চট্টগ্রামের গণপুর্তের ঠিকাদারি কাজের কমিশন বন্টন তালিকা যথাক্রমে, তত্বাবধায় প্রকৌশলী – ১%, নির্বাহী প্রকৌশলী – ২% নতুন নির্মাণ ও ৪% (সংস্কার), উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী – ৪% (নতুন নির্মান) ও ৬% (সংস্কার) এবং অফিস খরচ – ২%।
নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কাজের অন্তত ২২ শতাংশই ভাগাভাগি করে নিতেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আওয়ামী লীগের ঠিকাদার সিন্ডিকেট। তবে বরাদ্দকৃত অর্ধেক টাকারও কাজ হয়নি কোথাও। ফলে প্রশ্ন উঠেছে কাজের দীর্ঘসূত্রিতা, অযাচিত ব্যয় বৃদ্ধিসহ গুণগত মান নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার সময় দিয়েও এড়িয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকায় এই অবস্থার তৈরী হয়েছে।
আগ্রাবাদের সিজিএস কলোনীর চিত্র এটি। ৬ মাস আগে এই কলোনীর সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করেছে গণপুর্ত। সপ্তাহে ২/৩ দিন গভির রাতে ২/১ ঘন্টা করে কাজ করেই চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না এই কলোনীতে বসবাস করা সরকারী চাকরিজীবীদের।
গণপুর্ত সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো বলছে, ছোট বড় যে কোন কাজ পেতে কর্মকর্তা, কর্মচারী, ঠিকাদার সমিতির নামে শাসক দলের কথিত নেতাদের পেছনে খরচ করতে হয় বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক। ফলে গুণগত মান বজায় রাখতে পারেন না তারা।
ওটিএম, এলটিএম, আরএফকিউ ও কোটেশন এই চার পদ্ধতিতে ঠিকাদারি কাজ চলে গণপুর্তে। এর মধ্যে এলটিএম, আরএফকিউ ও কোটেশন পদ্ধতির ঠিকাদারিকাজ পুরোটা পরিচালিত হয় কর্মকর্তাদের ইচ্ছাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয় আরএফকিউতে। এই পদ্ধতিতে দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ করার বিধান না থাকায় একটি কাজকে কয়েকভাগে ভাগ করে আত্মসাৎ করা হয় সরকারী বরাদ্দ। আর কোটেশনের পুরো টাকায় চলে যায় সিন্ডিকেটের পকেটে। চট্টগ্রামের গণপুর্তের ঠিকাদারি কাজের কমিশন বন্টন তালিকা যথাক্রমে, তত্বাবধায় প্রকৌশলী – ১%, নির্বাহী প্রকৌশলী – ২% নতুন নির্মাণ ও ৪% (সংস্কার), উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী – ৪% (নতুন নির্মান) ও ৬% (সংস্কার) এবং অফিস খরচ – ২%।
প্রতিটি টেন্ডারে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহনের নিয়ম থাকলেও এই নিয়ম মানেনি গণপুর্ত। এছাড়া এসব টেন্ডারে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যা সরকারী চাকরি বিধিরও লঙ্ঘন বলে জানান দুদকের চট্টগ্রামের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ।
অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বাইরে গণপুর্তের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রীত হয় অফিসের নিচে অবস্থিত কথিত ঠিকাদার সমিতির এই অফিস থেকে। গেল ১৫ বছর ধরে যার নেতৃত্ব দিতো আওয়ামীলীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু, মাহমুদুল হক রনি ও শাকিল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রক্ষাপটে নতুন সিন্ডিকেট তৈরীর অপচেষ্টাও শুরু হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।