স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ লুটেরা সিন্ডিকেট ভাঙ্গবে কে ? 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর মধ্যে দিয়ে অনেক  চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই নতুন করে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ এতে হাজারো প্রতিবাদীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু দুর্নীতি অনিয়ম ও লুটপাটের কালো ছায়া যেন পিছু ছাড়ছে না দেশটির স্বাস্থ্য খাতের। স্বাস্থ্যের মাফিয়াদের কাছে যেনো গোটা স্বাস্থ্য বিভাগ জিম্মি। স্বাস্থ্য বিভাগের আষ্টে- পৃষ্ঠে দুর্নীতি যেনো ক্যান্সার নামক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি অক্টোপাসের  মতো আঁকড়ে ধরেছে। বিগত ১৬ বছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি তেমনটা চোখে পড়েনি, দেশের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলাচলের রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয় রোগীদের।


বিজ্ঞাপন

অবৈধভাবে চলছে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বিগত সময় গুলোয় স্বাস্থ্য খাতে জড়িত সবাই লুটপাট করে ফুলে ফেপে উঠেছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি  লুটেরা স্বাস্থ্য মাফিয়াদের  কমানো খুব বড় চ্যালেঞ্জ বিগত সময় দেশের প্রতিটি বিভাগে উন্নয়নের নামে অবিরাম শোষণ লুটপাট করেছে শাসক গোষ্ঠী। আর স্বাস্থ্য বিভাগ যেনো দুর্নীতি নামক কর্কটে আটকে আছে। সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য  খাতের দুর্নীতিবাজদের প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতার কথা যেন মুখে মুখেই বলে গেছেন, কথিত সাদা ইমেজের সাবেক  স্বাস্থ্য মন্ত্রী দেশের প্রতিটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতি মুক্ত করার চ্যালেঞ্জে তর্জন গর্জন দিয়ে হয়েছেন ব্যর্থ। বর্তমান অন্তর্বরর্তীকালীনদরকার স্বাস্থ্য বিভাগে আদৌ কোন পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা তা । দেখতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল এর রিপোর্টে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে আর্থিক কার্যক্রমের ওপর স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নমুনা মূলক যাচাইয়ের মাধ্যমে অডিট সম্পাদন পূর্বক একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করে। যাতে সরকারি সম্পদ ও অর্থ ব্যবহা ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিহ্নিত আর্থিক অনিয়ম সমূহের সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনয়ন করা যায়, যা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩২ অনুযায়ী এই অডিট রিপোর্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হয়েছে। এই রিপোর্টে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন ১১টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীন ২টি সহ মোট তেরোটি অডিট অনুচ্ছেদ রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের মোট ১১টি টি অনুচ্ছেদে জড়িত টাকার পরিমাণ ৪০,৫৬,১৭,৬৩৪ টাকা যা উক্ত বিভাগের মোট বরাদ্দের ০.৬৪% এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের মোট বরাদ্দের ০.০৩% এর বেশি লুটপাট করা হয়েছে।

এই রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য অনিয়ম গুলো হচ্ছে, প্রকৃত বাজার মূল্য অনেক বেশি মূল্যে মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল রিএজেন্ট ক্রয়, নির্ধারিত সময় মালামাল সরবরাহ না। করা, পিপিআর ২০০৮ লংঘন করে এনা সম্পাদন, সরকারি আদেশ লংঘন করে ঔষণ ক্রয় করায় ক্ষতি, মালামাল গ্রহণ না করে অর্থ পরিশোধ করা, প্রাপ্য তার অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করা সহ অন্যান্য এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত সর্বমোট ৪০ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫২ টাকা। যার মধ্যে বাজার মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে এম এস আর ক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ২ কোটি ২৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৫৫ টাকা। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে এমএলআর ক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ২ কোটি ৫৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৩ টাকা। বিভাগীয় মামলা পরিচালনা বাবন্ধুত্ব ফার্থ কে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ৫২ লক্ষ্য ৮৫ হাজার টাকা।

উল্লেখিত সকল সামগ্রী সরবরাহ না করা সত্ত্বেও অর্থ পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৯ হাজার ২০০ টাকা। পণ্য ও সেবা সরবরাহের বিলে নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ ১৯৫২ টাকা। পণ্য ও সেবা সরবরাহের বিপরীতে নির্ধারিত হারে মূল্য সংযোজন কর কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় ৮ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫১ হাজার ২৫৫ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামাল সরবরাহ করতে বার্থ সরবরাহকারীর নিকট হতে বিলম্ব জরিমানা আদায় না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩ কোটি ১৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৪৪ টাকা। পিপিআর ২০০৮ সঙ্কনপূর্বক এম এস আর সামগ্রী ক্রয় বাবদ অনিয়মিতভাবে ব্যয় করা হয় ৯। কোটি ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজায় ৯০৫ টাকা। পি পি এ ২০০৬ এবং পিপিআর ২০০৮ সামনপূর্বক দরপত্র দলিল প্রণয়ন ব্যতিরেকে এমএসআর ক্রয় বাবদ অনিয়মিতভাবে ব্যয় করা হয় ৬ কোটি ৯৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫৫০ টাকা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বীমা না করায় একদিকে কাজের ঝুঁকি বৃদ্ধি অপরদিকে বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে আট লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৩১ টাকা। এইচ পি এন এস পি কর্মসূচি এর আওতা বহির্ভূত কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জ্বালানি সরবরাহ ও মেরামত করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় এক কোটি ১০ গফ ৫৯ হাজার ৮৯৯ টাকা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বাজার মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে এম এস আর সামগ্রিক জন্য করায় সরকারের আর্থিক ২৮ হাজার ৯২ লক্ষ ২৫০ টাকা এবং সরবরাহকারীদের বিল হতে নির্ধারিত হার অপেক্ষা কম হারে ভাটি কর্তন করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় ১২ লক্ষ ৪৯ হাজায় ৭৬৮ টাকা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরন সহ সরকারি অর্থ আদায় ও ব্যয় প্রচলিত বিধিবিধান পরিপালন এবং বং একই ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটা ও পূর্ববর্তী নিরীক্ষার সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মনোনিবেশ করার প্রয়োজনীয়তা এই অডিট রিপোর্টে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট জনেরা যেন অগ্রগ্রহহীন হয়ে পড়েছেন, নাকি এর ভাগ বাটোয়ারার প্রত্যাশায় নিশ্চুপ অবস্থান তাদের? স্বাস্থ্য খাতের লুটপাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে স্বাস্থ্য মাফিয়ারা, বর্তমান অন্তর্ণরতীকালীন সরকার ও  সেনাবাহিনীর আতঙ্কে যেনো স্বাস্থ্য মাফিয়াদের ঘুম হারাম। যেকোন সময় এসব লুটেয়াদের আইনের আওতায় আনা হতে পায়ে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো জানাচ্ছে। জাগ্রত ছাত্রজনতা একবার এ যদি দি বলে বসে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার চাই তাহলেই হবে।

প্রতিভ সাবেক আওয়ামী লীগ  সরকারের মন্ত্রী আমলাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুর্নীতির পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে  অনুসন্ধান করে টাস্ক ফোর্স গঠনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনবেন বলে  প্রত্যাশা করছেন বোদ্দা জনেরা। বর্তমান অন্তর্ববর্তীকালীন সরকার এ সকল ও অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুল ছেড়া অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, যা প্রকাশ করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *