ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হলে আজ মঙ্গলবার (২৮ আগষ্ট) বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখার উদ্যোগে দলীয় অফিস হতে একটি আনন্দ মিছিল বেড় হয়ে উপজেলা শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ শেষে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশের সূরা সদস্য ও ঠাকরগাঁও – ২ আসনের ২০ দলীয় জোটের সাবেক প্রার্থী এবং জেলা আমির মুজলুম জননেতা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম।
আরো বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সরিফুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মাওলানা মুশফিকুর রহমান, শেখ আইয়ুব আলী, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জিয়াউল হক জিয়া, উপজেলা জামায়াতের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রশিদ মাষ্টার, দুওসুও ইউনিয়ন জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা বসির উদ্দীন, চাড়োল ইউনিয়ন আমির মাওলানা মুসফিকুর রহমান, ছাত্রশিবির বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা উত্তর শাখা সভাপতি রাজু হাসান, দক্ষিণ শাখার সভাপতি শামিম হোসেন, ভানোর ইউনিয়ন সেক্রেটারি ইলিয়াস আলী, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য মুজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, ইতিপূর্বে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার যেহেতু সরকারি ছুটি, সেজন্য মঙ্গলবার এই নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন।
তিনি বলেছেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কারণ আমরা জানি না। তিনি মনে করেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ ফ্যাসিবাদী ওই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীও সহযোগী শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের পরই দলটির নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল বিভাগে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলে দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, জনগণের ভোটের অধিকার, সভা সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো, জনগণের মৌলিক থেকে বঞ্চিত করেছিল, আমাদের জামাত-বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা হয়রানি করে তারা বিনা ভোটে নির্বাচন করে দেশে অবৈধ সরকার গঠন করেছিলো।
২০০৮ সালে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয় পত্র দাখিল করার পর ভোটে আগের আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে বন্দী করে রেখেছিলো, নির্বাচন প্রচারণাকালে রাজনৈতিক নেতা সন্ত্রাসী মনোভাব নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলো তা জনগণের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলে বিএনপি জামায়াতের সমর্থিত নেতা কর্মীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কথা বার্তা বলতে পারেনি।
১ আগষ্ট জামায়াতের নিবন্ধ বাতিল করেছিলো ৪ দিন পরেই ছাত্র জনতা ও জমায়াত, বিএনপিসহ দেশের জনগণের আন্দোলনের মুখে বিনা ভোটের আওয়ামী লীগের সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে ভারত পাড়ি জমায়।
তিনি উল্লেখ করেন, সংখ্যালঘু বলে কোন কথা নয়, হিন্দু মুসলিম ট্যান বুদ্ধ দেশের নাগরিকের সবার সমান অধিকার রয়েছে, তাই দেশের জনগণ সমান অধিকার ভোগ করবেন।
অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকার আয়নার ঘরে যাদের আটক করে রেখেছিলো তাদের মধ্যে ৩ জনকে ৮ বছর ধরে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে বন্ধী করে রেখেছিলো, তাদের মধ্যে ৩ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৫ দিনেও তাদের জ্ঞান ফিরছে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাওলানা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী শুধু দেশে নয় সাড়া বিশ্বে মুসলিম উম্মার ইসলাম কায়েমে পরিচিতি লাভ করেছে তার মতো একজন মহান নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ১৩ বছর ধরে ১৩ বছর ধরে জেল হাজতে বন্ধ করে রেখেছিল।
তািনি তার সন্তান, স্ত্রীর দেখা করতে চাইলেও তাদেরকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুই ঘন্টা পরে তার মৃত্যু হয়। দেশের নিয়ম অনুযায়ী একজন সাবেক সংসদ সদস্যর মৃত্যু হলে জাতীয় সংসদ প্লাজায় জানাজা হবার নিয়ম থাকলেও সেখানে জানাজা নামাজ না করে তার লাশ পিরোজপুরে পাঠিয়ে দেয়। দেশের জনগণ তার গায়েবানা জানাজা নামাজ আদায় করতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দিতো।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর সেই আপিল খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
তারপর গত ১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, ছাত্রশিবির ও সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর তা খারিজ হয়ে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে।
আলোচনা সভা শেষে বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ও দেশের শান্তি কামনায় দোয়া পাঠ করেন জেলা জামায়াতের আমীর মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হাকিম।