটক করা হলে ২জনের অপরাধ কিংবা ১ জন নিরপরাধ হতে পারে কিনা? আর এ ঘটনায় যাত্রী বেলালের কাছে অবৈধ জিনিস পাওয়ায় লোকাল গাড়ীর চালক সাহেদও যদি অপরাধী হয়, তবে তার সাথে থাকা স্ত্রীর অপরাধ হবে না কেন? এর মধ্যে মামলায় লোকাল গাড়ীটি জব্দ করা হয়েছে কিনা? তাছাড়া লোকাল গাড়ীর কোন যাত্রীর কাছে অবৈধ জিনিস পাইলে কি পুরু গাড়ীটা জব্দ করা যাবে কিনা? আর যদি এমন হয়, তবে লোকাল গাড়ীতে যাত্রী উঠানোর সময় চেকপোস্ট পরিচালনা করার নিয়ম আছে কিনা? যদি না থাকে যাত্রীর অপরাধের দায় কেন লোকাল গাড়ী কিংবা চালক নিবে!?” লিখে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে তিনিও হোয়াটসঅ্যাপ কলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে প্রতিবেদককে বিচারক হওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও পুলিশ যা মন চাই তাই করবে, তাতে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তথ্যদিন কিংবা আদালত থেকে জেনে নেওয়ার কথা বলেন। একপর্যায়ে ঘটনায় ৫০ লিটার মদ উদ্ধার এবং অটোরিকশা ও মালিক সহ ২ জনকে আটক করা হলেও কোন মহিলা আটক হয়নি বলে জানান ইনচার্জ তপন বাকসি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *