জনপ্রশাসনে বদলি ও পদায়ন নিয়ে চলছে একধরনের অস্থিরতা

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

!!  বর্তমানে তিনটি মন্ত্রণালয় এবং চার বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা রয়েছে। এগুলো হলো পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যের পদ ফাঁকা রয়েছে। ডিসি হিসেবে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করায় আট জেলার ডিসির পদও ফাঁকা। সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন ওই নিয়োগ বাতিল করা, ডিসি পদে নিয়োগের পরদিন নিয়োগ বাতিল করা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কয়েক দিন পর তা বাতিল করার ঘটনা জনপ্রশাসনে এখন প্রায়ই ঘটছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। ২ অক্টোবর তাঁকে ওএসডি করে সরকার। খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে ৩০ সেপ্টেম্বর চুক্তিতে খাদ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন তাঁর নিয়োগ বাতিল করে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন এনামুলের নিয়োগ বাতিল করে সেখানে আরেকজনকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এনামুলকে ওএসডি করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৩৪ জেলায় ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন সেখান থেকে ৮ জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল করে সরকার। চার ডিসির কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। ওই আট জেলায় এখনো নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করে সরকার। ১৭ আগস্ট মোকাব্বিরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়   !!


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রশাসনে বদলি ও পদায়ন নিয়ে একধরনের অস্থিরতা চলছে। কখন কোথায় বদলি করা হবে, এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় সরকারের চারজন উপদেষ্টা তাঁদের মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও পদায়নের আগে তাঁদের সম্মতি নিতে বলেছেন। ফলে ওই সব সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

সম্মতি ছাড়া কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন করতে নিষেধ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেক উপদেষ্টা সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, এই মাসের শেষের দিকে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। অন্য দুই উপদেষ্টা বিষয়টি স্বীকার করেননি।

বদলি-পদায়নে সম্মতি নেওয়ার কথা জানানো চার উপদেষ্টার হাতে ১০টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় সরকার এবং ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ। তিনি তাঁর সম্মতি ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন না করতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সেই চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার হাসান আরিফ গণমাধ্যম কে  জানান, বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায়ও আলোচনা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন কি না, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে হাসান আরিফ বলেন, ‘এসব নিয়ে তো সরকারের মধ্যে আলাপ হতেই পারে, আর মন্ত্রণালয়গুলো তো সরকারেরই অংশ।’

বদলি-পদায়নে সম্মতি নিতে বলা আরেক উপদেষ্টা হলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আদিলুর রহমান খান। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করলে আদিলুর রহমান খান গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় যোগ দেওয়ার আগে গণমাধ্যম কে  বলেন, ‘ভালো থাকবেন, কথা হবে।’ এরপর খানিকটা সময় নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এই মাসের শেষে কথা বলব।’

এই চার উপদেষ্টার মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অন্যান্য সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের পদায়নে ঝামেলায় পড়ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ তাঁর বিভাগে কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের আগে তাঁর সম্মতি নিতে বলেছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

এক কর্মকর্তা জানান, একজন অতিরিক্ত সচিবকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে পদায়নের ফাইল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হলে ওই ফাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সম্মতি নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। পরে ওই কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই কর্মকর্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেও মতামত দেননি উপদেষ্টা। ফলে এখনো তাঁর পদায়ন হয়নি।

অযথা বদলি ঠেকাতে এই পদক্ষেপ :  ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কর্মকর্তাদের অযথা বদলি ও পদায়ন ঠেকাতেই উপদেষ্টারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে মনে করছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান।

গতকাল তিনি গণমাধ্যম কে  বলেন, ‘উপদেষ্টারা এ রকম নির্দেশনা দিয়ে থাকলে আমি মনে করি তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মতামত নিয়ে বদলি-পদায়ন করা হলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

কোনো পদে বদলি-পদায়ন করা একান্ত জরুরি হয়ে গেলে সেটা জরুরিভাবেই সমাধান করতে হবে। এখন তো সবকিছুই ডিজিটালি করা সম্ভব। উপদেষ্টা বা সচিবের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ কথা বলেই বিষয়টি সমাধান করা যায়।’

শহীদ খান বলেন, ‘আমার মনে হয় সম্মতি নিয়ে বদলি-পদায়ন করার কথা বলে তাঁরা অযথা বদলি বা পদায়নের বিষয়টি ঠেকাতে চাচ্ছেন। সবকিছুই যে নিয়মমাফিক হচ্ছে, সেটি তো হবে না। কাউকে হয়তো কারও পছন্দ না, কেউ হয়তো গিয়ে তদবির করছে, উনি স্বৈরাচারীর দালাল, তাঁকে বদলি করে দিতে হবে। এসব ঠেকানোর জন্যই হয়তো এটি করা হয়েছে।’

জনপ্রশাসনে অস্থিরতা :  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে কয়েক ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত সরকারে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ সিনিয়র সচিব ও ১০ জন সচিব এখন ওএসডি রয়েছেন।

এ ছাড়া গ্রেড-১ ভুক্ত এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্তরের আড়াই শতাধিক কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। সিনিয়র সচিব, সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এত কর্মকর্তাকে একসঙ্গে এর আগে কখনো ওএসডি করে রাখা হয়নি। ক্ষমতার পালাবদলের পর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের ওএসডি করায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের শীর্ষ পদ ফাঁকা রয়েছে।

বর্তমানে তিনটি মন্ত্রণালয় এবং চার বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা রয়েছে। এগুলো হলো পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যের পদ ফাঁকা রয়েছে।

ডিসি হিসেবে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করায় আট জেলার ডিসির পদও ফাঁকা। সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন ওই নিয়োগ বাতিল করা, ডিসি পদে নিয়োগের পরদিন নিয়োগ বাতিল করা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কয়েক দিন পর তা বাতিল করার ঘটনা জনপ্রশাসনে এখন প্রায়ই ঘটছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। ২ অক্টোবর তাঁকে ওএসডি করে সরকার। খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে ৩০ সেপ্টেম্বর চুক্তিতে খাদ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন তাঁর নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন এনামুলের নিয়োগ বাতিল করে সেখানে আরেকজনকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এনামুলকে ওএসডি করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৩৪ জেলায় ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন সেখান থেকে ৮ জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

চার ডিসির কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। ওই আট জেলায় এখনো নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করে সরকার। ১৭ আগস্ট মোকাব্বিরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়।

এপিডি অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক মন্ত্রণালয়ের কিছু উইংয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকায় তাঁরা বসার জায়গা পাচ্ছেন না। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে পদ খালি আছে, সেগুলোতে পদায়ন করা যাচ্ছে না। কারণ, পছন্দের কর্মকর্তা ছাড়া তাঁরা নেবেন না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত মো. আব্দুর রউফ  গণমাধ্যম কে  বলেন, ‘এখন সময়টা সম্পূর্ণ আনপ্রেসিডেন্ট সময়। এই সময়কে ফেস করার জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো সব চেষ্টা করছি। আশা করছি, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সবকিছু শৃঙ্খলের মধ্যে আসবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের বঞ্চনা ছিল। আমরা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছি। এরপর তাঁদের পদায়ন করা হচ্ছে। যে ঝামেলাটুকু হচ্ছে তা অবধারিত। কারণ, গত ১৬ বছরে রুটিনমাফিক সবকিছু হয়নি।’

পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়ে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে আব্দুর রউফ বলেন, ‘কারণ, তাঁদের পদায়ন করার জন্য কোনো শর্টকাট মেথড ফলো করা হচ্ছে না। আমরা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। এ জন্য হয়তো একটু দেরি হচ্ছে।’

খুব তাড়াতাড়ি ডিসি পদায়ন হচ্ছে না জানিয়ে এপিডি আব্দুর রউফ বলেন, আপাতত ডিসি নিয়োগে নতুন করে আর কোনো ফিট লিস্ট করা হবে না। ডিসি নিয়োগের যে ফিট লিস্ট করা আছে, সেখান থেকেই আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *