বিশেষ প্রতিবেদক : ৫ আগষ্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরে তার দোসররা রয়েগেছে বহাল তবিয়তে। তাদের অতিদ্রত লোভনীয় পদগুলো থেকে অপসারণ করা না হলে অন্তবর্তীকালীন সরকার বিপদে পড়বে এমন মন্তব্য করেছেন সুশীল সমাজ।
গত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে গোপালগঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করেছে। এক এক জনকে ২/৩ টি লোভনীয় পদে বসিয়ে দুহাতে সরকারি টাকা লুটপাট ও ঘুস দুর্নীতিকে অবারিত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এমন একজন কর্মকর্তা হলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহা: নুরুল আমিন খান।
যিনি আজ ৬/৭ বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি লোভনীয় পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ বিধায় তাকে দলীয় বিবেচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এলাকার লোক গন্য করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ প্রদান করা হয়।
সেই থেকে তিনি অসীম ক্ষমতা প্রদর্শন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সর্বেসর্বা বনে যান।
তিনি বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে এসে গোটা শিল্প মন্ত্রণালয় নিজের হাতের মুঠিতে ভরে গত ৬/৭ বছর দুহাতে অবৈধ টাকা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে চিনি শিল্প করপোরেশন এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েই এই শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লাগেন।
তিনি দেশলুটেরা এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুস খেয়ে সেতাবগঞ্জ সুগার মিল (একটি রাষ্ট্রীয় চিনিকল) এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেন৷ যেটির চুক্তি পরে বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া তিনি বিসিআইসি,বিসিক,বিটাক, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এর উন্নয়ন প্রকল্পের পিডিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পিডি নিয়োগ,ঠিকাদার নিয়োগ,যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের জনবল নিয়োগে হস্তক্ষেপ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিসিআইসির সার কেলেংকারীতেও তিনি ওতপ্রতভাবে জড়িত। গোপালগঞ্জের লোক হিসাবে কোন কর্মকর্তাই তার কাজে বাঁধা দিতে সাহস পান নি। এমন কি সাবেক মন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন এবং প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারও তার হাতে জিম্মি ছিলেন।
আরো জানাগেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি আস্থাভাজন সচিব জাকিয়া সুলতানার হাতে হাত মিলিয়ে তিনি সব কিছু একাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন,আসলে যুগ্ম সচিব মুহাঃ নুরুল আমিন খান সচিব জাকিয়া সুলতানার ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে বেশিরভাগ সময়েই শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায় না। তিনি প্রায় সময়ই চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে অবস্থান করেন। তার কাছে সব সময় ঠিকাদারদের ভীড় লেগেই থাকে।
এর আগে তার বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তিনি গোপালগঞ্জের দাপট দেখিয়ে সেই অভিযোগ ধামাচাপা দেন। এখন তিনি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের রক্ত চুষে খাচ্ছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সাথে আঁতাত করে তিনি একটি ঠিকাদার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বিসিক এবং বিসিআইসির যত টেন্ডার হয় তার সব কাজই তিনি নিজের সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের মাঝে বন্টন করে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নেন বলে প্রচার আছে।
তিনি বিসিক এর রানিং ৫ টি প্রকল্পের পিডিদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদাও নেন। যে পিডি তার কথামত চাঁদা না দেন সেই পিডিকেই বদলী করে দেন।
গোপালগঞ্জের এই স্বৈরাচারের দোসরকে ওএসডি করার দাবী তুলেছিলেন বিসিআইসি,বিসিক,বিটাক ও চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কিন্ত দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সেই দাবী উপেক্ষা করে উল্টো তাকে প্রাইজ পোষ্টিং দিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব।
সুত্র জানায়, যুগ্ম সচিব মুহা: নুরুল আমিন খানের বিরুদ্ধে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা তাকে সেইভ করার জন্য গত ৭ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএবি ও বয়লার শাখায় বদলী করেছেন। যার স্মারক নং ৩৬.০০.০০০০.০৪৬.১১.০৪২.১৯.৯৩০। এ ঘটনায় আরো ক্ষুব্ধ হয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। তাদের প্রশ্ন: স্বৈরাচার শেখ হাসিনার এলাকার (গোপালগঞ্জ) এর কর্মকর্তার জন্য শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার এতো দরদ কেন? কেন তাকে ওএসডি করা হচ্ছে না। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার আমলেও কিভাবে গোপালগঞ্জের লোকেরা এতটা সুবিধা পাচ্ছেন। তবে কি শিল্প মন্ত্রণালয়ে শর্ষের মধ্যেই ভুত রয়েছে?
এ বিষয়ে জানার জন্য শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানাকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।