নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার বহুল আলোচিত সমালোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ. খানের বাধ্য হয়ে বিদায় নেয়ার পর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর অতীতের আমলনামা মারাত্মক কলুষিত ও কালিমালিপ্ত। তাছাড়া, এ কে এম সহিদ উদ্দিন ওয়াসার সদ্য পদত্যাগী এমডি তাকসিম এ খানের লুটপাটের অংশিদার ও অন্যতম সুবিধাভোগি হিসেবে পরিচিত। যে কারনে সহিদ উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হওয়াকে যথা পূর্বং তথা পরং বলে আখ্যায়িত করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬–এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত জ্যেষ্ঠতম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সব দায়িত্ব পালন করবেন। অত:পর মওকা পেলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন। তিনি ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এমডির দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে চিঠি দেন।
সূত্রেমতে, এ কে এম সহিদ উদ্দিন ২০১৬ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরপরই ওয়াসার পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাঁকে দুই বছরের চুক্তিতে পরিচালক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন এমডি তাকসিম এ খান। কিন্ত ঢাকা ওয়াসার জনবল কাঠামোতে এমন কোনো পদ নেই।
অবশ্য সহিদ উদ্দিনকে জনবল কাঠামোর বাহিরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালক পদে নিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, তাকসিম এ খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ দিয়েছেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ নিয়োগ দিয়ে তাঁরা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এর জন্য তাকসিম এ খান, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই সময়ে পরিচালক (উন্নয়ন) পদে মো. আবুল কাসেমকে নিয়োগ দিয়েছিল তাকসিম এ. খান। দুদকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বেতন-ভাতা বাবদ তাঁদের ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সহিদ উদ্দিন লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান। এলাকায় পিন্টু ভাই নামে পরিচিত। এ.কে শহীদ উদ্দিনের ছোট ভায়রা মো: জসিম উদ্দিনকে ওয়াসায় চাকুরী দিয়েছেন। তিনি এখন উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত। মূলত হাতিরঝিল ওয়াসার প্রজেক্টের দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবত ওয়াসায় চাকুরী করেছেন এবং স্বেছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করে স্ত্রী সন্তানসহ কানাডায় পাড়ি দেন। অত:পর স্ত্রী সন্তানকে কানাডায় বাঙালী এলাকা বলে খ্যাত ”বেগম পাড়ায়” নিজ বাসায় বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি আবার দেশে ফিরে ওয়াসায় আউটসোর্সিং এ পরিচালক (টেকনিক্যাল) পদে যোগদান করেন। এসব কারনে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বলাবলি করছেন-আগে ওয়াসা ছিল আমেরিকা প্রবাসির দখলে আর এখন কানাডার বেগম পাড়ার দখলে।
সহিদ উদ্দিন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কেবল কানাডায় নয় দেশেও প্রচুর বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছেন। বাড্ডায় তার ২২০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটসহ ঢাকায় একাধিক ফ্লাট রয়েছে। ধানমন্ডী ঝিগাতলায় একটি বহুতল বাড়ী আছে। যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।