সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) : গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর পরই শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন কারী সহ সাধারণ মানুষের বিজয়োল্লাস। মূহুর্তের মধ্যেই এ বিজয়োল্লাস ছড়িয়ে পরে রাজধানী সহ পুরোদেশে। সারা দেশের ন্যায় পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতেও বিজয়োল্লাসের পাশাপাশি হামলা ও ভাঙচুর করা হয় আঃ লীগের বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠান। চালানো হয় সংখ্যা লঘুদের উপরে নির্যাতন ও লুটপাট।
গতকাল সোমবার (৫ আগষ্ট) রাতে উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ও সংখ্যা লঘুদের বসত বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলা যজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই ইউনিয়ন বালিয়া লক্ষ্মীরথান, আলোয়াখোয়া, রাধাকৃষ্ণ মার্কেট সহ কয়েকটি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসময় হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।
সুজন চন্দ্র নামে এক ব্যাক্তি জানান, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে কয়েকশো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাঁরা আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়ে যায়। আমাদেরকে মেরে ফেলারও হুমকি তাঁরা দিয়েছে। আমরা অনেক আতঙ্কে রয়েছি।
এমতাবস্থায় তাদের জীবন রক্ষার্থে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরের পর থেকেই দেশত্যাগের জন্য উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী নদীর পাড়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হতে শুরু করে।
ভারতে চলে যেতে আসা সুশীল চন্দ্র নামে একজন বলেন, আমাদের উপরে গতকাল হামলা করা হয়েছে। রাতে রাধাকৃষ্ণ মার্কেটে দোকান পাটে হামলা করা হয়েছে আর কিছু দোকানে আগুন দিয়েছে। কারও কারও ঘরের বিভিন্ন মালামাল, হাঁস মুরগি গরু ছাগল নিয়ে গেছে এলাকায় অনেক বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই প্রাণে বাঁচতে সবকিছু ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
উল্লেখ যে, নদীর এপাড়ে বাংলাদেশের বালিয়া বিজিবি ক্যাম্প। আর অপরদিকে ভারতের মরাগতি ক্যাম্প। মাঝখানে নাগর নদী। এই নদী পাড় হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য দুপুরের পর থেকেই পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এসে জড়ো হয়।
এনিয়ে বিষয়ে আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাক্কারুল আলম কচি জানান, গতকাল রাতে ওইসব গ্রামে হামলা, ভাঙচুর সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এমন হামলা ও ভাঙচুরের জন্য এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক আতঙ্কিত।
তাই নাগর নদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যেতে শুরু করেছেন অনেকেই। এছাড়াও পঞ্চগড় সহ ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বালিয়া লক্ষ্মীথান সীমান্ত দিয়ে নাদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে।তিনি আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কারীদের বিজয় হয়েছে। দেশ এখন সেনাবাহিনীর হাতে। কিছু দুষ্কৃতকারী এখন ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা যজ্ঞ চালাচ্ছে।
দেশের সম্পদ রক্ষার দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের৷ এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যা লঘুদের উপরে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে তিনি জানান।