নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকগণকে সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে গণ্য না করে একটি পৃথক সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করে এদেশে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ এর দ্বার উন্মোচিত হয়।
উক্ত মামলার অন্যতম আইনজীবী ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এর পিতা প্রয়াত ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। মাসদার হোসেন মামলার অন্যতম দরখাস্তকারী সাবেক জেলা জজ মোঃ মাসদার হোসেন গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর, বেলা সাড়ে ১২ টায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’র সাথে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
সাক্ষাতকালে তিনি দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকগণের পক্ষে মাসদার হোসেন মামলা পরিচালনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এর অবদান সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে সম্পূর্ণ স্বপ্রণোদিত ভাবে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে মামলাটি পরিচালনা করে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ যে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন সেই অবদানকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এর সদস্যগণ আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।
বিশেষ করে, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ব্লু-প্রিন্ট প্রস্তুত থাকার পরেও তৎকালীন রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ কার্যকর না হওয়ার প্রেক্ষাপটে মাসদার হোসেন চট্টগ্রামে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এর এক সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির কাছে প্রকাশ করেন যে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ চট্টগ্রামে তার কাছে ব্যক্ত করেছিলেন যে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ এর বাস্তবায়ন তিনি তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যেতে চান।
তারই সূত্র ধরে, মাসদার হোসেন গত ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত রোডম্যাপে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রীকরণের রূপরেখা ফুটে উঠেছে বলে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, প্রধান বিচারপতির হাত ধরেই বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ চূড়ান্তরূপে বাস্তবায়ন হবে।
উল্লেখ্য, মাসদার হোসেন মামলার রায় ১৯৯৯ সালে ২ ডিসেম্বর ঘোষিত হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারসমূহ উক্ত রায় বাস্তবায়ন করেনি। অতঃপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে পৃথক জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন করে।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি গত ২১ সেপ্টেম্বর, দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি অভিভাষণ প্রদানকালে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসহ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পরিপূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরেন।