ভারতে পাহাড়ের গহীনে থাকা কোয়ারি ধ্বসে বাংলাদেশি কয়লা শ্রমিক নিহত

Uncategorized আন্তর্জাতিক দুর্ঘটনার সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন মানবিক খবর

বিশেষ প্রতিবেদক :  ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে কোয়রি ধ্বসে চাঁপা পড়ে আবুল মিয়া নামে বাংলাদেশি কয়লা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত আবুল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও বিওপির নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত গ্রাম কলাগাঁও পশ্চিম পাড়ার আলকাছ মিয়ার ছেলে। রবিবার বেলা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সীমান্ত গ্রাম কলাগাঁও’র বাসিন্দা রাশীদ কবির ওই শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।


বিজ্ঞাপন

রবিবার দুপুরে তাহিরপুরের চারাগাঁও সীমান্তের একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন রাতের ন্যায় রবিবার ভোর রাত ০৪টার দিকে চারাগাঁও বিওপি নিয়ন্ত্রিত কলাগাঁও-পশ্চিমপাড়া, জঙ্গলবাড়ি, চারাগাঁও মাইজহাটি সীমান্ত গ্রামের এক থেকে দেড় শতাধিক শ্রমিক ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে থাকা চোরাচালানের কয়লা উক্তোলন করতে যায়।


বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ -ভারত চারাগাঁও সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৫-১১৯৪ এর সাব পিলার সংলগ্ন সীমান্তের জিরো লাইন অতিক্রম করে ওইসব শ্রমিক অবৈধ অনু প্রবেশের মাধ্যমে মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে একটি কয়লা কোয়রি ধ্বসে কয়লা (চালি) চাঁপা পড়ে বাংলাদেশি বেশ ক’জন শ্রমিক হতাহত হন। হতাহতদের মধ্যে সাথে থাকা অন্য শ্রমিকরা কয়লা কোয়ারির কয়লা চাঁপার স্তুপ থেকে শ্রমিক আবুলের মরদেহ উদ্যার করেন।
সীমান্ত গ্রামবাসীর ধারণা আরো একাধিক শ্রমিক হতাহত হয়ে মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে থাকা ওই কয়লা কোয়ারির কয়লা স্তুুপে চাঁপা পড়েছেন।

সীমান্তবাসীর অভিযোগ তাহিরপুরের চাঁরাগাঁও সীমান্তের একাধিক চোরাচালান রুট দিয়ে ওই সীমান্তের সীমান্ত গ্রাম কলাগাঁও পশ্চিম পাড়ার মৃত জয়দরের ছেলে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি একাধিক মামলার আসামি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত অস্ত্র চোরাকারবারি প্রয়াত নজরুলের সহোদর ভাই এমরুল হাসান ওরফে ট্রলি এমরুল, তার ভাই রাসেল আহমদ, চাচাত ভাই শামীম আহমদ ওরফে হাতকাটা শামীম, চারাগাঁও’র মাইজহাটির বশিরের ছেলে সোহেল আহমদ ওরফে হলদি সোহেল, তার চাচা মৃত রশীদের ছেলে সাবুল, মৃত আকবর আলীর ছেলে আউয়াল মিয়া, সোর্স শফিকুল ইসলাম ওরফে ভৈরব্যা, কাচুঁর ছেলে সোহেল ওরফে (চুনাপাথর চোরাকারবকারি) পাথ্বর সোহেল, জঙ্গলবাড়ির মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে হরযত আলী ওরফে বোতলী , জঙ্লবাড়ির মৃত মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মহালদারের ছেলে সোর্স সাইফুল ইসলাম ওরফে ছিলা সাইফুল সহ একদল চিহ্নিত চোরাকারবারি এলসির কয়লার ব্যবসার নাম করে নিজেরাই চোরাচালানের কয়লা কেনা বেচা ও ভারতে অবৈধভাবে হতদরিদ্র শ্রমিকদের কয়লা কোয়ারির মৃতু্্যর ফাঁদে পাঠায় দিবারাত্রী।

এরপর কখণো কলাগাঁও ছাড়া নদীর নৌপথে আবার কখনো কখনো চারাগাঁও শুল্ক ষ্ষ্টেশনের বিভিন্ন ভাড়াকৃত ডিপোতে মজুদ করে এসব চোরাচালানের কয়লা দেশের বিভিন্ন মোকামে পরিবেশ করে আসছিলো নিয়মিত ভাবে।

এসব চোরাচালানের কয়লা বিপরীতে একই চক্রের সদস্যরা নিজেরাই গ্রুপে বিবক্ত হয়ে বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, কথিত কয়েকজন সাংবাদিকের নামে চাঁদা আদায় করে আসছিলো হতদরিদ্র শ্রমিক ও তাদের গ্রুপের বাহিরে থাকা বিভিন্ন কয়লা চোরাকারবারি চক্রের নিকট থেকে।

অভিযুক্তদের অনেকেই সরকারের পতনের পর আত্বগোপনে থাকায় তাদের কোনরেকম বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের কারো কারো মুঠোফোন বন্ধ থাকায় মুঠোফোনেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ছ.মাসের ব্যবধানে তাহিরপুরের টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও বিওপির বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে মেঘালয় পাহাড়ের বিভিন্ন গহীন কোয়ারি থেকে চোরাচালানের কয়লা উক্তোলন করতে গিয়ে কয়লা কোয়ারি কয়লার চালি বা মাটি ধ্বসে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ জন কয়লা শ্রমিক নিহত হন।

সম্প্রতি উপজেলার বালিয়াঘাট -টেকেরঘাট বিওপির বিজিবি নিয়ন্ত্রিত এলাকার ওপারে মেঘালয়ের পাহাড়ে কোয়রি থেকে অবৈধভাবে কয়লা উক্তোলন করতে গেলে সেখানকার গারো বস্তির ৩০/৩৫ জন সদস্য সংঘবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশি চার শ্রমিককে বেধরকভাবে পিঠিয়ে বস্তির নিচে ফেলে রাখে। এরপুর্বে বালিয়াঘাট বিওপির বিজিবি’র ক্যাম্প কমান্ডার সহ টহল দলের উপর ওই সীমান্তের কয়লা চোরকারবারিরা হামলা করে আহত করে।

রবিবার দুপুরে এ বিষয়ে জানতে ২৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সুনামগঞ্জের তাহিরপুর চারাগাঁও বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার আব্দুর রহিম সাথে যোগোযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছি বলেই নিহত শ্রমিকের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তাহিরপুর থানার ওসি এস, এম মাইন উদ্দিন বলেন , নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এরপর রবিবার দুপুরে একই বিষয়ে জানতে ২৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সুনামগঞ্জ অধিনায়ক লে.কর্ণেল একে এম জাকারিয়া কাদিরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধ অনুপ্রেবেশের মাধ্যমে কয়লা উক্তোলন করতে গিয়ে একজন বাংলাদেশি কয়লা শ্রমিক নিহত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলেও জানান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *