ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে চলমান সহিংসতার এ পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে চলমান ঘটনাবলীকে ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
দেশটির বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ ও বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিলো গত রোববার, যা পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে বেশিরভাগ ঘটনায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে মুসলমান ও হিন্দু—এই ২ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও অন্তত ১৯০ জন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধসহ সব ধরনের হামলার শিকার ব্যক্তিরাই আছেন।
সংর্ঘষের তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে দিল্লির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে। তবে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন ও মৌজপুর চক থেকে বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ-বিপক্ষের মানুষেরা এখানে পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো।
আজ বুধবার সকাল নাগাদ পুরো এলাকায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল গভীর রাতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সহিংসতা হয়েছে এমন কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছেন এবং শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সিলমপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর এবং গোকুলপুরি চক এলাকা পরিদর্শন করেন।
দিল্লিতে ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষিতে আজ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি। অজিত দোভাল এই কমিটির সামনে বর্তমান পরিস্থিতির বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ধর্মীয় এই সহিংসতার কারণে স্কুল বন্ধ আছে এবং বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ওদিকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীরা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে মঙ্গলবার রাতেই। তবে পুলিশ জলকামান দিয়ে রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আবার রাতেই এক নজিরবিহীন আদেশে হাইকোর্ট ৩দিন ধরে চলা সহিংসতায় আহতদের নিরাপদে হাসপাতালে নেয়া ও জরুরি চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসনকে। বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের পিটিশনের শুনানি হয়েছে রাতেই, বিচারপতি এস মুরলীধরের বাসায় দুজন বিচারপতির বেঞ্চে। এদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ বৈঠকে মঙ্গলবারই স্পেশাল পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এসএন শ্রীবাস্তবও যোগ দিয়েছেন। তবে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখন তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যে সংঘর্ষকারীদের কারও কারও হাতে বন্দুক দেখা গেছে।
সহিংসতা হয়েছে মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এসব এলাকার সড়কগুলো এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো রূপ নিয়েছে, রাস্তায় পুড়ছে যানবাহন, উড়ছে ধোঁয়া। এছাড়া পুড়ে যাওয়া মসজিদ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে কুরআনের পাতাও দেখা গেছে।
এমনকি মসজিদেও হামলার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একদল লোক মসজিদের মিনারে উঠছেন।
সংঘর্ষ হওয়া এলাকাগুলো দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তের কাছে। এখানে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকসহ অনেকেই টুইট করেছেন এই বলে যে, হামলাকারীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। একজন ফটো সাংবাদিক বলেছেন, তাকে তার প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।
তবে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এমএস রাধোয়া মঙ্গলবারই বলেছেন যে, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তিনি জানান, পর্যাপ্ত পুলিশ ও প্যারামিলিটারি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে এ নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে দিল্লির ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।