নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১৫ বছরে সাংবাদিক নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করার অভিযোগ এনে দুদকের অনুসন্ধান চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া নিজাম উদ্দিন ভূইয়া (নঈম নিজাম) এখন বিলিয়নিয়ার। কি নেই তার! আমেরিকায় বাড়ি, উত্তরায় বাড়ি, গাজীপুরে বাগান বাড়ি, বসুন্ধরায় একাধিক ফ্ল্যাট। রয়েছে চারের অধিক দামি গাড়ি। স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে বানিয়েছেন সংরক্ষিত কোটায় এমপি। এমন কোনো সুযোগ নেই যা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে নেননি। শেখ হাসিনার দালালি করে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি অর্থ।
সংবাদ প্রকাশের নামে ব্লাক মেইল করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীর অভিজাত ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন। মিডিয়া ক্লাবের নামে নিজেই নিয়েছেন মদ বিক্রিয় লাইসেন্স।
শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে দেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোয়ারা নিতেন কোটি কোটি টাকা। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার নামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে মিথ্যা নিউজ প্রকাশ করতেন। এরপর করতেন প্রতিবাদ বাণিজ্য।
নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন গত ১৫ বছরে প্রতিমাসে ১/২ বার আমেরিকায় যেতেন। অভিযোগ রয়েছে প্রতিবার যাওয়ার সময় তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তার একাধিক কাছের লোক জানিয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছে।
নঈম নিজামের সাংবাদিকতা পেশা যেন হয়ে উঠেছে অবৈধ উপার্জন ও পক্ষপাতের পুস্তকীয় উদাহরণ। এমনই একজন সাংবাদিক নঈম নিজাম, যিনি একাধারে ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক এবং টেলিভিশন চ্যানেল NEWS24 ও Radio Capital FM -এর সিইও। নিজে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে বানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি।
নঈম নিজামের বিরুদ্ধে সমালোচনা তুঙ্গে উঠে- প্রথমত, যখন তিনি পেশাগত নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে বসুন্ধরা সকল অপকর্মকে ঢেকে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে; এবং দ্বিতীয়ত, যখন সে সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে আওয়ামী দালাল সরকার কর্তৃক প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে।
নঈম নিজাম ১/১১-এর সময় DGFI-এর ফজলুল বারির সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নঈম নিজাম নিজের অবস্থান শক্ত করে নেন। তিনি সে সময়ে বলে দিতেন রাজনীতির মাঠে কাকে ধরতে হবে কাকে ছাড়তে হবে। সাংবাদিক নঈম নিজামের কোন ডিগ্রী নেই; এজন্য অনেক পেশাদার সাংবাদিক অফ দা রেকর্ডে নঈম নিজামকে অর্ধশিক্ষিত হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ফাইনেন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) একবার নঈম নিজামের ব্যাংক হিসাব তলব করে। সাধারণত একাউন্টে কোন অস্বাভাবিক লেনদেন দেখলে বা মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ থাকলে বা টাকা পাচারের আলামত পেলে BFIU কারো ব্যাংক হিসাব তলব করে থাকে। BFIU ১১ জন সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে, যাদের মধ্যে নঈম নিজামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের নাম রয়েছে।
এই দম্পতি শুধু যে নিজেদের পকেট মোটা করেছে তা নয়, তাদের দুই ছেলে-মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়িয়েছে আমেরিকার ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। নঈম নিজাম ও তার স্ত্রীর মত সাংবাদিকরা টিকেই আছে ক্ষমতাবানদের পদলেহন করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করতে।
শেখ হাসিনা যখন ছাত্রদের গণহত্যা করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দিশাহারা হয়ে পড়ে। তখন গণভবনে সিনিয়র সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নঈম নিজাম গণহত্যা চালিয়ে ও বল প্রয়োগ করে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের পরামর্শ দেন এই নঈম নিজাম।
শেখ হাসিনার পতনের পর অনেকের নামে হত্যা মামলা ও দুদক কর্তৃক অনুসন্ধান শুরু হলেও নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তাই নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সৃষ্ট তদন্ত ও নানা অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, নঈম নিজাম যে কোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।