রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নবাসীর ন্যায্য অধিকার বিল উন্মুক্ত করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির ৭জন নেতাকর্মী। গত সোমবার (২৬ আগষ্ট) বিকালে উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের তুলসী ক্ষেত্রবাঁধ সংলগ্ন বিল মাইল /শুটকি বিল ও ডুবির বিলে গেলে তারা এ হামলার শিকার হন।
এঘটনায় আহতরা হলেন উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত সামাদ সরকারের ছেলে শাহ আলম সরকার সবুজ, হাততৈড় গ্রামের মৃত নাদের আলীর ছেলে জোনাব আলী, শ্যামপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হাকিম, হাততৈড় গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে জেকের আলী, ডাংগা পাড়া গ্রামের শ্রী শষ্যধরের ছেলে শ্রী নিরেন হালদার, ডাংগাপাড়া গ্রামের বিষ্ণ হালদারের ছেলে প্রসনজিৎ এবং গোয়ালপাড়া গ্রামের হযরত আলীর ছেলে দীলদার। এরা মুলত স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতাকর্মী।
তাদের সকলকেই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের প্রত্যেককে মাথায় লাঠির বাড়িসহ কোপানো হয়। পরে চিকিৎসকরা মাথায় সেলাই শেষে ব্যান্ডেজ দেন। এছাড়াও এ হামলায় গুরুতর হয়েছেন ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা তাঁতিদলের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান হেনাসহ আরো ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তারা সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহতরা জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের উপর এই নগন্য হামলার ছক করেছেন ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মালেক। মালেক ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তিনি তার গ্রামের কতিপয় আওয়ামী লীগের চাটি নেতাদের দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালান। আমাদেরকে নির্মমভাবে পেটায় সন্ত্রাসীরা।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে আওয়ামী লীগ পন্থিরা নানান কৌশলে মোহনপুরের তুলসী ক্ষেত্র বাঁধ সংলগ্ন বিল মাইল শুটকি বিল ও ডুবির বিল তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভোগ করে আসছিলো। বিগত দিনে তাদের নিষেধ করলে তারা দলীয় প্রভাব দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বঞ্চিত করে রাখতো এলাকার জেলে পরিবার ও সাধরণ মানুষদের। এতে মাছে-ভাতে বাঙ্গালী থেকে অসহায় ও মানবেতর জীবন-যাপন করতো ওই এলাকার জন সাধারণরা।
বর্তমানে দেশে স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার পর শাহ আলম সরকার সবুজ, হাকিম, জনাব, জেকের, নিরেন, প্রসেনজিৎ ও দিলদারসহ এলাকার অসহায় মানুষেরা গিয়ে বিলটি উন্মুক্ত দাবি করলে সন্ত্রাসী কায়দায় আব্দুল মালেক ওরফে মালেক চিট, জাফর ইকবাল, আনসার আলী মীর, মাহাবুবুর রহমান টিপু, পলাশ, আসলাম, জোবায়ের, আব্দুল্লাহ, আব্দুর রউফ, কামাল, শরিফুলসহ অন্তত ১৫০ জন এসে হাসুয়া, লোহার রড, পাইপ, হাতুরী, বাটাম ও কাঠের লাঠি দিয়ে তারা হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৭ জন গুরুত্বরভাবে জঘম হয়ে মাটিতে লুটিয়া পড়ে। পরে কাওসার আলী, আজিজুল হক ইয়াছিন আলী, নাইমসহ স্থানীয় লোকজন এসে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসা ব্যবস্থা করায়।
ঘবর পেয়ে থানা পুলিশ ও সামরিক সেনা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার পশ্চিম সিমান্তবর্তী তুলশীক্ষেত্র বাঁধ সংলগ্ন সুটকি বিল, ডুবির বিল এবং বিল মাইল দীর্ঘদিন ধরে দখল রেখে মাছ চাষ করতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে এ আসনে আসাদুজ্জামান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিলটি দখলে নেন আওয়ামীলীগ নেতা মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজার হোসেন বকুল অনুসারীরা। এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবদুল মালেক ওরফে চিটু মালেক সাবেক চেয়ারম্যান বকুল অনুসারীদের নিয়ে বিল তিনটি কুক্ষিগত করেন। দাপট দেখিয়ে বিলগুলো দখলে রাখেন তিনি।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে বিলগুলো দখলে মরিয়া হয়ে উঠা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। আরো জানা গেছে, সুটকি বিলের তলা রাজস্বখাতে লীজ দেয়া রয়েছে। কিন্তু যেটুকু জায়গা লীজ হয়েছে তার কয়েকগুন বেশি জায়গার ধরে মাছ চাষ করেন লীজ গ্রহিতা। বাকি জমির মালিকদের কাছে লীজ না নিয়েই জোর পূর্বক চাষ করেন তিনি।
এদিকে, হামলার ঘটনায় মোহনপুর থানায় শাহ আলম সরকার বাদি হয়ে ৩০ জনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সে অভিযোগে অজ্ঞাত আসামী রয়েছেন ১৫০ জন। অভিযোগটি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মোহনপুর থানার ওসি (তদন্ত) আছের আলী। তিনি জানান, যেভাবে হামলা করা হয়েছে সেটা খুবই নেক্কারজনক। প্রত্যেকের মাথায় এতগুলা সেলাই লেগেছে দেখে অনেকটা অতকে উঠেন তিনি। তিনি বলেন, হামলাকারীরা যেই হোক তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।