বিসিকের আলোচিত ও সমালোচিত ৫ জন কর্মকর্তা।
বিশেষ প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যাহত করার জন্য বিতর্কিত কাজ করে চলেছেন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ব্যক্তিগণ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের একটি আদেশের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং পতিত আওয়ামী লীগের সময়কালে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং সুবিধাভোগী জাফর বায়েজিদ নামক একজনকে সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত বিসিক মুদ্রন শিল্প নগরী প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের আদেশ জারী করা হয়েছে, যার স্মারক নং-৩৬.০০.০০০০.০৮৫.১৪.০০৭.২২-৪৭। যে ব্যক্তি সিরাজগঞ্জ অবস্থান করে সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক প্রকল্পের ভৌত নির্মান কাজ আজ অবধি শেষ করতে পারেননি, তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে মুন্সীগঞ্জস্থ মুদ্রন শিল্প নগরীর কাজ কিভাবে সম্পাদন করবে-তা বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনাযোগ্য। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ আদেশটি কোন অবস্থাতেই সুবিবেচনা প্রসূত নয়।
আদেশটির যৌক্তিকতা এবং বাস্তবতা সহজেই অনুমেয়। স্বগোত্রের একজনকে সুবিধা প্রদানের জন্য এ ধরনের একটি আদেশ জারীর ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন বিসিক কেমিকেল শিল্প পার্ক, মুন্সীগঞ্জ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান এবং বুয়েট ছত্রলীগের সাবেক পদস্থ নেতা মোঃ রাশেদুর রহমান। উক্ত দুজন বিসিকের টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য এবং গোপালগঞ্জবাসী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নুরুল আমিন এর বাসায় প্রতিদিনের বাজার সরবরাহকারী।
অতিরিক্ত সচিবের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ম্যানেজ করে আদেশটি জারীর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে করে তারা প্রকল্পের সমুদয় টেন্ডার কাজ নির্বিঘ্নে নিজেরা সম্পাদন করতে পারে। তাদের এ ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে মুন্সীগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের একটি অসংগতিপূর্ণ আদেশ কেন জারী করাবেন?
স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হলেও বিসিকে বহাল তবিয়তে আছে স্বৈরাচারী হাসিনার সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গ। এ বিষয়ে বিগত ২৫শে আগষ্ট ২০২৪ তারিখে সবিস্তারে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে কোন প্রতিবাদলিপি পাওয়া যায়নি। প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন সর্বাংশে সঠিক হলেও কোন প্রকার ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি সরকারের তরফ হতে।
অনিয়ম, অব্যাবস্থাপনা, বে-আইনী কার্যক্রম বিসিক পরিচালক পর্ষদের সদস্য সরকারের উপ-সচিব পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের একজন মোঃ আব্দুল মতিন, যিনি বেনামে বিসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারী কাজের সাথে যুক্ত।
মতিন সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যগণ হয়েছেন মোঃ হাফিজুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক, বিসিক কেমিকেল শিল্প পার্ক, মুন্সীগঞ্জ। যিনি বিসিকে ৪ বছর চাকুরী করে বনে গেছেন কোটিপতি এবং যার বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এই সেই হাফিজুর রহমান যিনি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এর একজন পা চাটা তেলবাজ এবং ৭ জানুয়ারী ২০২৪ এর নির্বাচনের পরদিন নিজের সন্তান নিয়ে মনোহরদী¯’ সাবেক শিল্প মন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শুভে”ছা জানান। বিষয়টি তিনি নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে নিজেই পোষ্ট দিয়ে সারা পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন।
মতিন সিন্ডিকেটের আরেকজন বিশিষ্ট সদস্য হয়েছেন মোঃ রাশেদুর রহমান, যিনি একনেক অনুমোদিত প্রকল্পের অংগভিত্তিক পরিমাণ কমিয়ে নিজের স্বে”ছাছারিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। যার দরুন শিল্প মন্ত্রণালয় হতে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং সে আলোকে তাকে বদলী করা হলেও সাবেক শিল্প মন্ত্রীর টেলিফোনিক নির্দেশে তাকে আবার বিসিক প্রধান কার্যালয়ে বদলী করে আনা হয়।
মতিন সিন্ডিকেটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট সদস্য হ”েছ মোঃ মনির হোসেন, যিনি বুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বা এজিএস। পরিচালক (প্রকল্প) মোঃ আব্দুল মতিন এর সাথে পারস্পারিক যোগসাজশে অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেরা কাজ করে এবং ঠিকাদারদের নিকট হতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অল্প সময়ে বনে গেছেন কোটিপতি।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর পর দেশের অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে পরিবর্তন এর ছোঁয়া লাগলেও বিসিকে বহাল তবিয়তে আছে মোঃ আব্দুল মতিন, হাফিজুর রহমান, রাশেদুর রহমান এবং মনির হোসেন গংরা। যারা স্বৈরাচারী সরকারের অন্যতম সমর্থক, সে সময়ের সুবিধাভোগী, স্বে”ছাচারি । দ্রত সংস্কার প্রয়োজন বিসিক নামক প্রতিষ্ঠানটিতে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জাফর বায়েজিদ এর মুদ্রন শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালনের আদেশটি বাতিল করা প্রয়োজন। এরই সাথে প্রয়োজন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীদের বর্তমান কার্যালয় হতে প্রত্যাহার করা। স্বৈরাচারের দোসররা বহাল তবিয়তে থাকলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার সকল কৌশল প্রয়োগ করবে তারা-এটা ভুলে গেলে চলবেনা। সম্মানীত শিল্প উপদেষ্টা এ বিষয়ে ব্যক্তগতভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন দেশবাসী।