বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেট রেঞ্জে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত থাকা ঘুষ দুর্নীতির বরপূত্র সেই বিতর্কিক পুলিশ পরিদর্শক কাউছার আলমকে অবশেষে বদলী করা হয়েছে !
মঙ্গলবার রাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দায়িত্বশীল সূত্র ওই বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এন,এম মোর্শেদ পিপিএম-সেবা স্বাক্ষরিত এক আদেশে কাউছারকে তাহিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে বদলী করা হয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক কাউছার আলমের যত অপকীর্তি: চতুর কাউছার আলম বিভিন্ন সময় ডিও করিয়ে সিলেট রেঞ্জের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সহ সিলেটের বিভিন্ন জেলা, থানা, পুলিশ ফাঁড়িতে কৌশলে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত রয়েছেন।
তাহিরপুর থানায় বদলী সুত্রে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসাবে যোগদান করেন কাউছার আলম। যোগদানের পর থেকেই ঘুষ, দূনীতির বরপূত্র হিসাবে পরিচিত পাওয়ার পর নানা অপকর্মকান্ডে বিতর্কিত হওয়ার পাশাপাশী থানায় বিভিন্ন সময় থাকা একাধিক ওসি, একাধিক এসআই, এএসআই ও এক নারী কনষ্টেবলসহ একাধিক সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অহেতুক পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বেনামী অভিযোগ করাতে করাতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কাউছার আলম।
দেশের চলমান জরুরী আইন চলাকালীন সময়েও থেমে থাকেনি ওই গুনধর পুলিশ অফিসার কাউছার আলমের ঘুষ বাণিজ্য। সীমান্তের ওপার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ভারতীয় কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, জাদুকাটা , মাহারাম, শান্তিপুর , কলাগাঁও ছড়া নদী থেকে বিভিন্ন সময়ে বালি পাথর লুট, ও উধ্বর্তন কতৃপক্ষের আদেশে কোন কোন সময় বালি বোঝাই ষ্টিল বডি ট্রলার আটক থেকে এমনকি জব্দের পর থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ভোক্তভোগীদের নিকট থেকে তিনি দু’হাতে ঘুসের টাকা আদায় করেছেন। তার এসব কর্মকান্ডে উপরী আয়ের লক্ষ্যে থানায় থাকা সেকেন্ড অফিসার অপর দুই এসআই ও বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে থাকা অপর এক এএসআই গোপনে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছিলেন।
সম্প্রতি জাদুকাটা নদীতে এক শ্রমিক পানিতে ডুবে মৃত্যুর পর উজানের চর (ভারতীয় চর);র বালি ব্যবসায়ী , শ্রমিক সর্দার এবং মূল ঘটনা আড়াল করতে গিয়ে নিহতের পরিবারের লোকজনকে প্রভাবিত করে নিয়মিত মামলা এড়াতে জেলা ম্যাজিষ্টেটের নিকট ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করিয়ে দিয়ে বিনা ময়নাতদন্তেই মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করিয়ে লাশ বাণিজ্যের আড়ালে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কাওসার চক্র।
থানা এলাকার প্রায় ২৫ থেকে ২৭টি ভারতীয় সেখ নাসির বিড়ির কারবারের কথিত মাদক কারবারি , বিড়ি ব্যবসার আড়ালে থাকা বিদেশি মাদক, গাঁজা কারবারিদের নিকট থেকেও তিনি হাতিয়ে নিতেন মাসোহারা। নদীর দু’তীর জুড়ে থাকা অভেধ পাথর ভাঙ্গার মেশিন মালিকদের নিকট থেকেও নিয়েছেন মাসোহারা। তাহিরপুরে থানায় তার হাতে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০টি সি/আর মামলা থাকায় এগুলো আদালতে প্রতিবেদন না পাঠিয়েও অভিযোগকারি ও অভিযুক্তদের নিকট থেকে দু’হাতে টাকা কামাতে থাকেন।
বিগত সময়ে তাহিরপুরে যুবক শাকিব হত্যাকান্ডে এস/আর মামলা হিসাবে অন্তভুক্ত হওয়ার পর ওই মামলান প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) আসামীদের বিরুদ্ধে মৃত যুবককে আঘাত করার অভিযোগ থাকলেও মামলার তদন্তবকারি অফিসার হিসাবে ক্উাসার আলম আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত, বাধ্য বশিভুত ও যোগাযোগীমূলে কয়েক লাখ টাকা অনৈতিক সুবিধা নেয়ার পর মূল আসামীদের রক্ষায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগ পত্রে কয়েকজন আসামীর বিরুদ্ধে তদন্তে মৃত ব্যাক্তিকে আঘাত করা হয়েছে মর্মে প্রমাণিত হয়নি বলে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন আসামীদের ওই মামলার বাদী অভিযোগ তুলেছেন।
ঘুষ , দূনীতি, অনিয়ম, মামলায় হের ফের করে দু’হাতে টাকা কামানোর মেশিন পুলিশ পরিদর্শক খ্যাত কাওসার নিজের রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও দক্ষিণ বনশ্রী সাউদান পার্ক ০১ এ ফ্লাট নং ১০-ই নিজের মালিকানা দাবী করে ওই আলীশান ফ্লাটে পুলিশের এসপি থেকে আরো উচ্চ পদস্থ অফিসারগণ ভাড়ায় বসবাস করেন, তাই বিরুদ্ধে কোন রকম তদন্ত বা বিভাগীয় মামলা প্রমাণিত হলেও তাকে শাস্তি দেয়ার মত কেউ সাহস করবে না বলেও এসব কথা চাওর করে বেড়ান থানা এলাকা ও আশে পাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের।
মঙ্গলবার রাতে তার বদলী ও ঘুস ,দূনীর্তির নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে তাহিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক কাওসার আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে বলেন আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। বদলীর আদেশ কপি এখনো হাতে পাননি বলেও জানান কাওসার।
পুলিশ হেডকোয়াটার্সের ওই দায়িত্বশীল সুত্রটি জানান, তাহিরপুর থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কাউসার আলমের ব্যাপারে একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলমান রয়েছে।
কাউসার আলম বিভিন্ন সময় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে বেনামী অভিযোগ করে পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার অপেচষ্টা করেছেন। তাহিরপুর থানা থেকে আপাতত তার বদলী হলেও তদন্ত কাজ চলমান থাকবে বলেও জানান পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দায়িত্বশীল সুত্র।