মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবন : কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলী দেখিয়ে আবাদে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ফরিদ মিয়া নামের এক ভূমিদস্যু। প্রশাসনের বাধায় দিনের পরিবর্তে রাতের আধারে চলছে অবৈধ ড্রেজারে ফসলী জমি খনন, পাচার করছে মাটি, ধ্বংস করছে ফসলের মাঠ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেবিদ্বার উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামের মৃত আবদুল খালেক এর পুত্র স্থানীয় প্রভাবশালী নজরুল ইসলাম সাবেক মেম্বার এলাকায় একজন অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। গত কয়েক বছরে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে এলাকার কৃষি ও ফসলী জমির মাটি কেটে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে হয়ে উঠেছেন ভূমিদস্যু এবং হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, আর বিলীন করে দিচ্ছেন ফসলের মাঠ এবং বিগত সময়ে ওয়ার্ড সদস্য থাকাকালীনেও ছিল বিস্তর অভিযোগ। এর অংশ হিসাবে পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে ফরিদ মিয়াকে নিয়ে চলছে তার এই মাটি লুটের রমরমা ব্যবসা। গত তিন বছর আগে উপজেলার এগারগ্রাম বাজারের দক্ষিন পার্শ্বে পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামের মধ্য মাঠে প্রায় ৬০ শতাংশ ফসলী জমি নিয়ে তাদের এই অবৈধ মাটি খনন ও বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। অধিক মোনাফার লোভে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে সরকারী নিয়ম-নীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে বিরামহীন ভাবে কাটছে ফসলের মাঠ।
এসব অভিযোগে বিগত ২০২২ সালে স্থানীয় সচেতন মহল থেকে উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নজরুলকে ৫০,০০০/- টাকা জরিমানে করে এবং অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করেন। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই আবার শুরু হয় তাদের জমি খনন কাজ। পরে একাধিক বার স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে অবগত করে কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী কৃষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ভূক্তভোগীরা বলেন, এই ভূমিদস্যু নজরুল ও তার সহযোগীরা অধিক মোনাফার লোভে বিভিন্ন মহলকে আর্থিক ম্যানেজ করে সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এলাকার কৃষি জমি খনন করে মাটি পাচার করে চলছে প্রতিনিয়ত। আমরা গরীব অসহায়। এমনি ভাবে কৃষি জমি কেটে ফেললে আমরা ফসল ফলাবো কোথায়, খাবো কি? ওই ভূমিদস্যুরা এলাকায় কারো কথা শুনেনা।
কেউ কিছু বললে তাদেরকে হুমকি ধমকি দিয়ে চুপ করিয়ে এই অবৈধ মাটি খনন করে ফসলের মাঠকে সাগরে পরিনত করেছে। অপরদিকে অবৈধভাবে এসব ড্রেজারের পাইপলাইন সংযোগের জন্য এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মানুষের বসতবাড়ি ব্যবহার করায় মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ড্রেজার সিন্ডিকেটের ভয়ে ভুক্তভোগীরা কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
ভূক্তভোগীরা আরও বলেন, শুরু থেকে উপজেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি অবগত করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় উপজেলা প্রশাসন কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিগত তিন বছরে উপজেলার পশ্চিম পোমকাড়া মৌজায় বিএস দাগ নং (৪০৬, ৪০৭, ৪০৮, ৪০৯, ৪১০, ৪১১, ৪১২, ৪১৩, ৪১৪, ৪১৫, ৪১৬, ৪১৯, ৪২০, ৪২১, ৪২২, ৪২৩, ৪২৪) মোট ১৭দাগে ২৪৭ শতাংশ ফসলী জমি ধ্বংস করেছে ওই ভূমিদস্যু চক্র। দিন দিন তাদের এই ফসলী জমি ধ্বংস করার কার্যক্রম বাড়ছে। আশপাশের বাকী ফসলি জমিও হুমকির মুখে পড়েছে এবং পরিবেশ তার ভারসম্য হারাচ্ছে।
ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে মাটি কাটা, কৃষি জমি খনন ও সরবরাহ করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তবুও কোন অদৃশ্য ক্ষমতার বলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমি লুটছে এই ভূমিখেকো নজরুল মেম্বার? তার খুঁটির জোর কোথায় এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন মহলের।
স্থানীয় ভূক্তভোগীরা জানায়, এই আলোচিত ড্রেজার ব্যবসায়ী ভূমিদস্যু নজরুল মেম্বারের বিরুদ্ধে দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসন বরাবর একাধিক অভিযোগ দেওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ওই এলাকার কৃষি জমি বাঁচাতে কৃষকদের বাচাঁতে এবং পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় ভূক্তভোগী কৃষকগন।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ভূমিদস্যু নজরুল গং দেবিদ্বার থানার ক্যাশিয়ারকে প্রতি মাসে পনের হাজার টাকা এবং কুমিল্লার এক কতিথ সাংবাদিককে দশ হাজার টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ওই ড্রেজার চালাচ্ছে। পুলিশ এসে টাকা নিয়ে চলে যায় তাই অবাদে লুটছে ফসলী জমি।
সরজমিনে দেখা যায়, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন কুটনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাট করছে, এলাকার স্থানীয় নেতা নাজির হোসেনও ড্রেজার মালিক! সুবিল ইউনিয়ন এলাকায় ৮ নং ওয়ার্ড নজরুল ইসলাম মেম্বার এর বাড়ির উত্তর দিকে কৃষি জমিতে অবৈধ ড্রেজার চলছে, সুবিল রাঘোপপুর মালেক চেয়ারম্যান এর বাড়ির পশ্চিম দিকে ২ টি অবৈধ ড্রেজার চলছে। এ-সবই সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি লুট হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামে মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উক্ত বিষয় নিয়ে দেবীদ্বার থানা অফিসার ইনচার্জ মুঠোফোনে ফোনে বলেন, আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তুু সুফল আসচ্ছেনা, কারন এসিল্যান্ড সাহেব রহস্যজনক ভূমিকার কারণে বলেই জানান দিয়ে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিষয়টি জানতে, দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।