নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থ পাচারের অভিযোগে ছয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হচ্ছে: আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়াও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকের নতুন পরিচলান পর্ষদেও ঘুরে ফিরে নাম আসছে এস আলম গ্রুপের আত্বীয় আত্মীয় স্বজন এবং ঘনিষ্টজনদের নাম। এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্টজন কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকেও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হলে বিষয়টি সরকার বুঝতে পেরে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেন। তথ্যমতে বিভিন্ন অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতিতে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ৮টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠনের জন্য বিবেচনায় রয়েছে আরও ৬টি ব্যাংক।
যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে শিল্পগ্রুপ এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ভাই আব্দুস সামাদ লাবু সরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের আত্মীয় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কেডিএস গ্রুপের সেলিম রহমানকে। ঘুরে ফিরে ব্যাংকগুলো এস আলম গ্রুপের আত্বীয় স্বজনদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে সূত্রে জানায়।
শিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রনাধিন থেকে চট্টগ্রামভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠজন। চট্টগ্রামে তাদের বাড়িও একই জায়গায়। এস আলম গ্রুপ ওই সময় পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোকজনকে বসায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাব খাটিয়ে।
এদের মধ্যে ছিলেন এস আলম গ্রুপের প্রধাান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সুব্রত কুমার ভৌমিকের স্ত্রী রত্না দত্ত, এস আলম গ্রুপের আইনজীবী এহসানুল করিমসহ আরও অনেকে।এছাড়া এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএফআইসি, সমস্যাগ্রস্ত এবি, পদ্মা ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হলেও কৌশলগত কারণে এখনই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে না
তবে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রধান কার্যালয়ের অনেকে ফোনও ধরছেন না। বরং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তদের কেউ কেউ এরই মধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন। অবশ্য ঋণের নামে যেন নতুন করে অর্থ বের করতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা বের করতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল কাজ করছে।
ইতিমধ্যে পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসছে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এসব ব্যাংকের ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী, বন্ধকি সম্পত্তির চিত্র, আদায় পরিকল্পনা, তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে ভাবনা এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে।
এছাড়া আমানতকারীর টাকা ফেরতে ব্যাংকগুলো কী ভাবছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। জানা গেছে, মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ব্যাংকটি এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদও পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে ইউসিবির নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ আসতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত ও আদায় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রতিবেদন আনতে হবে। এসব ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি বা জামানত থেকে কী পরিমাণ ঋণ আদায় করা সম্ভব। এ ছাড়া ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা আনতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে– ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে পরিকল্পনা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব ঋণাত্মক থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। নগদ জমা সংরক্ষণ অনুপাত (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) ঘাটতি মেটানোর উপায় জানাতে বলা হয়েছে।