বিশেষ প্রতিবেদক : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হলেও বিসিকে বহাল তবিয়তে আছে স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন কতিপয় পরিচালক। ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্যতম কৌশলবাজ এবং অমানবিক আচরণকারী একজন ব্যক্তি হচ্ছেন মোঃ কামালউদ্দিন বিশ্বাস। যিনি স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার কুটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বিসিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত তার সম্পাদিত কাজের মাধ্যমে।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে অবসরগমণকারী কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত দেনা পাওনা পরিশোধকালীন সময়ে করপোরেশনের পাওনা নগদে পরিশোধ করে চূড়ান্ত পাওনা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান। একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার চাকুরী জীবন শেষ করার পর করপোরেশনের পাওনা লক্ষ লক্ষ টাকা নগদে পরিশোধের আর্থিক সামর্থ্য রাখে না বা থাকে না। একমাত্র স্বৈরাচারী একজন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব এ ধরনের আচরণ করার বা কার্যক্রম করার।
তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে কাজ করে চলেছেন বিসিক পরিচালক পর্ষদের সদস্য পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী।
স্বেচ্ছাছারিতায় যার জুড়ি মেলা ভার। নিয়োগ, বদলী, পদায়ন, পদোন্নতি, গ্রেডেশান তালিকা প্রণয়ন, আর্থিক সুবিধ মঞ্জুরী প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা লংঘন করে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাছারিতা প্রদর্শন করে। শুধু কি তাই-সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে অমানবিক আচরণের কাজ করতে কুন্ঠাবোধ করেন না তিনি। পক্ষপাত মূলক আচরনের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারে তার মতো দ্বিতীয় ব্যক্তি খুঁজে বের করা দুরুহ ব্যাপার।
বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের অপসারিত ৪ জনের প্রতি অন্ধভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বিরত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে। উল্লেখ্য যে, উক্ত ৪ জন যৌথভাবে আবেদন করে বিসিক ভবন এবং বিসিক ভবনস্থ ইউনিয়ন অফিসে আগুন দেয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে আলোকপাত করেছেন এবং এ বিষয়টি ৪ জনের ছবিসহ সবিস্তারে দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের কোন সরকারী দপ্তরে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম বন্ধ করা না হলেও কৌশলবাজ মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন অফিসের চাবি বুঝে নিয়ে ইউনিয়ন অফিস বন্ধ করে রেখেছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণের অজুহাতে তিনি ইউনিয়ন অফিসের চাবি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন-অথচ মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কর্মকর্তা সমিতির কক্ষের চাবি তিনি নেননি। পক্ষপাতমূলক আচরণের উজ্জল নমুনা আর কি হতে পারে? বিসিকের পরিচালক (প্রশাসন) বেমালুম ভুলেই গেছেন ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করবে কর্মচারীদের মনোনীত ব্যক্তিবর্গ, কোন অবস্থাতেই বিসিক কর্তৃপক্ষ বা বিসিকের কোন কর্মকর্তা নই।
অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বে-আইনী কার্যক্রম বিসিক পরিচালক পর্ষদের সদস্য সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত দুজন কর্মকর্তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের একজন কাজী মাহবুবুর রশীদ অপরজন মোঃ আব্দুল মতিন। তারা নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সদস্য হিসাবে নিয়োগ, বদলী, পদায়ন, পদোন্নতি, গ্রেডেশান তালিকা প্রণয়ন, আর্থিক সুবিধা মঞ্জুরী প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা লংঘন করে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাছারিতা প্রদর্শন করে। শুধু কি তাই-সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে অমানবিক আচরণের কাজ করতে কুন্ঠাবোধ করেন না তারা।
তাদের মধ্যে মোঃ আব্দুল মতিন উপ-সচিব পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থেকেও বিসিক ক্যান্টিনের নামে ক্যান্টিন কমিটির আহবায়ক হিসাবে কর্মকর্তাদের জন্য মিলরেটে মেচ পরিচালনা করছেন। যা মুলতঃ একজন কেরানীর কাজ বটে। তাছাড়া তিনি মনির সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত থেকে বেনামে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন মর্মেও অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বিসিকের পরিচালক উপ-সচিব অথচ তাদের নিয়ন্ত্রণে বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক পদে কাজ করছেন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
পর্ষদ সদস্যদের বে-আইনী ও স্বৈরতান্ত্রিক কাজে সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন বিসিকের সরোয়ার সিন্ডিকেট। যারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মোঃ সরোয়ার হোসেন, বিসিকের লবণ সেল প্রধান এব ং সরকারী নিয়মের বত্যয় ঘটিয়ে যিনি লবণ সেল প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন একাধারে ৫ বছরের বেশী সময় ধরে। যার বিরুদ্ধে আয়ের সাথে ব্যয়ের অসংগতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বে-আইনী ভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে।
সরোয়ার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যগন হচ্ছেন: মোঃ হাফিজুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক, বিসিক ক্যামিকেল শিল্প পার্ক, মুন্সীগঞ্জ। যিনি বিসিকে ৪ বছর চাকুরী করে বনে গেছেন কোটিপতি এবং যার বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এই সেই হাফিজুর রহমান যিনি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এর একজন পা চাটা তেলবাজ এবং ৭ জানুয়ারী ২০২৪ এর নির্বাচনের পর দিন নিজের সন্তান নিয়ে মনোহরদিস্থ সাবেক শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বিষয়টি তিনি নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে নিজেই পোষ্ট দিয়ে সারা পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন।
সরোয়ার সিন্ডিকেটের আরেকজন বিশিষ্ট সদস্য হচ্ছেন মোঃ রাশেদুর রহমান, যিনি একনেক অনুমোদিত প্রকল্পের অংগভিত্তিক পরিমাণ কমিয়ে নিজের স্বেচ্ছাছারিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। যার দরুন শিল্পমন্ত্রণালয় হতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং সে আলোকে তাকে বদলী করা হলেও সাবেক শিল্পমন্ত্রীর টেলিফোনিক নির্দেশে তাকে আবার বিসিক প্রধান কার্যালয়ে বদলী করে আনা হয়।
সরোয়ার সিন্ডিকেটের শাসন বিভাগ সংশ্লিষ্ট তিনজন ব্যক্তি হচ্ছেন মোঃ নাজমূল হোসেন, কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান, আসিফ উল হাসান সোহাগ, শৃংখলা শাখার উচ্চৃংখল উপ-ব্যবস্থাপক এবং মোঃ আরিফ হোসেন, কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা। তারা নিয়োগ, বদলী, পদায়ন, পদোন্নতি, গ্রেডেশান তালিকা প্রণয়ন,আর্থিক সুবিধা মঞ্জুরী প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা লংঘন করে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে পাহাড় সমান অভিযোগ উত্থাপিত হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিসিকের স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন কর্তৃপক্ষ।
সরোয়ার সিন্ডিকেটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট সদস্য হচ্ছে মোঃ মনির হোসেন। যিনি বুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সহ-সভাপতি। পরিচালক (প্রকল্প) মোঃ আব্দুল মতিন এর সাথে পারস্পারিক যোগসাজশে অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেরা কাজ করে এবং ঠিকাদারদের নিকট হতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অল্প সময়ে বনেগেছেন কোটিপতি।
স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরপর দেশের অন্যান্য স্বায়ত্ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও সেই ছোঁয়া এখনো বিসিকে লাগেনি।
ফলে কতিপয় পরিচালকের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বহাল তবিয়তে আছেন আ: লীগের সুবিধাভোগী বিসিকের লবণ সেল প্রধান সরোয়ার হোসেন, হাফিজুর রহমান, রাশেদুর রহমান, নাজমুল হোসেন, আসিফ উল হাসান সোহাগ, আরিফ হোসেন এবং মনির হোসেন গংরা।
বিসিকের দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।