তদন্ত করছে দুদক : সম্পদের পাহাড় সাবেক  স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ  মালেকের

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

করোনার মহামারিকালে মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় এন-৯৫ নকল মাস্ক বানিয়ে ভুয়া আমদানি দেখিয়েছেন। এসব মাস্ক হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া হতো। এই কাজটির সঙ্গে সরাসরি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালিক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ মিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের মাধ্যমে করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন তথ্য করোনাকালে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমেও উঠে এসেছিল। কিন্তু তার ক্ষমতার দাপটের কাছে দুদকসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দুর্নীতির মহোৎসবের দৃশ্য দেখেছেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির করোনাকালীন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে করোনাভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। টিআইবি অভিযোগ করেছে যে, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরনের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন
সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড.জাহিদ মালিক।

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  : সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন- এই অভিযোগে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে করোনার টিকা, কিট, নকল মাস্ক বানিয়ে ও ভুয়া আমদানি দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা।


বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে ভাগ বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দোর্দ- দাপটের কাছে বাঘে-মোষে এক ঘাটে জল খেতো বলে অভিযোগ আছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দুর্নীতির মহোৎসবের ঘটনা ছিল ওপেন সিক্রেট।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকার সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্নেল এম এ মালেকের ছেলে জাহিদ মালেক। পারিবারিক সূত্রে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মন্ত্রী ও দুইবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের কতিপয় পদধারী নেতাকে নিয়ে গড়ে তোলেন এক বাহিনী। এ  ছাড়া গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেটের এক নতুন সা¤্রাজ্য। তার দুর্নীতির এই সা¤্রাজ্যে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। সিন্ডিকেট বাহিনী দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও ভূমি দখলসহ নানা অপকর্ম করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে বালুমহাল ইজারাদার নিয়ন্ত্রণ করে বিশাল অঙ্কের কমিশন নিতেন তিনি।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের মাধ্যমে পরিবহন চাঁদাবাজির টাকার সিংহভাগ কমিশন নিতেন সাবেক এই মন্ত্রী। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার নামে-বেনামে থাকা সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য। সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুলশানে আলিশান বাড়ি, বনানীতে ১৪ তলা বিটিএ টাওয়ার, মানিকগঞ্জ শহরে ১০তলা বাণিজ্যিক ভবন, সভা সমাবেশ করার জন্য গড়েছেন শুভ্র সেন্টার, বিশাল আলিশান বাড়ি ও বিশাল বড় খামার বাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, যে বিশাল খামার বাড়িটি করেছেন তা তার মায়ের নামে স্কুল করার কথা বলে স্থানীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করে জমি নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে তার পরিবারের মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাখ লাখ গ্রাহকের অর্থ লোপাট করেছেন জাহিদ মালেক। ক্ষমতার দাপটে জাহিদ মালেক এমন কোনো অপকর্ম বাদ দেননি। তার এই সম্পদের উৎসের যাচাইয়ে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে করোনার টিকা, কিট, নকল মাস্ক বানিয়ে ও ভুয়া আমদানি দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এমনকি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে ভাগ বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। দুর্নীতির এসব টাকা দিয়ে নামে বেনামে ব্যবহার করে এক ডজনের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

ঢাকার গুলশানে আলিশান বাড়ি, গ্রামের বাড়িতে মায়ের নামে বিশাল বাগান বাড়ি, এগ্রো ফার্ম, বনানীতে ১৪ তলা ও মানিকগঞ্জে ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন, সভা সেমিনার করার জন্য মানিকগঞ্জে নিজ ছেলের নামে বিশাল মিলনায়তন শুভ্র সেন্টার, বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বিডি থাইফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, রাহাত রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, বিডি সানলাইফ ব্রোকারেজ হাউস লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠান করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এইসব সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছিলেন তিনি। তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের উৎসের সন্ধান করছে দুদক ও বিভিন্ন সংস্থা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার মহামারিকালে মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় এন-৯৫ নকল মাস্ক বানিয়ে ভুয়া আমদানি দেখিয়েছেন। এসব মাস্ক হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া হতো। এই কাজটির সঙ্গে সরাসরি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালিক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ মিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের মাধ্যমে করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন তথ্য করোনাকালে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমেও উঠে এসেছিল। কিন্তু তার ক্ষমতার দাপটের কাছে দুদকসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দুর্নীতির মহোৎসবের দৃশ্য দেখেছেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির করোনাকালীন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে করোনাভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।

টিআইবি অভিযোগ করেছে যে, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরনের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সারা দেশের লাখ লাখ গ্রাহকে হয়রানি করছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নিয়ন্ত্রণাধীন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। গ্রাহকের টাকা দিতে না পেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মামলা করা হয়। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হয়। আদালত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ড. রুবিনা হামিদ, সিইও মোহম্মদ নূরুল ইসলাম ও ডিএমডি সুমনা পারভীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এটির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর বোন অধ্যাপক রুবিনা হামিদ। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেক, ছেলে রাহাত মালেক ও বোন রুবিনা হামিদের স্বামী কাজী আখতার হামিদ। রুবিনা হামিদের আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে (আইডিআরএ) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষিত হিসাব অনুসারে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ছিল ১৯২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। অর্থাৎ আইন অনুসারে কোম্পানিটি ব্যবসা পরিচালনায় যে ব্যয় করতে পারে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত ব্যয় করা এসব টাকার ৯০ শতাংশই বিমা গ্রাহকের জমাকৃত টাকা। এ কারণে গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর ১৯৮৪ সালে বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় কর্মজীবন শুরু করেন। রাজনীতির পাশাপাশি নতুন নতুন ব্যবসায় হাত দেন এই তরুণ যুবক। বাবা আব্দুল মালেকের দিক নির্দেশনায় গড়ে তুলেন বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বিডি থাইফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, রাহাত রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, বিডি সানলাইফ ব্রোকারেজ হাউস লিমিটেডের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে তিন সন্তানের জনক জাহিদ মালেকের সহধর্মিণীর মিসেস শাবানা মালেকসহ সন্তানরা তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জাহিদ মালেক তার মায়ের নামে বিশাল বাগান বাড়ি এবং এগ্রো ফার্ম তৈরি করতে গিয়ে এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে জমি জবরদখল করে নিয়েছেন। জমি নিয়ে ন্যায্য দাম দেননি। তাদের বলেছিলেন স্কুল করবেন, করেছেন বাগান বাড়ি ও কৃষি খামার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এবং তার ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।

জাহিদ মালেক স্বপনের নির্বাচনের হলফনামা সম্পদ বেড়েছে ১১ গুণ। মানিকগঞ্জ-৩ (সদর ও সাটুরিয়া) আসনের প্রার্থী জাহিদ মালেকের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো জয় লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তার আয় ও সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর সিন্ডিকেট গড়ে তুলে স্বাস্থ্য বিভাগে রীতিমতো হরিলুট করেছে যা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।

সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এবং তার ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।

বিএফআইইউর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হিসাব জব্দ করাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে জাহিদ মালেক তার মেয়ে সিন্থিয়া মালেক, ছেলে রাহাত মালেকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাব-সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন- হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আশ-শামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানের পক্ষে আবেদনটি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। আবেদনে বলা হয়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের সাবেক ১৪ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাই তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। দুদক আদালতকে জানায়, তারা সবাই অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। আদালতের আদেশের একটি অনুলিপি স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপারের (ইমিগ্রেশন) কাছে পাঠিয়েছেন বিচারক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগেই ব্যাঙ্ককে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত ১৪ জুলাই বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্ক রোডের বাসা থেকে থাই এয়ারওয়েজে একটি ফ্লাইটে ব্যাঙ্ককে যান মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফোনে ও তার এপিএস ফারুক আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *