গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হতে চান ঠিকাদার জিকে শামীমের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ  !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) পদে আছেন মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ।


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  র্নীতির জন্য দুদকের অনুসন্ধান, আলোচিত জিকে শামীমের জবানবন্দীতে নাম উঠে আসার পরেও বহাল তবিয়তে আছেন প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ। বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) পদে আছেন মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ। গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য মোটা অংকের বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন এই কর্মকর্তা। জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের কথিত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের উপদেষ্টা ছিলেন এই মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ।


বিজ্ঞাপন

কে এই জিকে শামীম এবং তার ব্যাকগ্রাউন্ড ই বা কি :যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। নারায়ণগঞ্জ শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও তিনি। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন। জি কে শামীম বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও জানা গেছে। প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজ তার নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পর্যন্ত শামীমের ঠিকাদারির হাত বিস্তৃত। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জি কে শামীম পরিচয় দিলেও উভয় সংগঠন অবশ্য তা অস্বীকার করে।


বিজ্ঞাপন
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ এর একান্ত ঘনিষ্ঠ ক্যাসিনো কেলেংকারীর নায়ক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত, আলোচিত ও সমালোচিত জিকে শামীম।

 

জানা যায়, জিকে শামীম সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির কারণে মোসলেহ উদ্দীনকে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি তলবি নোটিশ পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয় ‘সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার জিকে শামীমসহ অন্য ব্যক্তিরা। এর মধ্য দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ক্যাসিনো কান্ডে জড়িয়ে শত শত কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করেছেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।

দুদক সূত্র জানায়, সেই সময় মোসলেহ উদ্দীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিল সূত্রটি।  যথেষ্ট নথিপত্রও পাওয়া গিয়েছিল। সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে জিজ্জাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। এজন্য গত ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল মোসলেহ উদ্দীনকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরে ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেট, অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার ও বাড়ির মালিক হওয়া, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। কিš‘ দুদকের কাছে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির নথি থাকার পরেও তিনি রেহাই পেয়ে যান।

দুদক সূত্র মতে, তিনি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাই সেই সময় আওয়ামী লীগ ও টাকার ক্ষমতায় দুদকের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি এখন আবার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে।

আরো জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে (ডেপুটি স্পিকার) প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি গণপূর্ত বিভাগের তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল ওই কমিটি কিš‘ সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি  কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির সুপারিশে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট আখতার হামিদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিন প্রকৌশলী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। এই তিন প্রকৌশলীর একজন হলেন- বর্তমান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদ।

বর্তমানে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ন পদে নিজস্ব লোক বসিয়েছেন। তিনি মোহাম্মদ শামীম আখতারের পরেই প্রধান প্রকৌশলীর পদে বসার জন্য এই সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদ ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ফেনী ও শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সবাইকে দাবিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও তিনি লীগ ক্ষমতায় তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ আনলে তাকে রাষ্ট্রীয় একটি  গোয়েন্দা সংস্থার  মাধ্যমেও হেনেস্তা  করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরো জানা যায়, তিন দফা পদোন্নতি পেয়ে মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হতে সহায়তা করেন কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীম। তিন কোটি টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোন থেকে ঢাকা গণপূর্ত জোনে বদলি হয়ে আসেন মোসলেহ উদ্দীন। গণপূর্ত অধিদফতরে কমিশন ভোগী হিসেবে পরিচিত মোসলেহ উদ্দীন। ঠিকাদারদের কাছে ফিফটিন পার্সেন্ট নামে পরিচিতি তার। এসব বিষয়ে মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

👁️ 3 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *