সরকারি-বেসরসারি সম্পদ লুটপাট করেছেন এপিএস লিকু, এপিএস মনির হোসেন, এপিএস এমদাদুর হক, এপিএস সাহাবুদ্দিন  এবং এপিএস মীর মোশাররফ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মন্ত্রী-এমপিদের চমকে যাওয়ার মতো সম্পদের খবর বেরিয়ে আসছে। গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিরা যে সম্পদ লুটপাটে বুঁদ ছিলেন, তা তাদের সম্পদের বিবরণ থেকে স্পষ্ঠ হয়ে উঠে।


বিজ্ঞাপন

তবে সম্পদ লুটপাটে পিছিয়ে নেই মন্ত্রী-এমপিদের এপিএসরাও। তারাও সমানতালে সরকারি-বেসরসারি সম্পদ লুটপাট করেছেন। তাদের ঘরেও আলাদিনের চেরাগ পড়েছে। তেমনিপাঁচ এপিসের সম্পদ বাহারি কিছু তথ্য প্রকাশ করা হলো, এই পাঁচ এপিএস রা যথাক্রমে এপিএস লিকু, এপিএস মনির হোসেন, এপিএস এমদাদুর হক, এপিএস সাহাবুদ্দিন  এবং এপিএস মীর মোশাররফ। নিম্নে আলোচিত ও সমালোচিত পাঁচ এপিএস এর সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হলো।


বিজ্ঞাপন

এপিএস লিকুর সম্পদ  :  ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) হাফিজুর রহমান লিকুর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জে তার ৫০০ বিঘার বেশি জমি রয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট, প্লট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এই লিকু শেখ হাসিনা যখন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, তখন তার দেহরক্ষী ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর লিকুকে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।তারপর তাকে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এসব দায়িত্ব পালনকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। হাফিজুর রহমান লিকু দায়িত্ব পালনকালে গাবতলি বাস টার্মিনাল ইজারা নেন। এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে বেনামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ হাতিয়ে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানে কমিটিতে পদ পাইয়ে দিতে তদবির বাণিজ্যে নেমে পড়েন। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন। লিকু নিজ জেলা গোপালগঞ্জে ৫০০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া ঢাকার বসিলা মধু সিটিতে দেড় বিঘা জমিতে নির্মাণ করেছেন ১০তলা ভবন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তার অনেক সম্পদ রয়েছে। গোপালগঞ্জে তার ভাই-বোন ও শ্যালকসহ আত্মীয়-স্বজনের নামে বাড়ি, গাড়ি, মাছের খামার ও ঘের নির্মাণ করেছেন। তার পরিবারের নামে রয়েছে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গগামী ওয়েলকাম পরিবহনের মালিকানা।

এপিএস মনির হোসেন  :  মনির হোসেন ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এপিএস। আসাদুজ্জামান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই মনির হোসেনের একটি চক্র ঘুষ হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা দিতো। পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করা হতো বলে জানা গেছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো এপিএস মনিরের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। দুর্নীতি দমন কমিশনে এপিএস মনির হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হওয়ার পর গত ১৫ আগস্ট অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

এপিএস এমদাদুর হক  : এক যুগের বেশি সময় ধরে এমদাদুল হক সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজধানীতে নামে-বেনামে গড়েছেন স্থাবর-অস্থাবর অঢেল সম্পদ। চলতি বছরের ২০ মার্চ দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস অনুসন্ধান করছেন। এমদাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, একজন এপিএস ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ হাজার ১০ টাকা বেতন পান। সেই হিসাবে এমদাদুল হক গত ১৩ বছরে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বেতন পাওয়ার কথা। অথচ তার দক্ষিণ বনশ্রী জামে মসজিদ-৪ এর কাছে বিশাল ভবন, কে-ব্লকের ১৩/৩ নম্বর রোডের ৩০/বি-৩০/সিতে বাড়ি, বাসাবোতে একটি ১০তলা ভবনে আটটি ফ্ল্যাট, একই এলাকার ছয়তলা আরেকটি ভবনে রয়েছে দুইটি ফ্ল্যাট। উত্তর বাসাবোর ৩৬ নম্বরে বেস্ট লিভিং লিমিটেডে অ্যাপার্টমেন্ট, রিমঝিম আবাসনের ১৫ শতাংশ শেয়ার, রূপগঞ্জের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প থেকে নামে-বেনামে প্লট গ্রহণসহ আরও অনেক সম্পদ রয়েছে।

এপিএস সাহাবুদ্দিন  :  মো. সাহাবুদ্দিন ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের ছোট ভাই। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি তার ছোট ভাইকে এপিএস হিসাবে নিয়োগ দেন। মো. সাহাবুদ্দিন এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার তার মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়কে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, হৃদয়ের স্বামী মেহেরাব পাটোয়ারীকে সহকারী পরিচালক এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের সহায়তায় গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলের সহকারী পরিচালক পদে বোনের ছেলে এ এম ইয়াসিনকে নিয়োগ প্রদান করেন। নিয়োগের পর তাদেরকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হলে পুরো মন্ত্রণালয় নিজেদের কবজায় নেন। পরে তারা সিন্ডিকেট করে কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেন যাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। মো. সাহাবুদ্দিন কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলের টাকা লোপাট করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর এপিএস সাহাবুদ্দিন ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

এপিএস মীর মোশাররফ  :  মীর মোশাররফ হোসেন ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মোহাম্মদ নাসিমের এপিএস । তিনি প্রভাব খাটিয়ে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের পরিচালক (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব ভাগিয়ে নেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেশীভাগ ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। মীর মোশাররফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যন্ত্রপাতি ও এমএসআর সামগ্রী সরবরাহে সহায়তার মাধ্যমে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে বিপুল পরিমাণ অজ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক তার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি তাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়াও মীর মোশাররফ হোসেন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ায় সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ গ্রহণের চেষ্টা-তদবির করেছিলেন। এ জন্য তিনি বিস্তর টাকা-কড়িও খরচ করেছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে কামিয়াবি হননি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *