নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার আস্তানায় যাতায়াতকারীদের। র্যাবসহ তদন্ত সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া যাদের নাম প্রকাশ করেছেন, এরই মধ্যে তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলেছেন পাপিয়া। তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তাদের সঙ্গে পাপিয়ার সম্পর্ক এবং লেনদেনের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মোবাইল ফোন থেকে অন্তত ১১ সংসদ সদস্যের নম্বরে বেশি যোগাযোগের তথ্য মিলেছে। তাদের ব্যাপারেও তথ্য নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।
পাপিয়ার অপকর্মের সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে জন্য সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মোবাইল কল ও চ্যাটিং লিস্ট পর্যালোচনা করে পাপিয়ার ঘনিষ্ঠদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তার অপকর্মে সহযোগীদের ডেকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আটক করা হবে।
ইতোমধ্যে পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ কারও কারও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক এক নারী সাংসদসহ কয়েকজনের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, পাপিয়ার সঙ্গে কারা, কীভাবে অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এত বেপরোয়া হওয়ার পেছনে শক্তির উৎস কী- সবই তদন্ত করে দেখা হবে। পাপিয়ার গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পাপিয়ার মোবাইল ফোন থেকে র্যাব সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ ব্যক্তিদের ভিডিও উদ্ধার করেছেন। অনেকের সঙ্গে পাপিয়ার ছবি ও ভিডিও এখন সামাজিকমাধ্যমে ঘুরছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম থেকেই পাপিয়ার এসব অপকর্মের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে র্যাবের একটি টিম কাজ করছিল। র্যাব সদস্যরাই স্বামী ও সহযোগীসহ পাপিয়াকে আটক করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে। তদন্তের দায়িত্বও র্যাব পাবে বলে ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমন এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। ভালো কোনো কাজের জন্য নয়, অপরাধের জন্য তারা আলোচনায়।
রাজনীতির আড়ালে অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যবসা করে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই দম্পতি। এ কারণে শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রোববার রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় বাইজি সর্দারনী বেশে পাপিয়ার ভিডিও। ইতিমধ্যে তার অপরাধমূলক কর্মকা-ের কথা বের হতে শুরু করেছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে পাপিয়া ও তার স্বামী গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তারা। অপরাধে জড়িয়ে পড়া যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে ইতিমধ্যে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।