ফরিদপুর প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর ভাঙনের দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করছেন নদীর পাড়ের মানুষ। ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা। নদীরপাড় সংলগ্ন রাস্তা ইতোমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙা শুরু হয়েছে।
এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। প্রতি বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা যায়। গত এক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে জেলার শয়তান খালি, চন্দ্রপাড়া ট্রলারঘাট, গোপালপুর ঘাটসহ আশপাশের এলাকা। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ের শত শত একর ফসলি জমি, বসত বাড়ি ও কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। স্থানীয়রা মনে করছেন, ভাঙন রোধে ঝঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হলে ভাঙন থেকে সমাধান পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের সয়তান খালি ঘাট, চন্দ্রপাড়া ঘাট ও আকোটেরচর ইউনিয়নের আকোটের হাট সংলগ্ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী। এখানে রয়েছে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে মাত্র ৫শ গজ দূরেই পদ্মানদীর অবস্থান।
এছাড়া উপজেলার নাড়িকেল বাড়ীয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, কাচিকাটা গ্রাম, ফকির কান্দি, তালপট্টির চর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদার কান্দি গ্রাম। অপরদিকে, আড়িয়াল খাঁ নদীর স্রোতে উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দূর্বারটেক, মফিজদ্দিনের কান্দি, হাফেজ কান্দি, চরগজারিয়া, গিয়াস উদ্দীন মুন্সীর কান্দি গ্রাম ভাঙছে।
চরভদ্রাসন উপজেলার উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপি ডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রাম।
খোকারাম সরকারের ডাঙ্গীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা দেবাশীষ দাস জানান, আমরা ভালো আছি, সরকার আমাদের ভালই দিয়েছে। কিন্তু পদ্মায় তো সব লইয়া যাবে।
প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়। আমরা এই ভাঙন থেকে মুক্তি চাই। ফকির ব্রিকসের মালিক এখলাস আলী ফকির জানান, সয়তান খালি ঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে, আমার ভাটা প্রায় ঘাট এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছিলো এখন ভাঙন হয়ে নদী প্রায় আমার ভাটার কাছে চলে এসেছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হব।
উপজেলার দিয়ারা নাড়িকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন সরদার জানান, ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ২ বছরে ইউনিয়নের ১ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছি। ভাঙন রোধে স্থায়ী ভাবে পদক্ষেপ নিতে জনগণের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
চরনাসিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রোকন উদ্দিন জানান, সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নদী শাসন না করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। আমি ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে স্থায়ী সমাধান কামনা করছি।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শশাংক কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হবে। এরপর বরাদ্দ এলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।